১৫ দিন ধরে লঞ্চ চলাচল বন্ধ

গতকাল সোমবার দুপুরে সরেজমিনে নৌকায় ঝুঁকিপূর্ণ পারাপারের দৃশ্য দেখা গেছে। কোনো নৌকার ওপরে ছাউনি নেই। নেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

বালাসী-বাহাদুরাবাদ রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় নৌকায় করে মানুষ পারাপার হচ্ছেন। সোমবার গাইবান্ধার বালাসী ঘাটে
ছবি: প্রথম আলো

বালাসী-বাহাদুরাবাদ রুটে প্রায় ১৫ দিন ধরে লঞ্চ চলাচল বন্ধ। ফলে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার চলছে। নৌকার ওপরে ছাউনি নেই। নেই নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হচ্ছে। এ সুযোগে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়েরও অভিযোগ উঠেছে। লঞ্চমালিকেরা বলছেন, ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্যতা হ্রাসের কারণে ডুবোচরে লঞ্চ আটকে যাচ্ছে।

এপারে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত বালাসী ঘাট। ওপারে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে অবস্থিত বাহাদুরাবাদ ঘাট। গতকাল সোমবার দুপুরে সরেজমিনে নৌকায় ঝুঁকিপূর্ণ পারাপারের দৃশ্য দেখা গেছে। কোনো নৌকার ওপরে ছাউনি নেই। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে দু-এক দিন ছোট লঞ্চ চলাচল করলেও ঈদের পর তা বন্ধ হয়ে গেছে।

বালাসী ঘাটে তিনটি লঞ্চ আছে। ৯ এপ্রিল লঞ্চ সার্ভিস উদ্বোধনের পর একটি লঞ্চ বিকল হয়। বাকি দুটি লঞ্চ প্রায় ১৫ দিন ধরে চলাচল বন্ধ আছে। এতে প্রতিদিন ছোট-বড় ২০-২৫টি নৌকায় যাত্রী পারাপার চলছে।

উদ্বোধনের পর থেকে প্রতিদিন বালাসী ঘাট থেকে সকাল ৯টা ও বেলা ১১টা, ২টা ও বিকেল ৪টায় লঞ্চ ছেড়ে যেত।
আরিফ মিয়া, বালাসী-বাহাদুরাবাদ লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক

এই রুটে প্রায়ই গাইবান্ধা শহরের থানাপাড়ার ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম নিজ জেলা জামালপুর যান। তিনি বলেন, বেশি ভাড়া নেওয়া হলেও নৌকায় নাগরিক সুবিধা নেই। নেই যাত্রীছাউনি কিংবা ছাতার ব্যবস্থা। বর্তমানে প্রখর রোদে পুড়ে যেতে হচ্ছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধ যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

ফুলছড়ির বালাসী গ্রামের ব্যবসায়ী মেহেদী ইসলাম বলেন, এই রুটে লঞ্চ চালু করা হয়েছে। কিন্তু এগুলো পুরোনো ও চলাচলের অনুপযোগী। পানি কমে যাওয়ায় নাব্যতাসংকট দেখা দিয়েছে। ফলে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। তবে নৌকায় বেশি লাভের আশায় ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী তোলা হচ্ছে।

একই গ্রামের জাহেদুল ইসলাম বলেন, ঈদে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেশি। ট্রেনের টিকিট পাওয়া কঠিন। এ কারণে কর্মজীবীরা নৌকার ওপর নির্ভরশীল হয়েছেন। এই সুযোগে জনপ্রতি বাহাদুরাবাদ ঘাট থেকে বালাসী যেতে ২০০-৩৫০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।

বেশি ভাড়ার নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বালাসী ঘাটের ইজারাদার বাদল মিয়া বলেন, ঘাটটি বিআইডব্লিউটিএর কাছ থেকে ইজারা নেওয়া। লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় ঈদের কারণে নৌকায় যাত্রীর চাপ বেড়েছে।

বালাসী-বাহাদুরাবাদ লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আরিফ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, উদ্বোধনের পর থেকে প্রতিদিন বালাসী ঘাট থেকে সকাল ৯টা ও বেলা ১১টা, ২টা ও বিকেল ৪টায় লঞ্চ ছেড়ে যেত।

জনপ্রতি ভাড়া ১২০ টাকা। প্রতিটি লঞ্চ ১৫০-২৫০ আসনবিশিষ্ট। যেতে সময় লাগত পৌনে দুই ঘণ্টা ও আসতে লাগে আড়াই ঘণ্টা। কিন্তু নাব্যতাসংকটের কারণে ৮ জুলাই থেকে নিয়মিত লঞ্চ চালানো যাচ্ছে না। লঞ্চ নিয়মিত চালাতে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের কাছে ড্রেজার চাওয়া হয়েছে। ড্রেজিং ছাড়া এ রুটে লঞ্চ চালানো সম্ভব নয়।