ভারতীয় ট্রাকচালকদের আন্দোলনে টানা ৯ দিন বাংলাবান্ধায় পাথর আমদানি বন্ধ

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর
ফাইল ছবি

ভারতের ফুলবাড়ী বন্দরে ট্রাকচালকদের আন্দোলনের মুখে টানা ৯ দিন পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে পাথর আমদানি বন্ধ আছে। এতে বন্দরে স্থবিরতা নেমে আসায় বাংলাদেশি আমদানিকারক ও শ্রমিকেরা বিপাকে পড়েছেন।

ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদুল আজহার টানা ছয় দিন ছুটির পর ৩ জুলাই বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ৫ জুলাই সকাল থেকে ফুলবাড়ী বর্ডার লোকাল ট্রাক ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশে ঢোকা ভুটানি ট্রাকগুলোকে স্লট বুকিংয়ের (অনলাইনে ফি দিয়ে নিবন্ধন) আওতায় আনতে আন্দোলন শুরু করে। সাধারণত বাংলাদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারতীয় গাড়িগুলোকে রাজ্য সরকারকে ৬ চাকার ট্রাকপ্রতি ৩ হাজার এবং ১০-১২ চাকার ট্রাকপ্রতি ৫ হাজার টাকা দিতে হয়। তবে ভুটানের গাড়ির ক্ষেত্রে সেটি দিতে হয় না। এ নিয়ে ভারতের ফুলবাড়ী স্থলবন্দরে আন্দোলনে নামেন ভারতীয় ট্রাকচালকেরা। এতে ৫ জুলাইয়ের পর ভারত থেকে পাথর আমদানি বন্ধ হয়ে যায়।

ব্যবসায়ীরা জানান, পরে ভারত ও ভুটান থেকে পাথরসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি কার্যক্রম শুরু হয়ে ১১ জুলাই পর্যন্ত চলে। সর্বশেষ ১১ জুলাই ভারত ও ভুটান থেকে ৩২৫ ট্রাক পাথর আমদানি করা হয়। এ ছাড়া ওই দিন ছয়টি ট্রাকে অন্যান্য পণ্য আমদানি হয়। এরপর একই দাবিতে আবার ফুলবাড়ী বন্দরে আন্দোলন শুরু হলে ১২ জুলাই থেকে পাথর আমদানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ আজ পর্যন্ত টানা ৯ দিন বন্ধ পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে যেসব পণ্য আমদানি হয়, তার ৯৫ শতাংশই পাথর। ভারত ও ভুটান থেকে প্রতিদিন অন্তত ৩৫০ ট্রাক পাথর আমদানি হয়। আন্দোলনের কারণে টানা ৯ দিন পাথর আমদানি বন্ধ থাকলেও ভারত ও নেপাল থেকে গমের ভুসি, আদা, পেঁয়াজ, মসুরের ডাল আমদানি হচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে সয়াবিন, কটন, গ্লাস, ওষুধসহ বিভিন্ন পণ্য ভারত ও নেপালে রপ্তানি হচ্ছে।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ইদ্রিস আলী প্রথম আলোকে বলেন, বন্দরটি সম্পূর্ণ পাথর আমদানির ওপর নির্ভরশীল। কয়েক দিন ধরে পাথর আমদানি না হওয়ায় শ্রমিকেরা বিপদে পড়েছেন। কাজ না থাকায় সারা দিন অলস সময় পার করছেন। আয়রোজগার না হওয়া পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে।

আমদানিকারক সাইদুর রহমান বলেন, কয়েক দিন ধরে পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় তাঁর ২৫০টি ট্রাক ভুটান থেকে পাথর এনে ভারতের ফুলবাড়ীতে আটকা পড়েছে। তাঁরা ভারত ও ভুটান থেকে পাথর আমদানি করে দেশের বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করেন। কিন্তু পাথর আমদানি না হওয়ায় তাঁরা ব্যবসায়ীরা যেমন বিপাকে পড়েছেন, তেমনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্মাণকাজেও ব্যাঘাত ঘটছে।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কুদরত-ই-খুদা বলেন, ভারতের ফুলবাড়ীর পরিবহনমালিকেরা ভুটানি গাড়ির স্লট বুকিংয়ের দাবিতে আন্দোলন করছেন। এতে পাথর আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। তবে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন, এখন থেকে ভুটানও স্লট বুকিং দেবে। এতে তারা পাথরের দাম বাড়িয়ে দেবে। এতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। শুনেছেন, শনিবার থেকে পাথর আমদানির বিষয়টির সমাধান হতে পারে।

বাংলাবান্ধা ল্যান্ডপোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপক ও ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ভারতের ফুলবাড়ীর ব্যবসায়ী ও পরিবহনমালিকেরা পাথর আমদানি বন্ধ করে দেওয়ায় বন্দরে স্থবিরতা নেমে এসেছে। এখন স্বল্প পরিসরে গমের ভুসি, আদা, পেঁয়াজ ও মসুরের ডাল আমদানি হচ্ছে। তবে পাথর আমদানি না হওয়ায় রাজস্ব আদায়ও কমে যাচ্ছে।