রাকসু নির্বাচন
মনোনয়নপত্র বিতরণের সময় বাড়ল পাঁচ দিন, নির্বাচন পেছানোর আলোচনায় শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্র আবাসিক হল থেকে একাডেমিক ভবনে স্থানান্তর, ভোটার তালিকায় ছবি সংযুক্তি ও সাইবার বুলিং রোধে একটি কমিটি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এদিকে নির্বাচন পেছানোর বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
মঙ্গলবার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে রাকসুর কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম। তফসিল অনুযায়ী আজ বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ছিল মনোনয়নপত্র বিতরণের শেষ সময়। এর আগে সভা করে পাঁচ দিন সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিকে মনোনয়নপত্র বিতরণের সময় পাঁচ দিন বাড়ানো ও নির্বাচন পেছানোর আলোচনার বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কয়েকজন সমন্বয়ক ও শিক্ষার্থীরা। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় রাকসুর কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে তাঁরা অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর বেশ কিছু দাবি ও ছাত্রদলের দুই মাস সময় চাওয়ার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আজ জরুরি সভায় বসে নির্বাচন কমিশন। বেলা দুইটায় শুরু হওয়া এ সভা বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এর আগে দুই দফায় বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচন কমিশন।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রসংগঠনগুলোর বিভিন্ন দাবির বিষয়ে আজ দুপুর থেকে জরুরি সভা হচ্ছে। সভা এখনো শেষ হয়নি। আমরা ইতিমধ্যে বেশ কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের সময় ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। নির্বাচন পেছানো হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। তবে আলোচনা অব্যাহত আছে। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্র আবাসিক হল থেকে একাডেমিক ভবনে স্থানান্তর, ভোটার তালিকায় ছবি সংযুক্তি ও সাইবার বুলিং রোধে একটি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পরিবর্তন, ভোটকেন্দ্র একাডেমিক ভবনে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত ও ডোপ টেস্ট করতে চার-পাঁচ দিন সময় লাগবে এবং নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে মনোনয়ন বিতরণের সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তফসিলের পরবর্তী সময়গুলোতে পরিবর্তন আসতে পারে। আমাদের সভা এখনো শেষ হয়নি। সিদ্ধান্ত নিতে আরও সময় প্রয়োজন।’
ছাত্রশিবির, সাবেক সমন্বয়ক ও শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ
এদিকে মনোনয়নপত্র বিতরণের সময় বাড়ানো ও নির্বাচন পেছানোর আলোচনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করেছেন ইসলামী ছাত্রশিবির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কয়েকজন সমন্বয়ক ও শিক্ষার্থীরা। তাঁরা ১৫ সেপ্টেম্বরই নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানান। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় তাঁরা রাকসু কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে ‘এক দফা এক দাবি, ১৫ তারিখে রাকসু দিবি’, ‘অবৈধ সিন্ডিকেট, মানি না মানব না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, ‘সকাল থেকেই উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ চলছিল। আমরাও মনোনয়ন সংগ্রহের জন্য অপেক্ষমাণ ছিলাম। এরপর হঠাৎ জানতে পারলাম, মনোনয়ন বিতরণের তারিখ বাড়ানো হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত জানার পরে আমরাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের প্রতিনিধিরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলেছি। নির্বাচন কমিশনের কথা শুনে আমাদের মনে হয়েছে, এটি নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের অংশ। আমরা নির্বাচন কমিশনকে বলতে চাই, যদি আপনাদের কাছে যৌক্তিক কোনো কারণ থাকে, তবে এটি সর্বোচ্চ আজ তিন ঘণ্টা ও আগামীকাল দুপুর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যায়। কিন্তু নির্বাচন আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরই হতে হবে।’
মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ১৫৭ জন
আজ বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত রাকসু ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে মোট ১৫৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে রাকসু নির্বাচনে ১৩৮ জন ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে ১৯ জন প্রার্থী মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। তাঁদের মধ্যে ১৪১ জন প্রার্থী আজ মনোনয়নপত্র তুলেছেন। বেলা দুইটার দিকে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটসহ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র আন্দোলন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে। তবে ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরসহ অন্যান্য সম্ভাব্য প্যানেলের কেউ মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ (রাহী) বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ছবিযুক্ত ভোটার তালিকাসহ বেশ কিছু দাবি জানিয়েছি। আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার মৌখিক আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। দাবি মেনে না নিলে আমরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করব না।’