এক ট্রলারে ধরা পড়ল ৯৯ মণ ইলিশ, বিক্রি ২৩ লাখে

বঙ্গোপসাগরে জেলেদের একটি ট্রলারে ধরা পড়া ৯৯ মণ ইলিশ মাছ নোয়াখালীর হাতিয়ার চেয়ারম্যানঘাটে ২৩ লাখ সাড়ে ২৬ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছেছবি: প্রথম আলো

৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে ৩ দিনে ৯৯ মণ মাছ ধরেছেন একটি মাছ ধরার ট্রলারে (ফিশিং বোট) জেলেরা। আর সেই মাছ গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নোয়াখালীর হাতিয়ার চেয়ারম্যানঘাটে নিলামে বিক্রি হয়েছে ২৩ লাখ ২৬ হাজার ৫০০ টাকায়। মাত্র তিন দিনে বিপুল পরিমাণ মাছ ধরা পড়ায় বোটের মালিক, সারেংসহ জেলেরা মহাখুশি। গতকাল রাতেই বোটের ২১ জেলে আবার মাছ ধরতে সাগরে রওনা হয়েছেন বলে জানা গেছে।

চেয়ারম্যানঘাটের একাধিক জেলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ২৩ জুলাই। এরপর শত শত ট্রলার নিয়ে উপকূলীয় বিভিন্ন জেলার হাজার হাজার জেলে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য পাড়ি জমান। এরই মধ্যে কিছু কিছু ট্রলার মাছ নিয়ে বিভিন্ন ঘাটে ফিরে আসছে। প্রায় প্রতিটি ট্রলারেই বিপুল পরিমাণে মাছ ধরা পড়ছে।

জেলেরা জানান, মঙ্গলবার বিকেলে গভীর সমুদ্র থেকে ট্রলারভর্তি ইলিশ মাছ নিয়ে হাতিয়ার চেয়ারম্যানঘাটে ফেরেন চট্টগ্রামের ফিশারিজ ঘাটের মাসুম সরকারের মা-বাবার দোয়া-৩ নামের একটি ট্রলার। ট্রলার থেকে মাছ নামানো হয় স্থানীয় মেঘনা ফিশিং এজেন্সিতে। এজেন্সির সামনে ত্রিপল পেতে শ্রমিকেরা একে একে টুকরিভর্তি মাছ এনে ফেলেন। একপর্যায়ে ছোট-বড় ইলিশ মাছের বিশাল স্তূপে পরিণত হয় মেঘনা ফিশিং এজেন্সির সামনের খালি জায়গা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্তূপে মাছ ফেলার পাশাপাশি চলে নিলামের ডাক। প্রায় ৩০ মিনিট ধরে চলা নিলামের ডাক এসে ঠেকে প্রতি মণ ২৩ হাজার ৫০০ টাকায়। নিলামের পর স্তূপের মাছ মেপে ৯৯ মণ ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। যার সর্বমোট মূল্য দাঁড়ায় ২৩ লাখ ২৬ হাজার ৫০০ টাকা।

জেলে মনির হোসেন জানান, একটি ট্রলারে একসঙ্গে এত মাছ ধরা পড়ায় এবং মোকামে মাছের ভালো দাম পাওয়ায় বেশ খুশি লাগছে। বেশি মাছ ধরা পড়ায় অন্য জেলেরাও গভীর সমুদ্রে গিয়ে মাছ ধরতে উৎসাহিত হবেন।

মেঘনা ফিশিং এজেন্সির ব্যবস্থাপক মো. হাবিব ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রামের ফিশারিজ ঘাটের মাসুম সরকারের একটি বোট ২১ জেলেকে নিয়ে তিন দিন আগে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়। তারা বিপুল পরিমাণ মাছ ধরে। মুঠোফোনে হাবিব তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মাছ ভালো দামে বিক্রির আশ্বাস দিলে তাঁরা চেয়ারম্যানঘাটে আসে। এখানে নিলামে ট্রলারে থাকা ৯৯ মণ ইলিশ মাছ মণপ্রতি ২৩ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। এতে ট্রলারের মালিক মোট ২৩ লাখ ২৬ হাজার ৫০০ টাকা পান।

হাবিব ভূঁইয়া জানান, ভালো দামে মাছ বিক্রি করতে পেরে বোটের মালিক, সারেং ও জেলে সবাই খুশি। তাঁরা মঙ্গলবার বিকেলে মাছ বিক্রি করে আবার রাতেই মাছ ধরার উদ্দেশে গভীর সমুদ্রে রওনা হয়েছেন। আগামী কিছুদিন সাগরে জেলেদের জালে বেশি পরিমাণ ইলিশ মাছ ধরা পড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন পাইকারি এই মাছ বিক্রেতা।

জেলেদের জালে বিপুল পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ার বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন গভীর সমুদ্রে মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। এর সুফল হিসেবে এখন সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে জেলেরা বেশি পরিমাণ মাছ ধরতে পারছেন। সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে চললে ভবিষ্যতে জেলেদের জালে আরও বেশি বেশি ইলিশসহ বিভিন্ন মাছ ধরা পড়বে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।