সুনামগঞ্জে বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ায় প্রতিবাদ সমাবেশ

ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করতে না পারার প্রতিবাদে সমাবেশ করে ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’ সংগঠন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে শহরের আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনের সড়কে
ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জে হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজ বর্ধিত সময়েও শেষ না হওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। সকালে শহরের জেলা আইনজীবী ভবন প্রাঙ্গণে এই সমাবেশ করে ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’ সংগঠন। এতে সংগঠনের সদস্য ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার লোকজন অংশ নেন।

সুনামগঞ্জে হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজের নির্ধারিত সময়সীমা ছিল গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। কিন্তু এই সময় বাঁধের কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় আরও সাত দিন সময় বাড়ানো হয়। এই বাড়তি সময়েও বাঁধের কাজ শেষ করতে পারেননি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বক্তারা বলেছেন, প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাদের ৯৫ ভাগ কাজ শেষের দাবিটি সত্য নয়। মাঠের অবস্থা ভিন্ন। এখনো অনেক কাজ বাকি। এখন পর্যন্ত ৬০ ভাগ কাজ হয়েছে।

কাজ শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ ও ফসল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বক্তারা। তাঁরা বলেন, বৃষ্টি হলেই ফসল ঝুঁকিতে পড়বে। নানাভাবে বলার পরও বাঁধের কাজে গতি বাড়েনি। এতে সবার অবহেলা ও গাফিলতি আছে। অনেক প্রকল্পে কাজ শুরু হয়েছে দেরিতে। কাজের চেয়ে বাঁধের প্রকল্প, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন নিয়ে মাঠে দেন-দরবার চলে বেশি। অনেক স্থানে নেওয়া হয়েছে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প। পাউবো ও প্রশাসনের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা মিলেমিশে কাজে ঢিলেমি করেছেন।

হাওর বাঁচাও আন্দোলন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, বাঁধ নির্মাণকে একটি মহল ব্যবসা হিসেবে নিয়েছে। এতে সবাই জড়িত। বাঁধের কাজে অনিয়মের কারণেই কাজ যথাসময়ে শেষ করা যায় না। কোনো কারণে ফসলের ক্ষতি হলে প্রশাসন ও পাউবোকে এর দায় নিতে হবে।

আয়োজক সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি চিত্তরঞ্জন তালুকদারের সভাপতিত্বে ও সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম, আইনজীবী বোরহান উদ্দিন, মনীষ কান্তি দে, সবিতা চক্রবর্তী ও মহসিন রেজা মানিক, আয়োজক সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা রমেন্দ্র কুমার দে, সহসভাপতি সুখেন্দু সেন, সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্মল ভট্টাচার্য, জেলা কমিটির সভাপতি ইয়াকুব বখত, সহসভাপতি মো. আলীনুর, সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে কুদরত পাশা, সদর উপজেলা কমিটির শহীদ নূর আহমেদ, শান্তিগঞ্জ উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু সইদ, সমাজকর্মী মহিম তালুকদার প্রমুখ।

সুনামগঞ্জ পাউবো সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলার ১২টি উপজেলায় ছোট–বড় ৯৫টি হাওরে এবার সোয়া ২ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এসব হাওরে বেড়িবাঁধ আছে ১ হাজার ৭১৮ কিলোমিটারের মতো। পাউবো এবার ৩৮টি হাওরে ৫৯১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে ৭৩৫টি প্রকল্পে কাজ করছে। এতে প্রাক্কলন ধরা হয়েছে ১৩০ কোটি টাকা।

এ প্রসঙ্গে সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেছেন, শুরুতে কাজে গতি কম থাকলেও পরে গতি বেড়েছে। কাজের ৯৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। হাতে গোনা কিছু প্রকল্পে মাটির কাজ বাকি। অন্য প্রকল্পগুলোয় এখন আনুষঙ্গিক কাজ চলছে।

হাওরে একসময় ঠিকাদারদের মাধ্যমে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ হতো। ২০১৭ সালে হাওরে ব্যাপক ফসলহানির পর বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে তখন মামলাও হয়। এরপর পাউবো হাওরে বাঁধ নির্মাণে নতুন নীতিমালা করে। এতে কাজ থেকে বাদ দেওয়া হয় ঠিকাদারদের। কাজে সরাসরি যুক্ত করা হয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে। প্রতিটি প্রকল্পের জন্য প্রকৃত কৃষক ও স্থানীয় সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের নিয়ে পাঁচ থেকে সাত সদস্যের একটি পিআইসি থাকে। একটি পিআইসি সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকার কাজ করতে পারে।