ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলায় রুহিয়া এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা। আজ শনিবার বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত চলা এ সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে রুহিয়া থানা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর করে আসবাবপত্র আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষের জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতা-কর্মীরা পরস্পরকে দুষছেন। আওয়ামী লীগের নেতাদের ভাষ্য, বিএনপির মিছিল থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন ও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি পার্থ সারথি সেনের বাসায় হামলা চালালে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। বিএনপি নেতারা বলছেন, পরিকল্পিতভাবে বিএনপির কর্মসূচিতে আসার সময় থানা বিএনপির আহ্বায়ক আনসারুল হকসহ কয়েকজন বিএনপি নেতা-কর্মীর ওপর হামলা চালিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
দুই দলের নেতা-কর্মী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ শনিবার বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয় রুহিয়া থানা বিএনপি। অন্যদিকে ২১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার রায় দ্রুত কার্যকরের দাবিতে মহিলা আওয়ামী লীগ ওই এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি নেয়। বেলা আড়াইটার দিকে রুহিয়া থানা বিএনপির আহ্বায়ক আনসারুল হকের নেতৃত্বে একটি মিছিল রামনাথ হাট থেকে থানা বিএনপির কার্যালয়ের দিকে যাচ্ছিল। পথে সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনের রুহিয়া বাড়ির কাছে পৌঁছালে তাঁদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। এ সময় আনসারুল হক আহত হন। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগে নেতা-কর্মীরা রামনাথ হাটে বিএনপির নেতা-কর্মীদের দোকানপাট, তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
এ ঘটনার পর বেলা তিনটার দিকে থানা বিএনপি কার্যালয়ে সমাবেশ করে বিএনপি। বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সমাবেশে জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমান, জেলা মহিলা দলের সভাপতি ফোরাতুন নাহার প্রমুখ বক্তব্য দেন। সমাবেশ শেষে বিকেল চারটার দিকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।
বিএনপি নেতারা বলছেন, মিছিলটি রুহিয়া-আটোয়ারী সড়ক দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পর রামনাথ থেকে আওয়ামী লীগের কর্মীরা পুলিশি পাহারায় লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিলের দিকে এগিয়ে যান। এ সময় আওয়ামী লীগ-বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। সেখানে আওয়ামী লীগ কর্মীরা দুটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন।
ঘণ্টাখানেক চলা পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পর পুলিশ চারটি কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
রুহিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি পার্থ সারথি সেন প্রথম আলোকে বলেন, মিছিল নিয়ে সমাবেশে যাওয়ার সময় বিএনপি নেতা-কর্মীরা সংসদ সদস্য ও তাঁর বাসায় হামলা চালান। হামলায় থানা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ, থানা ছাত্রলীগের সদস্য মো. মাহিন, ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য মোহাম্মদ হৃদয়সহ ১০ নেতা-কর্মী আহত হন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এ ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সংঘর্ষে থানা বিএনপির আহ্বায়ক আনসারুল হক, জেলা যুবদলের সদস্য মো. বাবু, জেলা যুবদলের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক বেলায়েত হোসেনসহ তাঁদের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে হামলার অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ বিক্ষোভ মিছিল শেষে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, লুটপাট ও মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিয়েছে। বিএনপির থানা কার্যালয় ভাঙচুর করে আগুনে মালামাল পুড়িয়ে দিয়েছে। এলাকার রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট করতেই আওয়ামী লীগের এ হামলা।
রুহিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা বলেন, এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।