গ্রেপ্তারের পর থেকে ‘নিখোঁজ’ ব্যক্তিদের কারাগারে খুঁজে বেড়াচ্ছেন স্বজনেরা

কারাগারের দেয়ালে সাঁটানো বন্দী তালিকায় গ্রেপ্তারের পর নিখোঁজ ব্যক্তিদের নাম খুঁজছেন স্বজনেরা। মঙ্গলবার সকালে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পূর্ব দিকে বিশ্রামাগারের পেছন দিকের দেয়ালে কাগজে সাঁটানো হয়েছে সম্প্রতি কারাবন্দী ব্যক্তিদের নামের তালিকা। সেই তালিকা দেখতে কয়েকজন উৎসুক মানুষের জটলা। সেখানে তাঁরা তাঁদের সন্তান, ভাই কিংবা স্বামীর নাম খুঁজে বেড়াচ্ছেন। তাঁরা রাজনৈতিক বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে দাবি স্বজনদের।

তাঁরা বলছেন, কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সমাবেশস্থল থেকে, কাউকে বাসা থেকে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কোথাও কোনো খোঁজ না পেয়ে সর্বশেষ কারাগারে এসে বন্দী তালিকায় নাম খুঁজছেন স্বজনেরা।

বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঢাকা ও আশপাশের এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে চালানো হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান। প্রতিদিনই বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে অসংখ্য মানুষকে। এতে দিন দিন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বাড়ছে বন্দীদের চাপ। হঠাৎ বন্দীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, কারাগারের বন্দী ধারণক্ষমতা ৪ হাজার ৫৯০ জন। বর্তমানে বন্দী রয়েছেন ১০ হাজারের বেশি, যা ধারণক্ষমতার দ্বিগুণের চেয়ে বেশি। তাঁদের অধিকাংশ বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলার আসামি। বন্দীর চাপ সামলাতে প্রতিদিন কিছু কিছু বন্দীকে কাশিমপুর কারাগারে সম্প্রতি নির্মিত তিনটি পুরুষ বন্দী ভবনে পাঠানো হচ্ছে।

কারাবন্দী ব্যক্তিদের তালিকার দিকে তাকিয়ে আছেন মিরপুর–৭ নম্বর এলাকার গৃহবধূ রত্না বেগম। তাঁর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের নাম আসিফ (২৮)। সে মিরপুর শাহ আলী এলাকায় পানির ফিল্টারের ব্যবসা করে। পাশপাশি বিএনপির যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সাত দিন আগে শাহ আলী থানা–পুলিশ বাসা থেকে আসিফকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। এরপর থানায় গিয়েও তার কোনো খোঁজ পাইনি। কোনো উপায় না পেয়ে ছেলের খোঁজ নিতে কারাগারে এসেছি। এখানেও ছেলের খোঁজ পাচ্ছি না। কারারক্ষীরা বলেছেন, আমার ছেলেকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হতে পারে। তাই সেখানে গিয়ে খোঁজখবর নিতে বলা হয়েছে।’

ওই তালিকায় বড় ভাই নুর ইসলামের নাম খুঁজছেন তাঁর ছোট ভাই আওলাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘৩০ অক্টোবর আমার ভাইকে গ্রেপ্তার করে দোহার থানা–পুলিশ। এর পর থেকে তাঁর কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। থানা ও আদালত ঘুরে এখন এসেছি কারাগারে। এখানেও ভাইয়ের সন্ধান পেলাম না। এখন কোথায় যাব? কী করব? কিছুই বুঝতে পারছি না।’

দেড় বছর বয়সী সন্তান হাবিবাকে কোলে নিয়ে কারাগারে স্বামীর খোঁজ করতে এসেছেন রাজধানীর জুরাইন এলাকার গৃহবধূ বকুল আক্তার। তিনি বলেন, ‘৩ নভেম্বর রাতে কদমতলী থানা–পুলিশ আমার স্বামী দেলোয়ার হোসেনকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। এর পর থেকে আর স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। স্বামীর সন্ধান পেতে দেড় বছর বয়সী মেয়েকে কোলে নিয়ে থানা, আদালত ও কারাগারের চত্বরে চত্বরে ঘুরে বেড়াচ্ছি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কারা কর্মকর্তা জানান, কারাগারে বন্দী বেড়ে যাওয়ায় তাঁরা চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। প্রতিটি সেলে অতিরিক্ত বন্দী রাখা হয়েছে। বন্দীদের গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে।

কারাগার এলাকায় নিয়োজিত কারারক্ষী আকতাজ মিয়া বলেন, ‘কারাগারের নতুন বন্দীদের নামের তালিকা সকাল থেকে আমি ও আরও একজন মিলে কারাগারে আসা স্বজনদের দেখাচ্ছি। বেশ কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে বন্দীদের খোঁজ করছেন। তাঁদের সামলাতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার সুভাষ কুমার বলেন, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দী ধারণক্ষমতা ৪ হাজার ৫৯০ জন। বর্তমানে বন্দী রয়েছেন ১০ হাজারের বেশি। সম্প্রতি কারাগারে বন্দীর সংখ্যা বাড়ছে। এ জন্য কিছু কিছু বন্দীকে কাশিমপুর কারা কমপ্লেক্সে সম্প্রতি নির্মিত তিনটি পুরুষ বন্দী ভবনে পাঠানো হচ্ছে।