পাঠদান বন্ধ রেখে স্কুলে রাজনৈতিক সভা করা একেবারেই অনৈতিক

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক দলের সভা, সমাবেশ ও সম্মেলন আয়োজন করতে দেখা যায়। ওই দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা সাধারণত তাঁদের হাতে থাকা সংরক্ষিত ছুটি ঘোষণা করেন। বিশেষ পরিস্থিতিতে বিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে প্রধান শিক্ষকদের এ ধরনের ছুটি দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এসব নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে ঠাকুরগাঁও নাগরিক কমিটির সভাপতি আইনজীবী আবু তোরাব মানিকের সঙ্গে।

আবু তোরাব মানিক

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: দেশের মফস্বলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

আবু তোরাব মানিক: শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার ব্রত থেকে দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। তবে মফস্বলের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। এর কারণ, দেশের মফস্বলের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থানীয় ব্যক্তিরাই নিয়োগ পান। নিয়োগ পাওয়া এসব শিক্ষকের বেশির ভাগই কৃষিকাজ-ব্যবসাসহ নানা কাজে যুক্ত থাকেন। তাঁদের বড় অংশই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ে রাজনীতিতেই সময় বেশি দেন। শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে যে নিজেদের প্রস্তুতি নিতে হয়, সে ব্যাপারে তাঁরা খুব একটা আগ্রহী নন। ফলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে যে মানের শিক্ষা পাওয়ার কথা, তা তারা পাচ্ছে না।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: করোনাকালে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ ছিল। পড়ালেখার সেই ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে নেওয়া যেতে পারে?

আবু তোরাব মানিক: করোনাকালে দেশের, বিশেষ করে মফস্বলের শিক্ষার্থীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মফস্বলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান নিয়ে এমনিতে প্রশ্ন রয়েছে। তার ওপর শ্রেণিপাঠ বন্ধ, মূল্যায়ন ছাড়াই পরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করে দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা অনেক পিছিয়ে পড়েছে। এখন করোনার সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে। এই সময়ে একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা করে শিক্ষার্থীদের ঘাটতি পূরণ করার ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে ছুটির সময়ও বিশেষ পাঠ কার্যক্রম সচল রাখা যেতে পারে। কিন্তু এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনো সেভাবে এই কার্যক্রম নজরে পড়ছে না।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: পাঠ বন্ধ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক কর্মসূচি আয়োজনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, এটাকে কীভাবে দেখেন?

আবু তোরাব মানিক: এটা খুবই দুঃখজনক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠ বন্ধ করে, শিক্ষার্থীদের নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যখন রাজনৈতিক ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধিদের অভিনন্দন-সংবর্ধনা দেওয়া শুরু হয়েছিল, তখন সরকারের পক্ষ থেকে এসব কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রেখে রাজনৈতিক কর্মসূচি আয়োজনের একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, এটা হতাশাজনক। এটা অনৈতিক। এখন উপজেলা পর্যায়ে সভা-সমাবেশ, সম্মেলন আয়োজনের উপযোগী অনেক মিলনায়তন ও মাঠ আছে। সেসব স্থানে সভা-সমাবেশের আয়োজন করা হলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান বন্ধ রাখতে হয় না।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: বিশেষ প্রয়োজনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের হাতে সংরক্ষিত ছুটি দেওয়ার বিধান আছে। কিন্তু রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি আয়োজনের ক্ষেত্রে সংরক্ষিত ছুটি প্রদান করার বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?

আবু তোরাব মানিক: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের হাতে সংরক্ষিত ছুটি আছে। এ ছুটি তাঁরা প্রতিষ্ঠানের বিশেষ প্রয়োজনে দিতে পারেন। কিন্তু সংরক্ষিত ছুটির নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ রেখে রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ আয়োজন শতভাগ অনৈতিক। শুধু অনৈতিকই নয়, এটা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা অধিকাংশই রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ পাওয়া। তাঁরা আবার সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সংরক্ষিত ছুটির নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে রাজনৈতিক দলকে সভা-সমাবেশের আয়োজন করতে দেওয়া মোটেও কাম্য নয়।