ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বোতল দিয়ে বাড়ি বানাচ্ছেন শরীয়তপুরের ইমান
প্রতিদিন ক্রেতাদের ফেলে যাওয়া প্লাস্টিকের খালি বোতল দেখে দুশ্চিন্তায় পড়েন মুদিদোকানি ইমান ঢালী। কীভাবে এগুলোর পুনর্ব্যবহার করা যায়, তাঁর খোঁজ করেন ইউটিউবে। সেখানে ভিডিও দেখে জানতে পারেন, এসব খালি বোতলে বালু ভরে তা দেয়াল নির্মাণকাজে ইটের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এরপর স্থানীয় এক রাজমিস্ত্রির সঙ্গে পরামর্শ করে বাড়ি নির্মাণে এসব বোতল ব্যবহার করছেন তিনি।
প্রায় এক বছর গ্রামের হাটবাজার ঘুরে ২৫০ ও ৫০০ মিলির ৪০ হাজার প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ করেন ইমান ঢালী। এ সময় পরিবারের সদস্যরা মিলে এসব বোতলে বালু ভরেছেন। পরে বোতলগুলোর মুখ বন্ধ করে একটির ওপর আরেকটি জুড়ে দেওয়া হচ্ছে বালু-সিমেন্টের প্রলেপে। বাড়িটির নির্মাণকাজ চলছে শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার কুচাইপট্টি ইউনিয়নের মেঘনা তীরবর্তী মাইঝারা গ্রামে। চরাঞ্চলটিতে বসবাস করেন ইমান ঢালী। সেখানে স্থানীয় বাজারে তাঁর একটি মুদিদোকান আছে।
মঙ্গলবার সকালে ইমান ঢালী বলেন, তাঁর দোকানসহ বাজারের বিভিন্ন দোকানে ব্যবহৃত খালি প্লাস্টিকের বোতলগুলো এলাকার ডোবা-নালা নোংরা করছিল দেখে মনে কষ্ট হতো। তখন তিনি বোতলগুলো জড়ো করে মজুত করতে শুরু করেন। পরে ইউটিউবে দেখতে পান, বোতল দিয়েও ঘরের দেয়াল নির্মাণ করা যায়। তখন আরও খালি বোতল সংগ্রহ করতে থাকেন। এখন বোতল দিয়ে ঘর নির্মাণই শুরু করে দিয়েছেন। ইটের তৈরি পিলারের পাশে বোতল সাজিয়ে এতে সিমেন্টের আস্তর দিয়ে দেয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে। ছাদসহ চার কক্ষের ঘরটির নির্মাণে ৮-৯ লাখ টাকা লাগতে পারে।
ইমান ঢালীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে তাঁর সংসার। বসবাসের টিনের ঘরটি ভেঙে সম্প্রতি সেখানে একতলা একটি পাকা দালান নির্মাণের কাজ শুরু করেন তিনি। চার কক্ষবিশিষ্ট বাড়িটির সব কটি দেয়াল নির্মিত হচ্ছে প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে। পাশের এলাকার ইব্রাহীম সরদার আরও তিনজন শ্রমিক নিয়ে নির্মাণকাজটি করছেন।
রাজমিস্ত্রি ইব্রাহীম সরদার বলেন, এলাকায় ইট দিয়ে ঘরবাড়ি নির্মাণ করেছেন। কিন্তু কখনো প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করেননি। তাঁকে ভিডিও দেখিয়ে নির্মাণপদ্ধতি শিখিয়েছেন বাড়িটির মালিক ইমান। বোতলের দেয়াল তৈরিতে খুব ধীরে ধীরে সাজিয়ে-গুছিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। বালুভর্তি একটি বোতলের ওপর আরেকটি সাজিয়ে সিমেন্টের প্রলেপ দিতে হয়। বোতলের দেয়ালে আলাদা রং করতে হবে না, বোতলের গায়ের রংই দীর্ঘদিন থাকবে। ভিন্ন ভিন্ন রঙের বোতল ব্যবহারের মাধ্যমে দেয়াল সাজানোও সম্ভব।
এক বছর ধরে বোতলগুলো সংগ্রহের পর পরিবারের সদস্যরা মিলে এগুলোর ভেতর বালু ভর্তি করেছেন বলে জানান ইমান ঢালীর স্ত্রী রুনা লায়লা। তিনি বলেন, এখন নির্মাণশ্রমিকেরা বালুভর্তি বোতলগুলো ব্যবহার করে দেয়াল নির্মাণ করছেন। এমন নির্মাণকাজ দেখতে তাঁদের বাড়িতে ভিড় করছেন আশপাশের লোকজন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের শরীয়তপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাসেল নোমান বলেন, ‘আপাতদৃষ্টে এটি ভালোই মনে হচ্ছে। কেননা প্লাস্টিকগুলো সরাসরি পরিবেশে যাচ্ছে না। ভবিষ্যতে প্রজেক্টটি আমাদের নজরে থাকবে।’