বঙ্গবন্ধু টানেল চালুর পর জৌলুশ হারাল পুরোনো ঘাট, মাঝিদের হতাশা

একেকটি নৌকা আগে ১২-১৫ বার যাত্রী পারাপার করত। এখন ৪-৫ বার সুযোগ পাচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রামের আনোয়ারার সিইউএফএল-১৫ নং ঘাটে
ছবি: মোহাম্মদ মোরশেদ হোসেন

খেয়াঘাটে হাঁকডাক নেই। পারাপারের জন্য নেই যাত্রীদের ভিড়। নৌকায় শুয়ে–ঘুমিয়ে সময় কাটাচ্ছেন মাঝিরা। যাত্রী কমে যাওয়ায় ব্যস্ততা কমে গেছে ঘাটের দোকানিসহ অন্যান্য যানবাহন চালকদেরও। আয় কমে যাওয়ায় হতাশা দেখা যাচ্ছে অনেক চালকের মধ্যে।

কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল চালু হওয়ার পর এভাবেই বদলে গেছে চিরচেনা ব্যস্ত সিইউএফএল-১৫ নম্বর ঘাটটি। বেশির ভাগ যাত্রী এখন টানেল হয়ে চট্টগ্রাম শহরে যাওয়া-আসা করছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে গিয়ে নৌকার মাঝি, দোকানি, গাড়িচালক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা হয়। নৌকার মাঝি মো. রুবেল ও আলী আকবর বলেন, ‘বাপ–দাদার আমল থেকে এ পেশার ওপর ভর করে সংসার চালিয়ে আসছি। এখন ঘাটে যাত্রী কমে গেছে। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

নদীপথে চট্টগ্রাম শহরে যাতায়াতের জন্য আনোয়ারা প্রান্তের ঘাটটি সিইউএফএল-১৫ নম্বর ঘাট নামে পরিচিত। ঘাটের দোকানদার মুজিবুর রহমান জানান, তাঁর দোকানের বেচাবিক্রি কমে গেছে ঘাটে যাত্রী না থাকায়।

ঘাট এলাকা ও এর আশপাশের বাসিন্দারা জানান, অন্তত চার থেকে পাঁচ হাজার যাত্রী প্রতিদিন এ ঘাট ব্যবহার করতেন। শহর থেকে এ ঘাট দিয়ে সিইউএফএল সার কারখানায় যেতেন মানুষ। আবার আনোয়ারা থেকে এ ঘাট ব্যবহার করে শহরের পোশাক কারখানা, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত ও বিমানবন্দরে যাতায়াত করতেন নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। তাই সব সময় ব্যস্ত থাকত ঘাটটি। বৃহস্পতিবার ও শনিবার এই ব্যস্ততা বেড়ে যেত দ্বিগুণ। মাঝিরা দম ফেলার সময় পেতেন না।

বঙ্গবন্ধু টানেল চালুর পর অলস সময় কাটাচ্ছেন মাঝিরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রামের আনোয়ারার সিইউএফএল-১৫ নং ঘাটে
ছবি: প্রথম আলো

আনোয়ারা উপজেলার তৈলারদ্বীপ গ্রামের বাসিন্দা নুরুল আনোয়ার বলেন, ‘আগে সিইউএফএল-১৫ নম্বর ঘাট পার হয়ে সপ্তাহে দুইবার আসা-যাওয়া করতাম। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় প্রতিদিন আসতাম না। এখন টানেল হওয়ায় সড়কপথে প্রতিদিন কর্মস্থলে যাতায়াত করছি।’

ফেরিঘাটে অটোরিকশা-সিএনজিচালক সমবায় সমিতির লাইন্সম্যান মো. সাদ্দাম বলেন, ‘আমাদের ১০০টি গাড়ি আছে। এসব গাড়ি কক্সবাজারের পেকুয়া, বদরখালী, মগনামা ঘাট, চকরিয়া ও আনোয়ারার চাতরী এলাকায় ভাড়া নিত। এখন যাত্রী কমে গেছে। চালকদের মধ্যে হতাশা দেখা দিচ্ছে।’

আগে সারা দিনে একেকটি নৌকা ১২-১৫ বার যাত্রী পারাপার করত। এখন ৪-৫ বার সুযোগ পাচ্ছে বলে জানান ঘাটের লাইন্সম্যান মোজাম্মেল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিন ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে মাঝিদের আয়।

আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক এম এ মান্নান চৌধুরী বলেন, ১৫ নম্বর সিইউএফএল ঘাটটি কয়েক শ বছরের পুরোনো। এটি দিয়ে আনোয়ারার লোকজন কখনো নৌকা কখনো ফেরি করে পার হয়েছেন। টানেল উদ্বোধনের পর লোকজন সড়কপথে চট্টগ্রাম শহরে যাচ্ছেন। এতে করে ঘাটের অবস্থা আর আগের মতো নেই।