বৃষ্টি হলেই সড়কে ভোগান্তি

এ দুরবস্থা লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন থেকে পুরোনো টিপরদী সড়কের। এসিআই গেট এলাকায় বড় বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের পুরোনো টিপরদী এসিআই গেটসংলগ্ন এলাকার সড়কে বড় বড় খানাখন্দ। জমেছে বৃষ্টির পানি। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। সম্প্রতি তোলা ছবি
প্রথম আলো

সড়কটির দৈর্ঘ্য দেড় কিলোমিটারের কম। প্রতিদিন যাতায়াত অর্ধলাখ মানুষের। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কের একটি জায়গায় ১০০ মিটারজুড়ে খানাখন্দ। বৃষ্টি হলেই এ অংশ পানিতে তলিয়ে থাকে। এ অবস্থা চলছে কয়েক বছর ধরে। এতে এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রতিদিন সোনারগাঁয়ের বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরগামী পর্যটক, আশপাশের শিল্পকারখানার শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

সড়কটির শুরু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁয়ের টিপরদী বাসস্ট্যান্ড থেকে। শেষ হয়েছে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরের প্রধান ফটকে। এ সড়কে নিয়মিত যাতায়াত করেন সবজি বিক্রেতা আনিস মিয়া।

১০০ মিটার অংশটুকুর ভোগান্তির বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘চোখের সামনে অন্তত ৫০টা অ্যাকসিডেন্ট দেখছি। কারও হাত ভাঙছে, কারও পা ভাঙছে, কারও মালামাল নষ্ট হইছে। তবু রাস্তা ঠিক হয় না। এলাকায় মন্ত্রী আইলে ভাঙা রাস্তায় বালু দিয়া সমান করে। মন্ত্রী গেলে বালু সইরা যায়।’

গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, ১ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের এসিআই গেট এলাকায় পিচঢালাই উঠে ও মাটি সরে গিয়ে বেশ কিছু বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। গর্তে বৃষ্টির পানি জমে সড়কটি চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিকল্প না থাকায় এ সড়ক দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স, পর্যটকবাহী বাস, প্রাইভেট কার, রিকশা, লেগুনা, নছিমন, ইজিবাইক, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল ও ট্রাক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। তিনটি গর্ত এতটাই গভীর যে প্রাইভেট কার চলাচলের সময় গাড়ির নম্বর প্লেট পর্যন্ত পানিতে ডুবে যায়।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে সোনারগাঁয় প্রবেশের জন্য প্রধানত দুটি সড়ক ব্যবহার করা হয়। মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় লাগাতার যানজটের কারণে চৌরাস্তা থেকে বারদী পর্যন্ত সড়কটি প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। ফলে সোনারগাঁয়ের পর্যটনকেন্দ্রগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, পানাম নগর, গোয়ালদী শাহী মসজিদ, টাঁকশাল, নীলকুঠি, বারদী শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম, পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর বাড়ি দেখতে আসা পর্যটকেরা লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন থেকে পুরোনো টিপরদী সড়কটি ব্যবহার করেন।

সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রাজধানীতে রোগী পরিবহন করতে হলেও অ্যাম্বুলেন্সসহ রোগীবাহী বাহনগুলোকে এ সড়ক ব্যবহার করতে হয়।

এ ছাড়া উপজেলার জামপুর, কাঁচপুর, সাদিপুর ইউনিয়নের বাসিন্দাদের উপজেলা ও থানায় আসতে হলে এ সড়ক এড়িয়ে চলার উপায় নেই। এর বাইরে সড়কটির কাছাকাছি চারটি তৈরি পোশাক কারখানা, ছয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও দুটি বাজার আছে। স্থানীয় লোকজন জানান, সব মিলিয়ে সড়কটিতে প্রতিদিন অর্ধলাখ মানুষের চলাচল।

ভাঙাচোরা সড়কটির কারণে পর্যটকদের প্রতিনিয়ত ভুগতে হয় বলে জানান বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক রবিউল ইসলাম। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘দর্শনার্থীরা এসে আমাদের কাছে সড়কের বিষয়ে অভিযোগ করেন। আমরা বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত ও মৌখিকভাবে জানিয়েছি। শীতে পর্যটন মৌসুম। তার আগেই সড়কটি ঠিক না হলে সংকট বাড়বে।’

সড়কটিতে দুর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করে সোনারগাঁ পৌরসভা প্রশাসক ও ইউএনও তৌহিদ এলাহী বলেন, ‘ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে বিটুমিনের সড়ক করলেও তা টেকসই হবে না। সড়ক টেকসই করতে হলে আরসিসি করতে হবে। সে ধরনের সড়ক করার মতো পৌরসভার বাজেট নেই।’