অবরোধ, ককটেল হামলা ‘হয়নি’, মামলা হয়েছে

মাগুরা জেলার মানচিত্র

মাগুরায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে ৩ আগস্ট একটি মামলা করেছে পুলিশ। অভিযোগ, আসামিরা ওই দিন সকাল সাড়ে সাতটায় মাগুরা-ফরিদপুর মহাসড়কে বিক্ষোভের সময় পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে ককটেল ফাটিয়েছে। যদিও বিএনপি নেতারা বলছেন, সেদিন সকালে তাঁদের কোনো কর্মসূচিই ছিল না। স্থানীয় বাসিন্দারাও বিক্ষোভ কিংবা ককটেল বিস্ফোরণের কোনো ঘটনা দেখেনি।

মামলার এজাহারে পুলিশ বলেছে, ঘটনাস্থল থেকে বিএনপির ১০ নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। তবে আটক নেতা–কর্মীদের স্বজন ও বিএনপি নেতারা দাবি করেছেন, তাঁদের আগের দিন রাতে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ।

মামলাটির বাদী সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ছাব্বির হোসেন। অভিযোগের বিষয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আপনারা কাদের কাছে শুনেছেন জানি না। যা ঘটেছে, সেই অনুযায়ী মামলা হয়েছে। আর আসামিদের ঘটনাস্থল থেকেই আটক করা হয়েছে।’

মামলায় বিএনপির ৪৮ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পিকুল খান, সদর বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন, জেলা যুবদলের সভাপতি ওয়াসিকুর রহমান, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আবদুর রহীম, সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফয়সাল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আশারাফুজ্জামান উল্লেখযোগ্য।

আরও পড়ুন

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে শহরের ভায়ানার মোড়ে টহল দিচ্ছিলেন বাদীসহ পুলিশের একটি দল। তাঁরা জানতে পারেন, বিক্ষোভ করার জন্য বিএনপির নেতা-কর্মীরা পারনান্দুয়ালী ব্যাপারীপাড়া জামে মসজিদের পূর্ব পাশে মাগুরা-ফরিদপুর মহাসড়কে ব্যারিকেড দিয়ে দেশি অস্ত্র, বোমা, লাঠিসোঁটা, রড ও ইটপাটকেল নিয়ে জড়ো হয়েছেন। পুলিশের দলটি সকাল সাড়ে সাতটায় ঘটনাস্থলে যায়। তখন নেতা–কর্মীরা পুলিশকে হত্যা ও গাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে দুটি ককটেল ছোড়েন। সেই ককটেল লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে মহাসড়কে বিস্ফোরিত হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১০ জনকে আটক করে। ।

ওই মসজিদের পাশের চা–দোকানি সালমান ফরাসি বলেন, তিনি বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টার দিকে দোকান খোলেন। এরপর দুপুর পর্যন্ত আশপাশে কোনো সমাবেশ দেখেননি। ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেনি। মসজিদের উল্টো দিকে খাবার হোটেল চালান মো. জালাল উদ্দিন। তিনি ভোর পাঁচটায় দোকান খোলেন। তিনি বলেন, ফজরের নামাজের সময় পুলিশের একটি গাড়ি আসে। মসজিদের উল্টো দিকে মহাসড়কের পাশে একটি বাড়ির নিচে তারা সারা দিন বসেছিল। এর মধ্যে তাঁরা সেখানে কোনো সভা-সমাবেশ হতে দেখেননি। স্থানীয় আরও কয়েকজন বাসিন্দা একই কথা জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন

পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার অন্তত তিনজনের স্বজনেরা বলেছেন, তাঁদের ভিন্ন ভিন্ন এলাকা থেকে আটক করা হয়। মামলার ১ নম্বর আসামি ফয়সাল রুমনের স্বজনেরা বলেন, পুলিশ তাঁকে বুধবার বিকেল পাঁচটার দিকে ভায়নায় নিজেদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে আটক করে। ৩ নম্বর আসামি ধলা মোল্যার পুত্রবধূ জান্নাতি বেগম বলেন, ‘বুধবার রাত দুইটার দিকে বাড়ি থেকে আমার শ্বশুরকে নিয়ে যায় পুলিশ। কেন আটক করা হয়েছে, সে বিষয়ে পুলিশ কিছু বলেনি।’

৫ নম্বর আসামি গোলাম মোস্তফা কাজী ছেলে মাহমুদুল হাসানও একই দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘বুধবার রাত আড়াইটার দিকে বাবাকে ধরে নিয়ে যায়। আমার বাবা এখন কোনো দলের রাজনীতির সঙ্গেই যুক্ত নন। তিনি কিছুই করেননি।’

জেলা বিএনপির নেতারা বলছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জুবাইদা রহমানকে কারাদণ্ড দেওয়ার প্রতিবাদে বুধবার বিকেলে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা সদর হাসপাতালের সামনে থেকে পিটিআই স্কুল পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন। পুলিশ মিছিলের সঙ্গে ছিল। পুলিশের উপস্থিতিতে পরদিন বিকেলে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। বৃহস্পতিবার সকালে মাগুরায় কোনো কর্মসূচি হয়নি।

আরও পড়ুন

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সেকেন্দার আলী বলেন, সবাইকে ঘটনাস্থল থেকেই আটক করা হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ সঠিক নয়।

জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, পুলিশ যাঁদের ঘটনাস্থল থেকে আটকের কথা বলছে, তাঁদের আসলে যাঁর যাঁর বাড়ি থেকে আটক করেছে। তিনি বলেন, পুলিশ আগেও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীর নামে এমন মামলা করেছে।

জেলা বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিভাগীয় সমাবেশ কেন্দ্র করে নেতা–কর্মীদের হয়রানি করতে এমন আরও তিনটি মামলা দেওয়া হয়। ঢাকায় সমাবেশে যাওয়া ঠেকাতে মামলাগুলো দেওয়া হয়েছিল। যে অভিযোগে মামলাগুলো দেওয়া হয়েছিল, তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগের চার মাসে বিএনপি নেতা–কর্মীদের নামে সদর থানায় পাঁচটি, শালিখা ও শ্রীপুরে একটি করে এবং মহম্মদপুর থানায় দুটি ‘গায়েবি’ মামলা হয়। এর মধ্যে দুটি বাদে সাতটি মামলায় পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। এই সাতটি মামলার দুটির বাদী ছিল পুলিশ। বাকি মামলার বাদীরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলেও কোনো মামলাতেই বাদী নারাজি দেননি।