আশুগঞ্জে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতার পক্ষে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনপ্রতীকী ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ ও বাঞ্ছারামপুর—এই দুটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী নয়জনের মধ্যে চারজন আওয়ামী লীগ নেতা ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত এক নেতা আছেন। বাঞ্ছারামপুরে স্থানীয় সংসদ সদস্যের ভাতিজা প্রার্থী হয়েছেন। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সমর্থন চেয়ারম্যান প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল ইসলামের পক্ষে। আর আশুগঞ্জে উপজেলা আওয়ামী লীগ তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে তিন প্রার্থীর পক্ষে মাঠে আছে। তবে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা আবু আসিফ আহমেদের পক্ষে কাজ করছেন।

তৃতীয় ধাপে ২৯ মে আশুগঞ্জ ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতির পদ থেকে বহিষ্কৃত আবু আসিফ আহমেদ (আনারস প্রতীক), উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. হানিফ মুন্সী (দোয়াত কলম), উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জিয়াউল করিম খান (মোটরসাইকেল), জসিম উদ্দিন (হেলিকপ্টার) ও শাহাবুদ্দিন (ঘোড়া) চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন আবু আসিফ আহমেদ। স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় ২০২৩ সালের ১৭ জানুয়ারি আসিফকে দল থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি। পরে ২৭ জানুয়ারি বিকেলে নিখোঁজ হন তিনি। ভোট গ্রহণের পরদিন নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন তিনি।

আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাঞ্ছারামপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য এ বি তাজুল ইসলামের ভাতিজা ছয়ফুল্লাহকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের তিনবারের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামকে (ঘোড়া প্রতীক) সমর্থন দিয়েছেন সংসদ সদস্যসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া নির্বাচনী মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন শাখাওয়াত হোসেন (হেলিকপ্টার) ও এ বি এম আলী কাউসার (মোটরসাইকেল)।

বাঞ্ছারামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় সমর্থনের কারণে সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন বর্তমান চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম। তাঁর পক্ষে আছেন সংসদ সদস্য এ বি তাজুল ইসলামও। দলীয় সিদ্ধান্তে নেতা-কর্মীরা এককাট্টা। উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় শক্তিশালী অবস্থানের কারণে সংসদ সদস্যের ভাতিজাসহ অন্য প্রার্থীরা তেমন সুবিধা করতে পারছেন না।

আশুগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা বলেন, আশুগঞ্জে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা আবু আসিফের সঙ্গে চেয়ারম্যান প্রার্থী আওয়ামী লীগের দুই নেতা মো. হানিফ মুন্সী ও জিয়াউল করিম খানের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ধারণা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে এই তিন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। আনারস প্রতীকের প্রার্থী আবু আসিফের পক্ষ আছেন তাঁর ভাতিজা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নাছের আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ দাউত, যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক জিয়া উদ্দিন খন্দকার, চরতারতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হুমায়ন সরকার, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মারুফ আহম্মেদ ও ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক তানভীর আজাহার।

আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নাসের আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, এটা নির্দলীয় ও উন্মুক্ত নির্বাচন। সবাই যাঁর যাঁর পছন্দের লোকজনের জন্য কাজ করছেন। মাঠে দৌড়াচ্ছেন।

নিজ গ্রাম থেকে প্রার্থী হওয়ায় মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী জিয়াউল করিম খানের পক্ষে কাজ করছেন আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছফিউল্লাহ মিয়া। এ ছাড়া জিয়াউলের পক্ষে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল আহম্মেদ ও ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রিফাত সিকদার। দোয়াত কলম প্রতীকের প্রার্থী হানিফ মুন্সীর পক্ষে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য শাহাজান আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান আনসারী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হান্নান ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের নেতা মজিবুর রহমান।

আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ছফিউল্লাহ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, এটি দলীয় নির্বাচন নয়। আবু আসিফ বিএনপির সাবেক নেতা। আওয়ামী লীগের নেতারাও তাঁকে সমর্থন দিয়েছেন। আসলে এটি গ্রামীণ ব্যাপার। আগের যে চেয়ারম্যান (হানিফ মুন্সী) ছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে আসিফের অবস্থান। আর দলীয় বিষয় চিন্তা করলে জিয়াউল করিমই দলের।

চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মো. হানিফ মুন্সী বলেন, ‘গত নির্বাচনে যখন দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই, তখনো দলের সভাপতি ছাড়া অন্য কেউ আমার পক্ষে ছিলেন না। আবু নাসের আহমেদসহ সবাই বিপক্ষে ছিলেন। আর এখন আঞ্চলিকতার কারণে সবাই যাঁর যাঁর মতো করে কাজ করছেন। আবু নাসের তাঁর চাচা বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত সাবেক নেতার পক্ষে মাঠে নেমেছেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আশুগঞ্জে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা-কর্মী হানিফ মুন্সীর বিরুদ্ধে। কারণ, তাঁর বংশের লোকজনের আধিপত্যের কারণে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। নানা কারণে এই নির্বাচনে বেকায়দায় আছেন হানিফ মুন্সী। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হলেও দলের উল্লেখযোগ্য কেউই তাঁর পক্ষে নেই। এমনকি নিজের গ্রাম চরচারতলার মানুষের পুরোপুরি সমর্থনও পাচ্ছেন না তিনি। গ্রামের কয়েকটি বড় বংশসহ অধিকাংশ মানুষ বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আবু আসিফকে সমর্থন করছেন।