ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তিন সদস্যকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ

মানিকগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন আহত ইউপি সদস্যরা
ছবি: প্রথম আলো

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার আরুয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তিন ইউপি সদস্যকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। হামলার শিকার ইউপি সদস্যদের অভিযোগ, আসছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ইউপি চেয়ারম্যানের চাচার পক্ষে থাকছেন না বলে তাঁদের ওপর এ হামলা হয়েছে।

আহত ইউপি সদস্যরা হলেন আরুয়া ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জয়নাল আবেদীন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সোহেল রানা এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য দেলোয়ার হোসেন। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী ইউপি সদস্য এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শিবালয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুর রহিম খানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা রয়েছে। বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউর রহমান খানও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। রেজাউরের ভাতিজা আরুয়া ইউপির চেয়ারম্যান মোনায়েম মোন্তাকিন খান। একই ইউপির ওই তিন সদস্য আবদুর রহিম খানের অনুসারী। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এই বিরোধের জেরে ইউপি চেয়ারম্যান মোনায়েম মোন্তাকিন খান ও তাঁর লোকজন ওই তিন ইউপি সদস্যকে পিটিয়ে আহত করেন।

মারধরের শিকার তিন ইউপি সদস্য এবং স্থানীয় সূত্রে জানায়, প্রতিবছর ওই ইউপি সদস্যদের ওয়ার্ডের দুস্থ লোকজনকে ত্রাণসহায়তা দেন আবদুর রহিম খান। গত রোববার রাতে ইউপি সদস্য জয়নাল, সোহেল, দেলোয়ারসহ পাঁচ ইউপি সদস্য নিজেদের ওয়ার্ডের দুস্থ মানুষদের জন্য আবদুর রহিম খানের কাছ থেকে ত্রাণসহায়তা নেন। এরপর তাঁরা মোটরসাইলেকেলে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন।

৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জমাত আলী ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আয়নাল মোল্লাকে তাঁদের বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে ইউপি সদস্য জয়নাল, সোহেল ও দেলোয়ার দুটি মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে রাত ১২টার দিকে কুষ্টিয়া গ্রামে কুষ্টিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে তাঁদের দুটি মোটরসাইকেল গতি রোধ করেন ইউপি চেয়ারম্যান মোনায়েম মোন্তাকিন খান ও তাঁর লোকজন। এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান জানতে চান, তাঁরা কোথায় গিয়েছিলেন।

ভুক্তভোগীরা জানান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রহিম খানের কাছে যাওয়ার কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান ও তাঁর লোকজন তিন ইউপি সদস্যের ওপর ধারালো অস্ত্র, হাতুড়ি ও কাঠের বাটাম দিয়ে মারধর শুরু করেন। হামলাকারীরা ইউপি সদস্যদের ব্যবহৃত দুটি মোটরসাইকেল পাশে পদ্মা নদীতে ফেলে দেন। এরপর তাঁদের চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে তিনজনকে উদ্ধার করেন। এরপর তাঁদের জেলা সদরে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান মোনায়েম মোন্তাকিন খানের চাচা উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান রেজাউর রহমান খান। এবারও তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবেন। উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুর রহিম খানও একই পদে নির্বাচন করবেন। আবদুর রহিম খানের কাছ থেকে ঈদের সহায়তা নিয়ে দুস্থদের দেওয়ার চেষ্টা করলে ইউপি চেয়ারম্যান তাঁদের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। এ কারণে তাঁদের ওপর এই হামলা করেন ইউপি চেয়ারম্যান ও তাঁর লোকজন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান মোনায়েম মোন্তাকিন খান বলেন, ইউপি সদস্যদের ওপর কারা হামলা করেছেন তা তিনি জানেন না। গতকাল সোমবার সারা দিন ভিজিএফের চাল বিতরণে ব্যস্ত ছিলেন বলে তিনি দাবি করেন। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে দেখবেন বলে জানান।

তিন ইউপি সদস্যকে মারধরের বিষয়টি জেনেছেন বলে জানান শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রউফ সরকার। তবে এ বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ তিনি পাননি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া নেবেন।