খেলোয়াড়দের স্বপ্ন বিক্রি

২০০৭ সালে সদর উপজেলার রহিমানপুর এলাকায় পল্লীবীর স্পোর্টস সেন্টার চালু করা হয়েছিল। সম্প্রতি এটি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রহিমানপুর এলাকায় পল্লীবীর স্পোর্টস সেন্টারের এই খেলার মাঠ বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার তোলা ছবি
প্রথম আলো

সীমানাপ্রাচীরে ঘেরা সবুজ মাঠ। মাঠজুড়ে ফুটবল, ক্রিকেট, হ্যান্ডবলসহ বিভিন্ন খেলার আয়োজন—সবই আছে। নেই শুধু খেলোয়াড়। এমন দুরবস্থা ঠাকুরগাঁওয়ের পল্লীবীর স্পোর্টস সেন্টার নামের ক্রীড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের।

এই কেন্দ্রটি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ক্রীড়াঙ্গনে দ্যুতি ছড়ানোর স্বপ্ন দেখছিল অনেক খুদে খেলোয়াড়। কিন্তু সম্প্রতি কেন্দ্রটি বিক্রি হয়ে যাওয়ায় তাদের সেই স্বপ্নে ছেদ পড়েছে। মাঠের অভাবে ওই ক্রীড়া কেন্দ্রে খেলোয়াড়েরা এখন অনুশীলন করতে পারছে না।

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, ২০০৭ সালের দিকে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রহিমানপুর এলাকায় স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে ১২ একর জমি কিনে একটি ক্রীড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেন প্রবাসী সৈয়দ মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। প্রতিষ্ঠার পর কেন্দ্রটির নাম দেন পল্লীবীর স্পোর্টস সেন্টার। সেখানে নিয়োগ দেওয়া হয় প্রশিক্ষক।

সুযোগ পেয়ে এলাকার শিশু–কিশোরেরা সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে তুলতে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক খুদে খেলোয়াড়ই জেলা, বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে নিজের জায়গা করে নিতে শুরু করে। পরে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের একটি অংশে মায়মুনা মাতা শিশু হাসপাতাল ও নার্সিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ।

কিন্তু গত এপ্রিল মাসে তিনি হাসপাতাল ও নার্সিং ইনস্টিটিউটের অংশটি রেখে পল্লীবীর স্পোর্টস সেন্টারটির অংশটি বিক্রি করে দিয়েছেন। এ কারণে ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটিতে নিয়মিত অনুশীলন নেওয়া খেলোয়াড়েরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।

স্কিপিং রোপে (দড়িলাফ) নির্দিষ্ট সময়ে এক পায়ে সর্বোচ্চ লাফিয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লিখিয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলার হরিহরপুর গ্রামের রাসেল ইসলাম (২০)। তিনিও পল্লীবীর স্পোর্টস সেন্টারে নিয়মিত অনুশীলন করতেন। রাসেল ইসলাম বলেন, ‘পল্লীবীর স্পোর্টস সেন্টারের মাঠে অনুশীলন করেই আমি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লিখিয়েছি। এই মাঠে প্রশিক্ষণ নিয়ে এলাকার অনেক ছেলেমেয়ে জাতীয় পর্যায়ে খেলার স্বপ্ন দেখত। কিন্তু মাঠটি বিক্রি হয়ে যাওয়ায় তাদের সেই স্বপ্নও বিক্রি হয়ে গেছে।’

পল্লীবীর স্পোর্টস সেন্টারে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফুটবলে বেশ দক্ষতা অর্জন করেছেন আরিফ আলী, রাহাত হোসেন, মো. তানভির, রিমন হোসেন ও মোহাম্মদ সোহাগ। মাঠটি বিক্রি হয়ে যাওয়ায় এখন তাঁরা কখনো মথুরাপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে, কখনো চিনিকল মাঠে অনুশীলন করেন।

ক্রীড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য পল্লীবীর স্পোর্টস সেন্টারে জমি বিক্রি করেছিলেন মো. সফিউদ্দিন। সেই কেন্দ্রটি বিক্রি হয়ে যাওয়ার খবরে হতাশ হয়ে পড়েন তিনি। বলেন, ‘ক্রীড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কথা শুনে একপ্রকার নামমাত্র দামে জমি দিয়েছিলাম। যখন দেখতাম ছেলেমেয়েরা সেখানে খেলাধুলা করে সুনাম অর্জন করছে, তখন গর্বে বুকটা ভরে যেত। আর বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর সেটার দিকে তাকালেই বুকটা ভেঙে আসে।’