চাঁদপুরে হত্যার দায়ে মাসহ দুজনের মৃত্যুদণ্ড, দুজনের যাবজ্জীবন

আদালত
প্রতীকী ছবি

চাঁদপুরের হাইমচরে মো. আরিফ হোসেন (২৫) হত্যা মামলার রায়ে তাঁর মা খুকি বেগম (৪৩) ও মো. জয়নাল গাজী (২৪) নামের এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে তাঁদের সহযোগী দুই আসামি ইউছুফ মোল্লা (২৭) ও মাহবুব মোল্লাকে (২৬) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আজ বুধবার দুপুরে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক ফারহানা ইয়াছমিন এ রায় দেন।

নিহত আরিফ হোসেন হাইমচর উপজেলার দক্ষিণ আলগী ইউনিয়নের মিজানুর রহমান খান ও খুকি বেগম (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত) দম্পতির ছেলে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জয়নাল গাজী পাশের ফরিদগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম লাড়ুয়া গ্রামের গাজী বাড়ির গণি গাজীর ছেলে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ইউছুফ মোল্লা ফরিদগঞ্জ উপজেলার উত্তর বিষকাটালি গ্রামের হোসেন মোল্লার ছেলে এবং মাহবুব মোল্লা একই গ্রামের বিল্লাল মোল্লার ছেলে।

মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এপিপি বদিউজ্জামান কিরণ জানান, এটি একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড। মায়ের পরকীয়ার জন্য এ ঘটনা ঘটে। মামলাটি দীর্ঘ সাত বছরের অধিক সময় চলাকালে আদালত ২০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। সাক্ষ্য গ্রহণ ও মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করে আসামিদের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় এ রায় দেন। আসামিদের মধ্যে ইউছুফ মোল্লা শুরু থেকে পলাতক। অন্যরা জামিনে থাকলেও রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।

আরিফ হোসেন হত্যার ঘটনার ঘটনায় তাঁর স্ত্রী আসমা আক্তার শাশুড়ি খুকি বেগমসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হাইমচর থানায় হত্যা মামলা করেন।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ থেকে জানা গেছে, খুকি বেগম জয়নাল গাজীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়ান। এ কথা জানতে পারেন খুকির ছেলে আরিফ হোসেন। এ নিয়ে মা-ছেলের সম্পর্কের অবনতি হয়। এরপর ২০১৫ সালের শুরুর দিকে আরিফ মাকে না জানিয়ে প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে উত্তর আলগী ইউনিয়নের আবদুস সালাম মিজির মেয়ে আসমা আক্তারকে (১৯) বিয়ে করেন। তাঁদের বিয়ে খুকি বেগম প্রথমে মেনে না নিলেও একপর্যায়ে মেনে নেন। তবে মায়ের সঙ্গে ছেলে ও পুত্রবধূর বিভিন্ন বিষয়ে ঝগড়া–বিবাদ লেগেই থাকত। এর জেরে মা খুকি বেগম ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। ২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর তিনি ছেলের বউ আসমাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এরপর ১৮ নভেম্বর খুকি বেগম পরিকল্পনামাফিক নিজ বাড়িতে জয়নাল গাজী ও অন্য আসামিদের ডেকে আনেন। তাঁরা আরিফকে ঘুমন্ত অবস্থায় হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে, দা দিয়ে কুপিয়ে এবং ব্লেড দিয়ে পোঁচ মেরে মৃত্যু হয়েছে মনে করে ঘরের মেঝেতে ফেলে চলে যান। পরদিন ১৯ নভেম্বর সকালে খুকি বেগম আরিফের স্ত্রী আসমাকে ফোন করে জানান, ডাকাতেরা আরিফকে জখম করে ফেলে গিয়েছে। আসমা তাৎক্ষণিক স্বামীর বাড়িতে চলে আসেন এবং আরিফকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে ঢাকা নেওয়ার পথে মতলব ফেরিঘাট পার হওয়ার পর সকাল ৯টার দিকে আরিফের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ওই দিনই আসমা শাশুড়ি খুকি বেগমসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হাইমচর থানায় হত্যা মামলা করেন।

এ মামলা তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় হাইমচর থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক মো. নুর মিয়াকে। তিনি মামলাটি দীর্ঘ এক বছর তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ৯ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন মো. জয়নাল আবেদীন।