‘বাজারে গেলে মনে হয় টেহার কোনো দাম নাই, সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে’
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের হাড়িয়াকান্দি মোড়ে ছোট একটি মুদিদোকানে দেখা হলো ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধার সঙ্গে। তিনি ওই দোকানে কেনাকাটা করতে এসেছেন। তবে তাঁর চাহনিতে একধরনের ইতস্তত ভাব। এর মধ্যে সঙ্গে থাকা একটি প্লাস্টিকের ছোট বোতল দোকানির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে ২০ টাকার তেল চাইলেন। তেল কেনার পর বোতলটি শাড়ির আঁচল দিয়ে এমনভাবে ঢেকে রাখলেন, যাতে পাড়ার কেউ দেখতে না পায়। কিছু দূর গিয়ে ওই বৃদ্ধা আবার সেই দোকানে ফিরে এলেন। এবার তিনি দোকানির কাছে ১৫ টাকার হলুদের গুড়া চাইলেন।
দোকান থেকে বের হওয়ার সময় এ প্রতিবেদকের সঙ্গে ওই বৃদ্ধার কথা হয়। জানালেন তাঁর নাম রোকেয়া আক্তার। সামান্য পরিমাণ তেল কেনার বিষয়ে জানতে চাইলে রোকেয়া বলেন, ‘বাবারে, কী করতাম। এক বোতল (এক লিটার) তেল কেনার সাধ্য নেই। সব জিনিসের দাম বাড়তি। বাজারে গেলে মনে হয় টেহার কোনো দাম নাই। সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। ঘরে নগদ টাকা নেই। তাই খোরাকির চাল থেকে দুই কেজি চাল বাজারে বিক্রি করে নগদ টাকা জোগাড় করেছি। ওই টাকা দিয়েই তেল আর হলুদ কিনলাম।’
রোকেয়া আক্তারের স্বামী নেই। তিন ছেলের মধ্যে দুজনই তাঁদের পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকেন। আরেক ছেলে প্রতিবন্ধী। তাঁকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে বাস করেন রোকেয়া। রোকেয়া আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের হাড়িয়াকান্দি গ্রামের মৃত ইমান খাঁর স্ত্রী।
রোকেয়া বেগমের যখন স্বামী বেঁচে ছিলেন, তখন সবকিছু ভালোই চলছিল। স্বামীর মৃত্যুর পর কিছুদিন পর্যন্ত তাঁর রেখে যাওয়া জমি চাষ করে সব খরচ চালিয়েছেন রোকেয়া। সম্প্রতি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় তিনি এখন সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। ঢাকায় অবস্থানরত দুই ছেলে মাঝেমধ্যে তাঁকে কিছু টাকা পাঠান। স্বামীর জমি চাষ করে সামান্য কিছু আয় হয়। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির বাজারে এই আয় দিয়ে আর সংসার চলছে না তাঁর।
রোকেয়া বলেন, ‘শুধু ভাত তো আর গলা দিয়ে নামতে চায় না। কিন্তু এই বাজারে মাছ কেনাও সম্ভব হয়ে ওঠে না। মাংস খাওয়ার চিন্তা তো দূরে থাকল। ঘরে প্রতিবন্ধী ছেলে আছে। তার মুখেও তো খাওন তুলে দিতে হবে। আয়রোজগার আগের মতোই আছে। জমিতে চাষ হচ্ছে। কিন্তু এখন আর সংসার আগের মতো চলছে না। সব জিনিসের দাম বেশি।’
দোকান থেকে বাড়ির পথ ধরার সময় রোকেয়াকে বিড়বিড় করে বলতে শোনা যায়, ‘বাবারে, আগে আমি মাইনষেরে দিতাম; অহন আমার নিজেরই টুহানি লাগে।’