শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর মাদারীপুরে আ.লীগ–ডিসি–এসপি কার্যালয়ে ভাঙচুর, পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালান। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটায় পুরান বাজারেছবি: অজয় কুন্ডু

মাদারীপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা এবার জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপার (এসপি) কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে। এ ছাড়া শহরের লঞ্চঘাটসংলগ্ন একটি পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে তিনটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এই চারটি স্থানে পৃথকভাবে হামলার ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যা সাতটায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় এসপি কার্যালয়ের সামনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলছিল।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতা-কর্মীরা দেশি অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে হামলা চালান। এতে আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু ও শতাধিক শিক্ষার্থী আহতের প্রতিবাদ জানিয়ে তাঁরা হামলা করেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের পার্টি অফিসে লোকজন ছিল না। হঠাৎ সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে লেবাসধারী বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের লোকজন অতর্কিতে হামলা চালায়। তারা লাঠিসোঁটা দিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে। আমরা এই হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’ একই সঙ্গে এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি।

এদিকে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শেখ হাসিনা মহাসড়কের এলজিইডি অফিসের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আগুন জ্বালিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মহাসড়কে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলছিল।

মাদারীপুরে আন্দোলনকারী বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালান। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় শহরের ডিসি অফিসে
ছবি: প্রথম আলো

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. মনিরুজ্জামান ফকির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তাঁরা চারপাশ দিয়ে হামলা চালাচ্ছেন। পুলিশ একদিকে নিয়ন্ত্রণ করলে অন্যদিকে হামলা চালাচ্ছেন। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি।’

বিকেল সাড়ে পাঁচটায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) ভাস্কর সাহা বলেন, ‘আমাদের একটি পুলিশ ফাঁড়িতে আন্দোলনকারীরা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো কিছুই জানি না। বর্তমানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ডিসি অফিসের সামনে অবস্থান নিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ছে।’

এদিকে বিকেল ছয়টার দিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালায় আন্দোলনকারীর। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা এসপি কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে পড়লে পুলিশ তাঁদের বাইরে বের করে দেয়। পরে এসপি কার্যালয়ের সামনে মিল মাঠে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। বর্তমানে এক পক্ষ মিল মাঠে এবং অন্যদিকে পুলিশ অবস্থান নিয়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলছিল।

সন্ধ্যা সাতটার দিকে অরিতিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা বলেন, আন্দোলনকারীরা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে ইটপাটকেটল ছুড়েছে। এ সময় ফটকের গ্লাস ভেঙে যায়। পরে পুলিশ তাদের ধাওয়া করলে তারা মিলমাঠে অবস্থান নেয়। এখনো তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাঁরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।

আরও পড়ুন
শিক্ষার্থীরা সদর থানার ১ নম্বর পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে লঞ্চঘাট এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

আজ বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত দফায় দফায় শহরের লেকপাড়, সদর হাসপাতাল রোড, শেখ হাসিনা মহাসড়ক, ডিসি ব্রিজ, পুরান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত ডিসি ব্রিজসহ বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ চলছে। সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিকসহ অন্তত ৭০ জন আহত হয়েছেন।

এ ছাড়া পুলিশ-ছাত্রলীগের লাঠিপেটা ও ধাওয়ায় জেলা শকুনি লেকে পড়ে দীপ্ত দে নামের আন্দোলনরত এক কলেজছাত্র মারা যান। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আন্দোলনরত অন্তত ২৫ জন শিক্ষার্থীকে আটক করেছে। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান ও ট্রাফিক পুলিশের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।