মারধর
প্রতীকী ছবি

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে মাদকাসক্ত চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে এক তরুণকে মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন মিলে জোর করে ওই তরুণকে স্ট্রেচারে শুইয়ে রেখেছেন। আর তাঁকে এক ব্যক্তি লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছেন।

গতকাল সোমবার রাতে পাগলা দক্ষিণ নয়ামাটি নন্দলালপুর এলাকার ‘চাঁদের আলো’ নামের মাদকাসক্তি নিরাময় ও চিকিৎসা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটেছে।

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ওই পুনর্বাসন কেন্দ্রে একটি কক্ষে চারজন মিলে এক তরুণকে স্ট্রেচারে জোর করে শুইয়ে চেপে ধরে রেখেছেন। এ সময় উচ্চ স্বরে গান বাজিয়ে ওই তরুণকে গেঞ্জি ও লুঙ্গি পরা এক ব্যক্তি লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছেন। তিনি ওই তরুণকে গালাগাল করেন। লাঠির আঘাতে ওই তরুণ ‘আল্লাহ, আল্লাহ’ বলে চিৎকার করছিলেন।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভিডিওতে সাদা গেঞ্জি ও লুঙ্গি পরা যে লোককে দেখা গেছে, তিনি ‘চাঁদের আলো’ মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের মালিক আক্তারুজ্জামান পাটোয়ারী। নির্যাতনের শিকার ওই তরুণের চিৎকার যাতে বাইরের লোকজন শুনতে না পান, সে কারণে কক্ষের ভেতরে উচ্চ শব্দে গান বাজানো হচ্ছিল।

ভাইরাল হওয়া ভিডিও সম্পর্কে জানতে চাইলে চাঁদের আলো মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান পাটোয়ারী বলেন, দুই-তিন মাস আগে ওই ভিডিও করা হয়েছে। তাঁর ভাগনে মাদকাসক্ত। তিনি এ নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি নিরাময় কেন্দ্রে থেকে দেয়াল ভেঙে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে মামা হিসেবে তিনি তাঁকে ‘শাসন’ করেছেন। তাঁর অফিসের কেউ হয়তো ওই ভিডিও করে থাকতে পারেন। কে ভিডিওটি করেছেন, সেটি তাঁরা এখনো বের করতে পারেননি। উচ্চ শব্দে গান বাজানোর বিষয়ে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, পাশের কেউ হয়তো গান বাজাচ্ছিল। তাঁর ভাগনে এখন সুস্থ বলে তিনি দাবি করেন।

আক্তারুজ্জামান দাবি করেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন আছে। এখানে ১৮ জন চিকিৎসাধীন আছেন। দুজন মনোবিজ্ঞানী ও একজন আবাসিক চিকিৎসক সহকারী আছেন।

এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরে আযম বলেন, ‘ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি দেখেছি। এ ব্যাপারে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি।’

তরুণকে নির্যাতনের ভাইরাল হওয়া ভিডিও প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ মামুন বলেন, ‘মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেছি। যাঁকে মারধর করা হয়েছে, তাঁর সঙ্গে কথাও বলেছি। তিন মাস আগে ওই তরুণ পোঁতা দিয়ে দরজা ভেঙে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। সিসিটিভি ক্যামেরায় বিষয়টি দেখে তাঁকে ধরে ফেলা হয়। ওই তরুণ এখন ভালো আছেন, তিনি নিরাময় কেন্দ্রে যাওয়া-আসা করেন। তাঁর কোনো অভিযোগ নেই। তবে মাদকাসক্তের চিকিৎসায় কাউকে মারধর করার বিধান নেই। এই ঘটনায় তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’