চুয়াডাঙ্গায় তীব্র তাপপ্রবাহ, বিপাকে শ্রমজীবী মানুষ
মৃদু ও মাঝারি তাপপ্রবাহের পর আজ শুক্রবার চলতি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গায় প্রথম তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে চলেছে। আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার বেলা তিনটায় জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। গতকাল বৃহস্পতিবার একই সময়ে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা বেড়েছে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এর আগে ২৮ মার্চ জেলায় এ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওই দিন বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৪০ শতাংশ। আজ আর্দ্রতা ছিল ২৪ শতাংশ।
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে জনজীবনে অস্বস্তি নেমে এসেছে। চরম গরম অনুভূত হওয়ায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। সাধারণ মানুষ ছাতা মাথায় অথবা রিকশায় চলাচল করছেন।
এই গরমে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষেরা। তাপপ্রবাহ থেকে রক্ষা পেতে তাঁরা মাথায় ক্যাপ অথবা গামছা পরে চলাচল করছেন। কৃষিশ্রমিকেরা বাঁশের তৈরি মাথাল মাথায় দিয়ে খেতে কাজ করছেন। তবে একটু পরপরই অনেককেই ক্লান্ত দেহ নিয়ে ছায়ায় বিশ্রাম নিতে দেখা গেছে।
আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব সোহরাব হোসেন (৬৫) প্রায় ৫০ বছর ধরে গামছা বিক্রি করেন। পাড়া-মহল্লায় ফেরি করে বিক্রির পাশাপাশি শহরের বড়বাজার শহীদ হাসান চত্বরে ফুটপাতে বসেও বেচাকেনা করেন। কাঠফাটা রোদের মধ্যেই আজ দুপুরে ফুটপাতে গামছা বিছিয়ে তাঁকে ক্রেতার অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়। মাথায় একটি গামছা দিয়ে বসলেও সমানে ঘামছিলেন। আলাপকালে সোহরাব বলেন, ‘গামছা বিক্রি কইরে চার সদস্যের সংসার চালাতি হয়। আইজ খুবই তাপের দাপট। গরমে গা পুড়ে যাচ্চে। মনডা বলচে না রোদির ভিতরে বসি। প্যাট তো শোনে না।’
জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়িয়া বাজারে কথা হয় ভ্যানচালক আবদুল মজিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গরমে তো ভাই গা ঝলসি যাচ্চে। সংসারের খরচ মিটাতি গিয়ে হিমশিম। শরীলির দিকি তাকাইনোর সুমায় কনে?’
পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, ১৩ মার্চ থেকে চুয়াডাঙ্গায় তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। ওই দিন জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৭ দশমিক ডিগ্রি সেলসিয়াস। পর্যায়ক্রমে ১৬ মার্চ ৩৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৭ মার্চ ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৮ মার্চ ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৯ মার্চ ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৩০ মার্চ ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১ এপ্রিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৩ এপ্রিল ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৫ এপ্রিল ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এভাবে ২৩ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৪ এপ্রিল ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৫ এপ্রিল ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৬ এপ্রিল ৩৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, চলতি মাসের ৭ মে ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং গতকাল ৮ মে ছিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়াবিদেরা জানান, ৩৬ ডিগ্রি থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। এ ছাড়া ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। সে হিসাবে চলতি মৌসুমে জেলায় ১৮ দিন ধরে তাপপ্রবাহ চলছে। এর মধ্যে ১২ দিন মৃদু, ৫ দিন মাঝারি এবং আজ এক দিন তাপমাত্রা তীব্র তাপপ্রবাহের অঙ্ক ছুঁয়েছে জেলায়।
স্থানীয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, সকাল থেকেই আকাশ মেঘমুক্ত পরিষ্কার, কয়েক দিন ধরে বৃষ্টির দেখা নেই। পশ্চিম থেকে গরম হাওয়া প্রবেশ করায় তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। আগামী দুই দিন তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি অব্যাহত থাকবে।
এই গরমে রোগব্যাধি থেকে রক্ষা পেতে কীভাবে চলতে হবে, সে বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস বলেন, তাপপ্রবাহ চলাকালে প্রয়োজনীয় কাজ দিনের প্রথমার্ধে সেরে নিতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের না হওয়াই ভালো। প্রত্যেককেই পানিসহ বেশি বেশি তরল খাবার ও ফলমূল খেতে হবে। ভাজাপোড়া ও চা-কফি এড়িয়ে চলতে হবে। গরমজনিত রোগে আক্রান্ত হলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে।