‘মানুষ রাস্তায় নামলে গুম আর ঘরে থাকলে খুন হয়’

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম
ছবি: প্রথম আলো

আজকে দেশে জানমালের নিরাপত্তা বলতে গেলে একেবারেই শেষ হয়ে গেছে। আজকে রাস্তায় যখন মানুষ নামে, একপর্যায়ে তারা গুম হয়ে যায়। যখন ঘরের ভেতরে থাকে, তখন খুন হয়। আজকে বাংলাদেশের ভেতরে নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামালের দাম দিন দিন বেড়েই চলেছে।

সোমবার বিকেলে পঞ্চগড়ের বোদা শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বোদা উপজেলা শাখার আয়োজনে তৃণমূল প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম।

চরমোনাই পীর বলেন, ‘দেশকে স্বাধীন করতে গিয়ে এই দেশের জন্য লাখ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে, পঙ্গু হয়েছে, অনেক মা তাঁর সন্তানকে হারিয়েছেন। মূল তিনটা স্লোগান নিয়ে দেশ স্বাধীন করা হয়েছে। এই তিনটা স্লোগান হলো সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা আর মানবিক মর্যাদা। কিন্তু স্বাধীনতার ৫২ বছর হয়ে গেল, যাদের মাধ্যমে বর্তমানে দেশ চলছে, এদের পরিচালনায় এই দেশের ভেতরে আমরা সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা আর মানবিক মর্যাদার নাম শুনেছি কিন্তু বাস্তবে দেখি নাই। এদের পরিচালনায় সুন্দর বাংলাদেশ তামাম দুনিয়ার মধ্যে পাঁচবার চোরের দিক থেকে ফাস্ট হয়েছে। এটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য কলঙ্কের।’

রেজাউল করিম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে সংবাদমাধ্যমে প্রচার করেছিলেন, “আমি শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা বলছি, আমার কথার ওপর আপনারা আস্থা রাখেন। আপনারা আসেন, আমরা সুন্দর-অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ একটি নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করব।” আমরা তো বুঝি নাই। আমরা তাঁর সুন্দর কথার মাধ্যমে নির্বাচনে গিয়েছিলাম। অন্য বিরোধীরাও নির্বাচনে গেল। কিন্তু নির্বাচনে আমাদের নিয়ে ধোঁকা দিলেন। দিনের ভোট রাতের বাক্সে ঢোকালেন। এখন আবার বলে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন দিব। আপনার বারবার আশ্বাস আমরা দেখেছি। আশ্বাসের মাধ্যমে আমাদের ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে আজকে বাংলাদেশের জনগণের ভোটের অধিকারকে হরণ করে সন্ত্রাসী কায়দায় ক্ষমতা নিয়ে জনগণকে বিভিন্নভাবে নিষ্পেষিত করা হচ্ছে। আজকে বিরোধীদের ওপর জেল–জুলুম, বিভিন্ন মামলা–হামলা চালানো হচ্ছে। আপনারও যদি এই ধরনের জুলুম চালাতে থাকেন বাংলার জমিনে, আপনারাও টিকতে পারবেন না ইনশা আল্লাহ।’

দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে রেজাউল করিম বলেন, ‘যে দেশের মানুষের মধ্যে ৯২ শতাংশ মুসলমান বাস করে, সেই দেশের ভেতরে ইসলামের অবস্থা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে? আজকে পাঠ্যবইয়ের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হলো আমাদের নাকি আল্লাহ সৃষ্টি করেন নাই। আমরা নাকি বানর থেকে সৃষ্টি হয়েছি। এই শিক্ষার মাধ্যমে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নাস্তিক হবে আর এটা আমরা বসে বসে দেখব তা কখনোই হতে পারে না।’

আহমদিয়া সম্প্রদায়ের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘আজকে ইসলামকে ধ্বংস করার বিভিন্ন নীলনকশা তৈরি হয়েছে। তার বাস্তবতা আজকে পঞ্চগড়ের কাদিয়ানি গ্রুপ (আহমদিয়া সম্প্রদায়)। কাদিয়ানিরা মিথ্যা নবী দাবি করে মুসলমান পরিচয়ে মুসলমান সন্তানদের সঙ্গে বেইমান করবে, নাস্তিক বানাবে, তাদের ইমান ধ্বংস করবে এই বিভিন্ন ইসলামবিদ্বেষী চক্রদের নীলনকশা বাংলার জমিনে মুসলমানরা বাস্তবায়ন হতে দিবে না ইনশা আল্লাহ।’

সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা যখন বিরোধী দলে ছিলেন, তখন কিন্তু আপনারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের জন্য এক শ বারেরও ওপরে হরতাল করেছিলেন বাংলাদেশে। আপনারা রাজপথে বাংলাদেশের মানুষকে লগি-বইঠা দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছিলেন। আপনারাই বিভিন্ন সময় বলে থাকেন আমরা উন্নয়ন করেছি, অমুক করেছি তমুক করেছি। তবে উন্নয়ন যদি করেই থাকেন, তাহলে স্বাভাবিকভাবে নির্বাচন দিন, ভোটে তো আপনাদের বাক্স ভরেই যাবে। কিন্তু আসলে আপনারা বুঝছেন আপনারা যে কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছেন, এতে বাংলাদেশের মানুষের রুহু আয় আর যায়। এ জন্য সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে ভয় পাচ্ছেন।’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বোদা উপজেলা শাখার সভাপতি মো. রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রতিনিধি সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলা শাখার সভাপতি আবদুল হাই, সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল্লাহ, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন পঞ্চগড় জেলা শাখার মো. কামরুল হাসান প্রধান প্রমুখ বক্তব্য দেন।