বিলম্ব জাতের আম ভালো দামে বিক্রির আশা লন্ডনফেরত শাহিনের

নাবি (বিলম্ব) জাতের আম গৌড়মতি। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। সম্প্রতি টাঙ্গাইলের সখীপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ময়থাচলা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত আমের ভরা মৌসুম। এ সময়ের মধ্যে গোপালভোগ, হিমসাগর, আম্রপালি, ল্যাংড়া, ফজলি, হাঁড়িভাঙা, ফজলিসহ বিভিন্ন জাতের আম বাজারে পাওয়া যায়। বেশির ভাগ আমের জোগান যখন শেষ হয়, তখনই পাকতে শুরু করে বারি-১২ বা গৌড়মতি জাতের আম। এটিকে নাবি (বিলম্ব) জাতের আমও বলা হয়। অসময়ে এই আম চাষ করে ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন লন্ডনফেরত তরুণ শাহিন আহমেদ।

মৌসুমের শেষ দিকে গৌড়মতি জাতের আম বাজারে আসায় ভালো দাম পাওয়া যায়। এই ভাবনা থেকে গৌড়মতি জাতের আম চাষ করে এবার ২৫ লাখ টাকা বিক্রির আশা করছেন টাঙ্গাইলের সখীপুরের তরুণ উদ্যোক্তা শাহীন আহমেদ।

শাহীনের বাড়ি সখীপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রফেসর কলোনিতে। তাঁর বাবার নাম মৃত সানোয়ার হোসেন। পুরোনো বাগানে ‘টপ ওয়ার্কিং’ গৌড়মতি পদ্ধতিতে আম চাষ করেছেন তিনি। তবে সখীপুরে আর কেউ এ জাতের আম চাষ করেননি। অবশ্য তাঁর দেখাদেখি পুরোনো বাগানে নতুন জাতের গৌড়মতি আম চাষে অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এই আম চাষে শাহীনকে সব ধরনের সহযোগিতা করেছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিয়ন্তা বর্মণ বলেন, গৌড়মতি নাবি জাতের আম অত্যন্ত মিষ্টি। শাহীনের বাগানে তিনি গিয়েছেন। সেখানে ৩৫ হাজার আমে ‘ফ্রুট ব্যাগিং’ করা হয়েছে। এটি নিরাপদ ও বিষমুক্ত আম। অসময়ে হওয়ায় এই তরুণ উদ্যোক্তা চড়া দামে আম বিক্রি করতে পারবেন। কৃষি বিভাগ থেকে তাঁকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। তাঁর দেখাদেখি আরও অনেকেই গৌড়মতি আম চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।

গৌড়মতি জাতের আম চাষ করে ভালো দাম পাওয়ার আশা শাহিন আহমেদের। সম্প্রতি টাঙ্গাইলের সখীপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ময়থাচলা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

শাহীন আহমেদ বলেন, ‘বিদেশ থেকে দেশে আসার পর নতুন কিছু করার চিন্তা করি। কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার চিন্তা থেকেই এই আমবাগান করেছি। এরপর ইউটিউব ঘাঁটাঘাঁটি করে আমবাগান করতে উদ্বুদ্ধ হই। পাঁচ একর জমির পুরোনো বাগান ১০ বছরের জন্য ইজারা নিয়ে ১ হাজার ৭০০ গৌড়মতি জাতের আমের কলম লাগানো হয়েছে। ওই বাগানে এ পর্যন্ত আমার প্রায় ২৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এবার প্রথম পর্যায়েই খরচের টাকা উঠে যাবে। পরবর্তী বছর থেকে আমার পুরোটাই লাভ হবে বলে আশা করছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ২৪০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। তবে গৌড়মতি জাতের আম চাষ করেছেন কেবল শাহীন আহমেদ। প্রায় আট বছর আগে ‘বিজনেস ল’ বিষয়ে লন্ডনে পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরে প্রথমে পেয়ারার বাগান করেন তরুণ উদ্যোক্তা শাহীন। পেয়ারার বাগান থেকে বেশ সফলতাও পান। এরপর প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে নাটোর মহিলা কলেজের কৃষিশিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক গোলাম মওলাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি সখীপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ময়থাচালা এলাকায় পাঁচ একর জমিতে গৌড়মতি আমের বাগান করেন। পুরোনো আম্রপালি বাগানে ‘টপ ওয়ার্কিং’ পদ্ধতিতে ১ হাজার ৭০০ গাছে গৌড়মতি জাতের আমের কলম করেন। এর মধ্যে এক হাজার গাছে আম এসেছে। ১৫ আগস্টের পর থেকে এই আম বাজারজাত শুরু হয়েছে।

বিদেশ থেকে দেশে আসার পর নতুন কিছু করার চিন্তা করি। কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার চিন্তা থেকেই এই আমবাগান করেছি। এরপর ইউটিউব ঘাঁটাঘাঁটি করে আমবাগান করতে উদ্বুদ্ধ হই।
শাহীন আহমেদ, কৃষি উদ্যোক্তা

বাগানের পাশের বাসিন্দা হাসমত আলী প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় প্রতিদিনই বাগানটি দেখতে মানুষ আসছেন। অনেকেই এমন বাগান করার আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তিনিও আগামী বছর থেকে এ জাতের আম চাষ করার চিন্তা করছেন।

সখীপুর আবাসিক মহিলা কলেজের অফিস সহায়ক মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার একটি পুরোনো বাগান আছে। এখন আর আগের মতো আম ধরছে না। আমি চিন্তা করছি পুরোনো গাছের ৫ ফুট রেখে বাকি অংশ কেটে দেব। সেখানে টপ ওয়ার্কিং পদ্ধতিতে গৌড়মতি জাতের আম চাষ করব।’