জামালপুরে শ্রমিকদের ওপর শিক্ষার্থীর ‘হামলা’র প্রতিবাদে দূরপাল্লার বাস ধর্মঘট

হামলার প্রতিবাদে জামালপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কে আড়াআড়িভাবে বাস রেখে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন শ্রমিকেরা। সোমবার বিকেলে জামালপুর শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

জামালপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের সময় শ্রমিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে দূরপাল্লার বাস ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। আজ সোমবার বিকেল চারটার দিকে জামালপুর জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন ও জেলা বাস মালিক সমিতি যৌথভাবে এই ঘোষণা দেয়। এরপর থেকে অনির্দিষ্টকালের এ ধর্মঘট শুরু হয়েছে।

পরিবহনশ্রমিকদের অভিযোগ, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতারা সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় শ্রমিকদের ওপর হামলা করা হয়। অযথা সড়ক অবরোধ ও হামলার প্রতিবাদ এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে সব ধরনের দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এই ধর্মঘট চলবে। এতে জামালপুর-ময়মনসিংহ হয়ে ঢাকা, জামালপুর-টাঙ্গাইল হয়ে ঢাকা রোডের সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।

আজ দুপুর ১২টার দিকে জামালপুরে রাজীব পরিবহনের বাস দুর্ঘটনায় প্রাণহানির প্রতিবাদ ও বাস সার্ভিস সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জামালপুর জেলা শাখার ব্যানারে একদল শিক্ষার্থীরা শহরের বাইপাস এলাকায় জামালপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেন। বেলা ৩টা ২০ মিনিট পর্যন্ত অবরোধ চলে। এ অবরোধের সময় শ্রমিকদের ওপর হামলার অভিযোগ করেছেন পরিবহনশ্রমিকেরা।

বিকেল সাড়ে চারটার দিকে জামালপুর জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজীব পরিবহনের বাস সার্ভিস বন্ধ ও অন্যান্য বাস সার্ভিসের সংস্কারের দাবিতে দীর্ঘসময় সড়ক অবরোধ করেছিলেন তাঁরা (বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী)। শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল মোড়েই তাঁরা সড়কটি অবরোধ করেছিলেন। সড়ক অবরোধের সময় তাঁরা শ্রমিকদের ওপর হামলা করেন। এতে মনির হোসেন নামের একজন শ্রমিক আহত হয়েছেন। শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে ওই ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।’

জামালপুরের বাস দুর্ঘটনায় প্রাণহানির প্রতিবাদে জামালপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার দুপুরে শহরের বাইপাস এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জামালপুর জেলা শাখার সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল আবিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেলার প্রায় সব মানুষের একটি যৌক্তিক দাবি নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি চলছিল। কর্মসূচি চলা কালে প্রশাসন ও পরিবহন সেক্টরের নেতারা কথা বলতে আসেন। উভয় পক্ষের মধ্যে কথাবার্তা হচ্ছিল, এমন সময় একজন শ্রমিক হাতে রড নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করতে দৌড়ে আসেন। তখন আমাদের কয়েকজনও ওই শ্রমিকের দিকে তেড়ে যায়, পরে উভয় পক্ষকে থামিয়ে দেওয়া হয়। এইটুকুই তখন ঘটেছিল। এখন শুনতেছি, তাঁদের (শ্রমিক) ওপর হামলার প্রতিবাদে বাস বন্ধের ঘোষণা করেছেন। কোনো ধরনের হামলার ঘটনায় ঘটেনি। তাহলে কেন এই ধর্মঘট? সত্যি এটাই, আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো তাঁরা মানবেন না। আর যাতে না মানতে হয়, সেই কারণে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে এই ধরনের একটি ধর্মঘট ডেকেছেন।’

জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ফয়সল মো. আতিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে ধর্মঘট প্রত্যাহার করার বিষয়ে শ্রমিক ও মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। শ্রমিক ও মালিকেরা তারাবি নামাজের পর সভা করবেন। ওই সভায় একটি ইতিবাচক ফলাফল আসবে, এমন আশা করছি। আর যদি নেতিবাচক ফলাফল আসে, তখন তাঁদের সঙ্গে আমরা বসব।’

জামালপুর সদর উপজেলায় যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় ইজিবাইকের এক যাত্রী নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ লোকজন বাসে আগুন ধরিয়ে দেন। এর প্রতিবাদে গতকাল রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন পরিবহনশ্রমিকেরা। অন্যদিকে আজ জামালপুরে রাজীব পরিবহনের বাস দুর্ঘটনায় প্রাণহানির প্রতিবাদ ও বাস সার্ভিস সংস্কারের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।