চাঁপাইনবাবগঞ্জে চোরের আতঙ্কে গরুর খামারিরা

সর্বশেষ গত সোমবার রাতে গোমস্তাপুর থেকে চারটি ও সদর উপজেলা থেকে একটি গরু চুরি হয়েছে।

  • জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে চলতি মাসে অন্তত ৩৩টি গরু চুরি হয়েছে।

  • খামারের গ্রিল কেটে ও চেতনানাশক ওষুধ ছিটিয়ে গরু চুরি করা হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মানচিত্র

চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন স্থান থেকে চলতি মাসে অন্তত ৩৩টি গরু চুরি হয়েছে। সংঘবদ্ধ চোরের দল গাড়িতে করে এসে চুরি করে গরু নিয়ে যাচ্ছে। যন্ত্র দিয়ে খামারের গ্রিল কেটে ও চেতনানাশক ওষুধ ছিটিয়ে গরু চুরি করা হয়েছে। সর্বশেষ গত সোমবার রাতে গোমস্তাপুর থেকে চারটি ও সদর উপজেলা থেকে একটি গরু চুরি হয়েছে। একের পর এক গরু চুরির ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছেন খামারি ও গৃহস্থ পরিবার।

গরু চুরি রোধে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ ডেইরি অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। গতকাল মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খানের সঙ্গে দেখা করে তাঁরা এই দাবি জানান। এ সময় তাঁদের সঙ্গে ছিলেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান।

খামারিদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে বলা যায়। এ অবস্থা চলতে থাকলে অনেকে চুরির ভয়ে গরুর খামার উঠিয়ে দেবেন।
মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা

ডেইরি অ্যাসোসিয়েশনের সদর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম বলেন, ‘এমনিতে খামারিরা কয়েক বছর থেকে লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না। তার ওপর এই গরু চুরির হিড়িকে চরম দুঃসময়ে পড়েছেন খামারিরা। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে বৈঠক করে আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়ে আসছি; কিন্তু গরু চুরি বন্ধ হয়নি। রাত জেগে পাহারা দিচ্ছি খামার। আমাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আগস্ট মাসে প্রায় প্রতিদিনই গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। এতে খামারিদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাঁদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে বলা যায়। এ অবস্থা চলতে থাকলে অনেকে চুরির ভয়ে গরুর খামার উঠিয়ে দেবেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ডেইরি অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসে সদর উপজেলার পলাশায় তাশেম আলীর খামার থেকে ৫টি, হাসানুল বান্নার থেকে ১টি, আমরক গ্রামে ৫টি, বাবুডাইংয়ে গরুর পাল থেকে ৭টি, গণশাপাড়া থেকে ৩টি, মহাডাঙ্গা মহল্লা থেকে ১টি, দায়পুর থেকে ১টি, দায়পুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ১টি, নাচোলের সানপুর থেকে ৩টি, গোমস্তাপুরের দাঁড়াবাজ গ্রাম থেকে ৪টিসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ৩৩টি গরু চুরি হয়েছে।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার ছাইদুল হাসান বলেন, চলতি মাসে গরু চুরির সংখ্যা তাঁর জানা নেই। গরু চুরি রোধে টহল জোরদার ও জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে জোর প্রচেষ্টা চলছে।

সোমবার দিবাগত রাতে গোমস্তাপুরে চারটি ও সদর উপজেলায় একটি গরু চুরি হয়েছে। দুই থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। গোমস্তাপুরের দাঁড়াবাজ গ্রামে তৌফিক নামের এক ব্যক্তির গোয়ালঘর থেকে সোমবার রাতে চারটি গরু চুরি হয়েছে। গোমস্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, বাড়ির বাইরে অবস্থিত গোয়ালঘর থেকে চুরির ঘটনা ঘটেছে। আগস্ট মাসে দুটি ও জুলাই মাসে একটি গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। জুলাই মাসে রাধানগরে তিনটি গরু চুরির ঘটনায় একটি গরু উদ্ধার ও চার চোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সদর থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘সোমবার দিবাগত রাতে হাসনুল বান্নার খামার থেকে একটি, ২১ আগস্ট দিবাগত রাতে তাশেম আলীর খামার থেকে পাঁচটি গরু চুরিসহ তিনটি চুরির ঘটনার কথা আমরা জানি। অন্য যেসব গরু চুরির ঘটনার কথা বলা হচ্ছে, তা আমাদের জানানো হয়নি।’

নাচোল থানার ওসি মিন্টু রহমান বলেন, জেলার বাইরে থেকে পিকআপে করে এসে খুব দ্রুত গরু চুরি করে নিয়ে পালাচ্ছে সংঘবদ্ধ চোর চক্র। এ জন্য গরু উদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়েছে। চার-পাঁচটি সংঘবদ্ধ দল কাজ করছে বলে জানা গেছে। আগস্ট মাসে দুটি চুরির ঘটনায় মামলা হয়েছে। জুলাই মাসে নেজামপুর ইউনিয়নের বরেন্দা গ্রামে পাঁচটি গরু চুরির ঘটনায় নয়জনকে গ্রেপ্তার ও দুটি গরু উদ্ধার করা হয়েছে। নাচোল থেকে বের হওয়ার বিভিন্ন রাস্তায় তল্লাশিচৌকি বসানো হয়েছে।

জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খান বলেন, ‘গত ১৪ দিনে ৩০টির বেশি গরু চুরির ঘটনা আমাকে জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলা পুলিশ, র‍্যাব প্রধান, বিজিবির ব্যাটালিয়ন কমান্ডার ও বিভিন্ন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। বিভিন্ন রাস্তায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও টহল জোরদারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাহারা দেওয়ার ব্যাপারে জনসাধারণকেও সম্পৃক্ত করার কথা ভাবা হচ্ছে।’