সম্মেলনের ১৪ মাসেও হয়নি সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি

টানা ৯ বছর পর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ হারান স্থানীয় সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান।

বগুড়া জেলার মানচিত্র

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয় গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিমকে সভাপতি ও আবদুল খালেককে সাধারণ সম্পাদক করে উপজেলা আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। তবে সম্মেলনের ১৪ মাস পরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। পুনর্গঠন করা হয়নি দলের তৃণমূল কমিটি।

টানা ৯ বছর পর সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ হারান বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনের সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান। তিনি দলের প্রয়াত সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নানের স্ত্রী। এর আগে ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সাহাদারা মান্নান সভাপতি ও আলমগীর শাহী সাধারণ সম্পাদক হন। ২০১৫ সালে সারিয়াকান্দি পৌর নির্বাচনে আলমগীর শাহী মেয়র হন। এরপর সাহাদারা মান্নানের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ান তিনি। সেই দ্বন্দ্বের জেরে ২০১৭ সালের ২৬ আগস্ট সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে আলমগীর শাহীকে অব্যাহতির সুপারিশ করে জেলায় চিঠি পাঠায় উপজেলা আওয়ামী লীগ। সংসদ সদস্য আবদুল মান্নানের মৃত্যুর পর এ আসনে তাঁর স্ত্রী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহাদারা মান্নান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর আলমগীর শাহীর সঙ্গে সংসদ সদস্যের বিরোধ আরও বেড়ে যায়। এর জেরে সারিয়াকান্দি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন হারান আলমগীর শাহী।

এ ছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের সঙ্গে সাহাদারা মান্নানের বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। সারিয়াকান্দিতে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে পাল্টাপাল্টি দলীয় কর্মসূচি পালন করা হয়। বিভিন্ন ইউনিয়ন কমিটি পুনর্গঠনের নামে ‘পকেট কমিটি’ ও সারিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে ভোট চাওয়ার অভিযোগও উঠেছিল সাহাদারা মান্নানের বিরুদ্ধে।

এদিকে জাতীয় নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, সাহাদারা মান্নানের সঙ্গে দলীয় নেতা–কর্মীদের বিরোধ ও দ্বন্দ্ব তত বাড়ছে। দলীয় কোন্দলের কারণে ১৪ মাসেও উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি।

* সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয় গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি। * রেজাউল করিমকে সভাপতি ও খালেককে সম্পাদক করে আংশিক কমিটি করা হয়।

আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে তিন দফা বিজয়ী হন। ২০২০ সালের ১৮ জানুয়ারি তাঁর মৃত্যুর কারণে আসনটি শূন্য হয়। ২৯ মার্চ ভোট গ্রহণের কথা ছিল। তবে করোনাভাইরাসের কারণে ২১ মার্চ নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ওই বছরের ১৪ জুলাই উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাহাদারা মান্নান বিজয়ী হন।

এরপর দলীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সাহাদারা মান্নানের দূরত্ব বাড়তে থাকে। এ অবস্থায় গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতির পদ হারান তিনি। স্থানীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কিছুদিন আগে সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির ব্যানারে সাহাদারা মান্নানের নাম না থাকায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সাধারণ সম্পাদক আবদুল খালেকের সঙ্গে তাঁর উতপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। উপস্থিত নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

এ বিষয়ে জানতে সাহাদারা মান্নানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, সংসদ সদস্য এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সম্পর্কে দেবর-ভাবি। সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে সংসদ সদস্যের অপ্রীতিকর ঘটনার বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা অভিযোগ চেয়েছিলেন। তবে সংসদ সদস্য ভাবি হওয়ায় আবদুল খালেক অভিযোগ করতেও রাজি হননি।

আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায় বর্তমান সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ম. আবদুর রাজ্জাক, পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি হামিদুল আলমের স্ত্রী শাহাজাদী আলম এবং বাংলাদেশ অ্যাগ্রো কেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কে এস এম মোস্তাফিজুর রহমান মাঠে তৎপর আছেন।

এ ছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিমও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে নৌকার মাঝি হতে চান বেশ কয়েকজন নেতা। এ নিয়ে দলে বিভেদ বাড়ছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি শিগগিরই ঘোষণা করা হবে।

বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান বলেন, উপজেলা নেতারা তাদের পছন্দের লোকজনের নামের তালিকা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দাখিল করেছেন। যাচাই বাছাই শেষে খুব শিগগির ওই উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।