সুনামগঞ্জ সদরে আওয়ামী পরিবারের তিন ‘যুব নেতার’ লড়াই
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাচনে এবার চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনজন। এর মধ্যে দুজন পুরোনো, একজন এবার প্রথম প্রার্থী হয়েছেন। তবে তিন প্রার্থীই আওয়ামী পরিবারের। দলীয় পদের পরিচয়ে তিনজনই ‘যুব নেতা’।
দুজন যুবলীগের বড় পদে আছে। একজন এখন কোনো পদে নেই। জেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এই তিন প্রার্থী এবং তাঁদের পরিবারের বিশেষ পরিচিতি ও অংশগ্রহণ আছে। তাই ভোটের মাঠে লড়াইটা হচ্ছে আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যেই।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে তিন প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা (চপল), মনিষ কান্তি দে (মিন্টু) ও ফজলে রাব্বী (স্মরণ)। তিনজনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ও সক্রিয়। খায়রুল হুদা গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী হন। তখন মনিষ কান্তি দে ছিলেন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী। এর আগেও মনিষ একই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ফজলে রাব্বী এবার নতুন প্রার্থী।
খায়রুল হুদা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক। তিনি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি। তাঁর বড় ভাই নুরুল হুদা সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।
মনিষ কান্তি দে ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত। তিনি সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) ছিলেন। তিনি জেলা যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি ও সুনামগঞ্জ পৌরসভার দুবারের সাবেক কাউন্সিলর। তাঁর বড় ভাই মানিক দে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক সহসভাপতি (ভিপি)। মনিষ কান্তি দে যুবলীগের পর আর কোনো পদে না থাকলেও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন। সদর উপজেলা পরিষদের গত দুটি নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফজলে রাব্বী এবার প্রথমবারের মতো সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যুবলীগের কেন্দ্রীয় উপসাংস্কৃতিক সম্পাদক তিনি। তাঁর প্রয়াত বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রব্বানী আমৃত্যু আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছেন। তাঁর মা শামসুন্নাহার বেগম (শাহানা রব্বানী) জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সুনামগঞ্জ-মৌলভীবাজার সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য।
তিন প্রার্থীই ভোটের মাঠে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছেন। গ্রামগঞ্জে মাঠে-ময়দানে পথসভা, জনসভা করেছেন। দিনরাত চষে বেড়িয়েছেন। তাঁদের পরিবারের সদস্যরা মাঠে সক্রিয় ছিলেন। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। মাঝখানে বৃষ্টিতে প্রচারে কয়েক দিন কিছুটা বিড়ম্বনা পোহাতে হয়েছে। তবে ঝড়বৃষ্টির মধ্যেও প্রচারণা বাদ দেননি প্রার্থী এবং তাঁদের স্বজনেরা। তিনজনকে নিয়ে ভোটারদের মধ্যে আলোচনা রয়েছে।
খায়রুল হুদা গত পাঁচ বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে সেটির ধারাবাহিকতা রক্ষায় তাঁকে দ্বিতীয়বার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার আহ্বান জানাচ্ছেন ভোটারদের। অন্যদিকে আইনজীবী মনিষ কান্তি দে উপজেলার উন্নয়ন ও মানুষের কল্যাণে একবার সুযোগ দিতে ভোটারদের অনুরোধ করছেন। ফজলে রাব্বী বলছেন পরিবর্তনের কথা। তিনি একটি আধুনিক, জনবান্ধব উপজেলা গঠনে আশ্বাস দিয়ে তাঁকে নির্বাচিত করতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় একটি পৌরসভা ও নয়টি ইউনিয়ন। এর মধ্যে সুরমা নদীর উত্তর পারে আছে তিনটি ইউনিয়ন। সুরমা নদীর দক্ষিণ পারে পৌরসভা ও বাকি ইউনিয়নগুলো।
সাধারণ ভোটারদের ভাষ্য, প্রার্থীরা শহরের চেয়ে গ্রামেই বেশি প্রচারণা চালিয়েছেন। সুরমা নদীর উত্তর পারের ভোটে নজর কোনো কোনো প্রার্থীর বেশি। প্রার্থীরা ইউনিয়নভিত্তিক নিজের ভোটব্যাংক গড়ার চেষ্টা করেছেন। তাঁদের ধারণা, শহরের মানুষ তুলনামূলক সচেতন, তাঁদের খুব একটা নড়ানো যাবে না। তাই গ্রামের ভোটারদের যে যত বেশি টানতে পারবেন, তিনি তত বেশি লাভবান হবেন।
সদর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা শ্রমিক মুসলিম উদ্দিন বলেন, ‘যে যেতাই খউকা, ভোট বুইজ্জা, হুইন্যাই দিমু। ভোটের সময় হখলেউ ভালা ভালা খকা খইন। ভোট গেলেগি আর পাওয়া যায় না।’ পৌর শহরের হাসননগর এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রার্থীরা সরব, কিন্তু ভোটাররা তো নীরব। ভোট নিয়ে মানুষের মধ্যে আগের মতো আগ্রহ নেই। এটা আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যে ভোট হচ্ছে।’
সুনামগঞ্জে নাগরিকদের সামাজিক সংগঠন জনউদ্যোগের সদস্য আবদুর রায়হান বলেন, প্রার্থীরা সবাই পরিচিত। এবার তাঁদের প্রচারও বেশ লক্ষণীয় ছিল। শুরু থেকেই একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ আছে। আমরা চাই, শেষ পর্যন্ত এটা বজায় থাকুক। ভোটাররা এর মধ্য থেকেই তাঁদের পছন্দের একজনকে বেছে নেবেন।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ২৮ হাজার ৫৩৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৯১ জন। নারী ১ লাখ ১১ হাজার ৭৪১ জন। হিজড়া একজন। উপজেলায় ভোটকেন্দ্র ৭৮টি। এখানে ৫ জুন ভোট হবে।