লালমনিরহাটে ৫ সাংবাদিককে আটকে রেখে হুমকি, এসি ল্যান্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ

সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ-আল-নোমান সরকারের (টুপি পরিহিত) বিরুদ্ধে পাঁচ সাংবাদিককে কার্যালয়ে আটকে রেখে হুমকি-ধমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে
ছবি: সংগৃহীত

লালমনিরহাট সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ-আল-নোমান সরকারের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ করতে যাওয়া পাঁচ সাংবাদিককে নিজ কার্যালয়ে আটকে রেখে হুমকি-ধমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে ওই কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘণ্টাখানেক পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) টি এম এ মমিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে কার্যালয়ের কলাপসিবল গেটের তালা খুলে সাংবাদিকদের মুক্ত করেন।

এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে ওই সহকারী কমিশনার সাংবাদিকদের ‘দালাল’ বলে অভিহিত করেন। তখন সাংবাদিকেরা অবস্থান নিলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সবাইকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন এবং জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে সাংবাদিকেরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এ সময় পেছনে পড়ে যাওয়া একটি টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরাপারসনের মোটরসাইকেল আটকে কাগজ না থাকায় পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেন ওই সহকারী কমিশনার।

অভিযোগের বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ-আল-নোমান সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কাউকে কোনো রকম হুমকি-ধমকি দিইনি। অফিসে হট্টগোল শুরু হলে নিরাপত্তার কথা ভেবে অফিসের লোকজন কলাপসিবল গেটে তালা দেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে গেট খুলে দেওয়া হয়।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে না পারায় এক মোটরসাইকেল আরোহীকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছি।’

জরিমানার বিষয়টি জানাজানির পর শহরের মিশন মোড়ে লালমনিরহাট-বুড়িমারী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন জেলায় কর্মরত সাংবাদিকেরা। বেলা দুইটার দিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক টি এম এ মমিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরা সহকারী কমিশনারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে সাংবাদিকেরা অবরোধ তুলে নেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকেরা জানান, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে সেবা নিতে আসা মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের খবর পেয়ে সাংবাদিক মাহফুজ সাজু সেখানে যান। সকাল থেকে ওই কার্যালয়ের তিনজন অফিস সহকারী ভূমি-সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি করছিলেন। কিন্তু সহকারী কমিশনার (ভূমি) সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। সাংবাদিক মাহফুজ ওই শুনানির ভিডিও ধারণ করেন। কর্মচারীরা এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সহকারী কমিশনারকে ডেকে আনেন। তাঁর নির্দেশে সাংবাদিক মাহফুজকে আটকে রাখা হয়। খবর পেয়ে লালমনিরহাট প্রেসক্লাব থেকে সাংবাদিক নিয়ন দুলাল, এস কে সাহেদ, ফারুক আহমেদ ও কাওছার আহমেদ ঘটনাস্থলে গেলে তাঁদের কার্যালয়ে ঢুকিয়ে কলাপসিবল গেটে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। সাংবাদিকদের অবরুদ্ধ অবস্থার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

সাংবাদিক মাহফুজ প্রথম আলোকে বলেন, সেবা নিতে আসা মানুষের সঙ্গে খারাপ আচরণের খবর পেয়ে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে গিয়ে তিনি অভিযোগের সত্যতা পান। কিছুক্ষণ পর সহকারী কমিশনারের নির্দেশে তাঁকে আটকে রাখা হয়। সহকর্মীদের ফোন দিলে তাঁরা আসলে তাঁদের কার্যালয়ে আটকে রাখেন। তিনি বলেন, ‘এসি ল্যান্ড সাংবাদিকদের সম্পর্কে খুবই অপ্রীতিকর মন্তব্য করেছেন। আমাদের জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়েছেন।’

সাংবাদিক নিয়ন দুলাল বলেন, ‘এসি ল্যান্ডের সাথে অফিসের স্টাফরাও আমাদের গালিগালাজ করেছেন। এডিসি আমাদের মুক্ত না করলে এসি ল্যান্ড আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠাতেন।’

সাংবাদিকদের হুমকির প্রতিবাদ ও অভিযুক্ত কর্মকর্তার অপসারণের দাবিতে সাংবাদিকদের সড়ক অবরোধ। বৃহস্পতিবার দুপুরে লালমনিরহাট শহরের মিশন মোড় এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

লালমনিরহাট সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক গোলাম মোস্তাফার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিত সাংবাদিক মাহফুজ ওই কার্যালয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘সহকারী কমিশনারের অফিসে সেবা নিতে মানুষজনের সাথে খুবই রূঢ় আচরণ করা হয়। আমার সঙ্গেও খুবই খারাপ আচরণ করেছেন ওই অফিসের লোকজন।’

মোটরসাইকেলের কাগজপত্রের জন্য চ্যানেল আইয়ের ক্যামেরাপারসন আবদুল মান্নাকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেন সহকারী কমিশনার। আবদুল মান্নান বলেন, ‘মোটরসাইকেলের কাগজপত্র ছিল, কিন্তু সঙ্গে ছিল না। এসি ল্যান্ডের কাছে ১০ মিনিট সময় চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি সাংবাদিকদের প্রতি ক্ষুব্ধ থাকায় কোনো সময় দেননি।’

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) টি এম এ মমিন সাংবাদিকদের বলেন, ভুল-বোঝাবুঝি থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতি তৈরি হয়। সহকারী কমিশনারের কার্যালয়ে গিয়ে উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সহকারী কমিশনারের অনুপস্থিতিতে অফিস সহকারীরা কোনোভাবেই জমির খারিজ শুনানি করতে পারেন না। বিষয়টি জেলা প্রশাসক খতিয়ে দেখছেন।

লালমনিরহাট প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। আগামী রোববারের মধ্যে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া না নিলে সাংবাদিকেরা আন্দোলনে যাবেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ঘটনাটি জেনেছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।