মাগুরায় সাকিবের বাড়িতে সমর্থকদের ভিড়
মাগুরা–১ (শ্রীপুর ও সদরের একাংশ) আসনে সাকিব আল হাসানকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণার পর তাঁর বাড়িতে সমর্থকেরা ভিড় করছেন। ছোট ছোট মিছিলও দেখা গেছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে সাকিবের বাড়িতে গিয়ে আওয়ামী লীগের উল্লেখযোগ্য কোনো নেতাকে দেখা যায়নি।
মাগুরায় সাকিব আল হাসানের বাড়ি শহরের সাহাপাড়ায়। মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই সাকিবের বাড়িতে ভিড় করতে দেখা যায় সমর্থকদের। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সেখানে সমর্থকদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করতে দেখা গেছে। তাঁরা সাকিবের পক্ষে মিছিল করছিলেন। এ সময় বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকে ছোট মিছিল নিয়ে স্লোগান দিতে দেখা যায়। তবে সাড়ে চারটা থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত সাকিবের বাড়িতে আওয়ামী লীগের স্থানীয় উল্লেখযোগ্য কোনো নেতাকে দেখা যায়নি। উপস্থিত সমর্থকদের বেশির ভাগই ছিলেন সাধারণ মানুষ।
একই সময়ে শহরের জামরুলতলা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে গিয়ে সেটি ফাঁকা দেখা যায়। সেখানে দায়িত্বরত এক ব্যক্তি জানান দলের নেতারা প্রায় সবাই ঢাকায়। সাকিবের মনোনয়ন বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে ফোন করলেও তাঁরা কেউই উত্তর দেননি।
জানতে চাইলে মাগুরা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি বাকি ইমাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দলীয় প্রধান সভানেত্রী শেখ হাসিনা সাকিব আল হাসানকে মনোনয়ন দিয়েছেন। ওনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এটা নিয়ে কর্মীদের মধ্যে কিছু দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকলেও দুই–চার দিনের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরা আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা তাঁর পক্ষেই নির্বাচন করব।’
বর্তমান সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরসহ মোট ১০ জন মাগুরা–১ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। সাকিব আল হাসান রাজনীতিতে নামতে পারেন, এমন গুঞ্জন বেশ কিছুদিন ধরেই ছিল। এর আগে ২০১৮ সালেও তিনি মাগুরা-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কেনার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। অবশ্য শেষ মুহূর্তে নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৮ নভেম্বর সাকিবের একজন প্রতিনিধি মাগুরা–১, মাগুরা–২ ও ঢাকা–১০ আসনে তাঁর নামে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন। এর মধ্যে গত পাঁচ বছরে রাজনীতিতে নামার বিষয়টি অস্পষ্টই রেখেছিলেন সাকিব।
মাগুরা-১ আসনটি সদর উপজেলার একটি পৌরসভা, ৯টি ইউনিয়ন ও শ্রীপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত। বর্তমানে এই আসনের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর। ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ছিলেন। তাঁর বাবা মো. আছাদুজ্জামান মাগুরা-২ আসন থেকে চারবারের সংসদ সদস্য ছিলেন। পুরো মাগুরা জেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তাঁর প্রভাব রয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এবারও মনোনয়ন–দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন তিনিই। তবে শেষ মুহূর্তে সাকিব এসে সব হিসাব–নিকাশ বদলে দিয়েছেন।
সাকিবের মনোনয়ন ফরম কেনার প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় অনেক নেতাই একে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ বলেছিলেন। তাঁদের অনেকেই মনে করেন, গত ১৫ বছরে মাগুরায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন সাইফুজ্জামান শিখর। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ থেকে জেলা আওয়ামী লীগ সব জায়গাতেই তাঁর অনুসারীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এমন পরিস্থিতিতে সাইফুজ্জামান শিখরকে মনোনয়নবঞ্চিত করায় আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যেতে পারেন। তাঁরা বলছেন সাকিব খেলোয়াড় হিসেবে জনপ্রিয় হলেও স্থানীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে তাঁর কখনো কোনো যোগাযোগ ছিল না। আওয়ামী লীগের অন্য একটি অংশ অবশ্য মনে করছে, সাকিবের মতো জনপ্রিয় তারকাকে নিয়ে নির্বাচনী বৈতরণি পার হতে বেগ পেতে হবে না।
সাকিবের পারিবারিক সূত্রে জানা, সাকিবের বাবা খন্দকার মশরুর রেজা একটি ব্যাংকে চাকরি করেন। মা শিরীন আক্তার গৃহিণী।