স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে ফেনীর ছাগলনাইয়া যাবেন ঢাকার রায়েরবাগ এলাকার ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম। সে জন্য স্টার লাইন পরিবহনের বাসের টিকিট কিনেছেন তিনি। এক ঘণ্টা ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু ঢাকা থেকে বাস আসতে দেরি হচ্ছে।
জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, আগে এই রুটে যাত্রীপ্রতি ভাড়া ছিল ৩৮০ টাকা। সেই ভাড়া ঈদ উপলক্ষে বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে ৪২০ টাকায়। সকাল ৭টার গাড়ি আসছে সকাল ১০টায়। গাড়ির জন্য এভাবে কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে জানেন না তিনি। কাউন্টার থেকে তাঁকে শুধু বলা হচ্ছে, ঢাকায় যানজটের কারণে গাড়ি আসতে দেরি হচ্ছে।
আজ শুক্রবার সকালে সাইনবোর্ড এলাকায় ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমের মতো বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীদের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। গাড়ি পাওয়া গেলেও ভাড়া নিয়ে পরিবহনের লোকজনের সঙ্গে যাত্রীদের বচসা হয়েছে।
স্টার লাইন পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, যাত্রীর চাপ আছে। রাজধানীর গোলাপবাগ ও মানিকনগরে যানজট। সেখান থেকে গাড়ি বের হতেই এক ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, যাত্রীপ্রতি ভাড়া ৫০ টাকা বেড়েছে। যাত্রীর চাপ থাকলেও সিট দিতে পারছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ২১টি জেলার গাড়ি চলাচল করে। ব্যস্ততম দুটি মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। সাইনবোর্ড ও শিমরাইলে ৪৫টি পরিবহনের কাউন্টার আছে। ঈদ উপলক্ষে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ আছে, তবে যানজট নেই। কাউন্টারগুলোয় যাত্রীদের হালকা চাপ আছে।
পৌনে এক ঘণ্টা ধরে সাইনবোর্ড এলাকায় গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন দুই ভাই-বোন আকরাম এফ মনি ও মিম এফ নেসা। তাঁরা কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ যাবেন। দুজনেই বলেন, গাড়ি পাওয়া গেলেও ৮০ টাকার ভাড়া ১৫০ থেকে ২০০ চাওয়া হচ্ছে।
ঢাকা-হবিগঞ্জ রুটে চলাচলকারী দিগন্ত পরিবহনের সাইনবোর্ড এলাকার কাউন্টারম্যান জিসান আহমেদ বলেন, ঈদের ছুটি পুরোপুরি শুরু হয়নি। ২৭ রোজার পর থেকে যাত্রীর চাপ বাড়বে। ঢাকা থেকে গাড়িগুলো সিট ভরে আসছে। কম দূরত্বের যাত্রীদের ভেঙে ভেঙে যেতে হচ্ছে।
নোয়াখালী মাইজদী রুটে চলাচলকারী একুশে এক্সপ্রেস কাউন্টারের ব্যবস্থাপক রাকিব মিয়া বলেন, মোটামুটি যাত্রীর চাপ আছে। এই রুটে যাত্রী বেশি। তবে যাত্রীদের সিট দেওয়া যাচ্ছে না।
ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানজট নিরসনে দুই শতাধিক হাইওয়ে পুলিশ ও জেলা পুলিশ কাজ করছে। ঈদ উপলক্ষে মহাসড়কের যাত্রী চাপ আছে। তবে যাত্রীরা ভেঙে ভেঙে যাওয়াতে সেটির প্রভাব মহাসড়কে পড়ছে না বলে জানিয়েছেন শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক এ কে এম শরফুউদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মহাসড়কে যানজট নেই। পোশাক কারখানাগুলো এখনো ছুটি হয়নি। লম্বা ছুটি হওয়ার কারণে অনেকে ভেঙে যাচ্ছেন। এ কারণে চাপ পড়ছে কম। তিনি বলেন, সোম ও মঙ্গলবার গাড়ির চাপ বাড়তে পারে। যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেলে সেই গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা ও গাড়িটি আটক করা হবে।