চট্টগ্রামে তিন আসনে প্রার্থী পরিবর্তন, বাদ পড়লেন দুই সংসদ সদস্য
চট্টগ্রামের ১৬ সংসদীয় আসনের তিনটিতে প্রার্থী পরিবর্তন করেছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে বাদ পড়েছেন বর্তমান দুই সংসদ সদস্য। তাঁরা হলেন হুইপ সামশুল হক চৌধুরী ও দিদারুল আলম। আর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোশাররফ হোসেনের আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন তাঁর ছেলে মাহাবুব উর রহমান। দুই সংসদ সদস্য কেন বাদ পড়লেন, তা নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় জল্পনাকল্পনা চলছে।
আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত হুইপ সামশুল হক চৌধুরী চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) থেকে টানা তৃতীয়বার সংসদ সদস্য হয়েছেন। তাঁর আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে। অন্য সংসদ সদস্য চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড-নগরের একাংশ) দিদারুল আলম দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কাশেমের ছেলে এস এম আল মামুন।
মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী এবং এস এম আল মামুন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের আগে দুজনই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
মনোনয়নবঞ্চিত সামশুল হক চৌধুরী ও দিদারুল আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। আর এস এম আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য দেশের উন্নয়নে শরিক হওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে সুযোগ দিয়েছেন। এ জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। সীতাকুণ্ডকে স্মার্ট সীতাকুণ্ড গড়তে চাই। আগের অসম্পূর্ণ কাজগুলোকে ধারাবাহিকভাবে সম্পন্ন করে সীতাকুণ্ডকে এগিয়ে নিতে চাই। এ জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি।’একই ধরনের কথা বলেছেন মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী।’
আর চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে প্রার্থী পরিবর্তন হয়েছে। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোশাররফ হোসেন। তবে এবার তিনি নির্বাচন করছেন না। অবশ্য এই আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তাঁর ছেলে মাহাবুব উর রহমানকে।
মনোনয়ন পেলেন আরও যাঁরা
এদিকে চট্টগ্রাম নগরের চারটি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করেনি আওয়ামী লীগ। বর্তমান সংসদ সদস্যদের ওপর আস্থা রেখেছে দল। চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনে নোমান আল মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) আসনে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১০ (হালিশহর, পাহাড়তলী, ডবলমুরিং, খুলশী) আসনে মো. মহিউদ্দিন এবং চট্টগ্রাম-১১ আসনে (বন্দর, ইপিজেড, পতেঙ্গা) এম এ লতিফ মনোনয়ন পেয়েছেন।
চট্টগ্রাম জেলায় ১৬টি সংসদীয় আসন রয়েছে। এর মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের ১৪ প্রার্থী। বাকি দুটি আসনের মধ্যে চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) নির্বাচিত হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল তরীকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীকে।
আগামী নির্বাচন জোটবদ্ধ নাকি দলীয়ভাবে করবে, তা এখনো চূড়ান্ত করেনি আওয়ামী লীগ। গতবারের মতো চট্টগ্রাম-২ ও চট্টগ্রাম-৫ আসনে এবারও দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। চট্টগ্রাম-২–এ মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার এবং চট্টগ্রাম-৫–এ মনোনয়ন পেয়েছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম। গতবার এই দুটি আসনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হলেও জোট ও বিরোধী দলের প্রার্থীর (জাতীয় পার্টি) কাছে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
চট্টগ্রামের অন্যান্য আসনের মধ্যে মনোনয়ন পাওয়া আগের সংসদ সদস্যরা হলেন চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) মাহফুজুর রহমান, চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ও দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) এ নজরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী এবং চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী।
দলের মনোনয়ন না পেলেও নির্বাচনের মাঠ ছাড়বে না বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুজিবুর রহমান । চট্টগ্রাম-১৬ আসন থেকে নির্বাচনের জন্য দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন তিনি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নেত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করার জন্য আমি নির্বাচনের মাঠে থাকব।’
চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের বিপরীত আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে ২৩০টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে।