জরাজীর্ণ ঘরে কষ্টে বসবাস

বসবাসকারী সবাই দিনমজুর। অর্থের অভাবে ঘরগুলো মেরামত করতে পারছেন না তাঁরা। ইতিমধ্যে কয়েকজন ঘর ছেড়ে দিয়েছেন।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো মেরামত না করায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। টিনে মরিচা পড়ায় ‍বৃষ্টি হলে ঘরের ভেতরে পানি পড়ে। মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার মির্জাপুর নিন্দাপাড়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ঘরের টিনের চালে মরিচা ধরে কিছু জায়গায় ছিদ্র হয়ে গেছে। বেড়ার টিন, কাঠ, টিনের দরজা ও জানালাও জরাজীর্ণ। ভেঙে পড়তে পারে যেকোনো সময়। এমনই করুণ অবস্থা মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার সিংজুরী ইউনিয়নের মির্জাপুর নিন্দাপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোর। এসব ঘরে বসবাসে কষ্টের শেষ নেই বাসিন্দাদের।

গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, পাঁচটি ব্যারাকের প্রায় সব কটি কক্ষই জরাজীর্ণ। বৃষ্টির পানি ও শীতের কুয়াশা ঠেকাতে কেউ কেউ টিনের চালের নিচে পলিথিন টাঙিয়েছেন।

ব্যারাকের পাঁচটি নলকূপের তিনটিই অকেজো হয়ে পড়েছে। দুটি নলকূপ নিজেদের অর্থে মেরামত করে ব্যবহার করছেন বাসিন্দারা। শৌচাগারগুলোও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বাসিন্দাদের কেউ কেউ পলিথিনের বেড়া দিয়ে শৌচাগার বানিয়ে ব্যবহার করছেন।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের প্রবীণ বাসিন্দা মোতালেব আলী (৬৫) বলেন, মেরামতের অভাবে ঘরগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি এলেই ঘরের ভেতরে পানি পড়ে। আর্থিক সংকটে নিজ উদ্যোগে মেরামত করতে পারছেন না বাসিন্দারা। প্রকল্পের ঘর নির্মাণের পর সেখানে বসবাস করে আসছেন মনোয়ারা বেগম। তিনি বলেন, ‘ঘরের ভেতরে বৃষ্টির পানি পড়ে। পলিথিন টানাইছি, তাতেও কাজ হয় না। রাতের বেলা বৃষ্টি অইলে বসে জেগে থাকতে হয়।’

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯-১০ অর্থবছরে সরকারি অর্থায়নে সিংজুরী ইউনিয়নের মির্জাপুর নিন্দাপাড়া এলাকায় কালীগঙ্গা নদীর পাশে ২ একর জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয়। প্রকল্পে টিনের তৈরি পাঁচটি ব্যারাক রয়েছে। প্রতিটি ব্যারাকে ১০টি ছোট কক্ষ রয়েছে।

প্রতিটি কক্ষের এক পাশে রয়েছে বারান্দা, অপর পাশে রয়েছে রান্নার ব্যবস্থা।একেকটি ভূমিহীন পরিবারকে একেকটি কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। বিশুদ্ধ পানি পান ও ব্যবহারের জন্য প্রতিটি ব্যারাকের বাসিন্দাদের একটি করে অগভীর নলকূপ দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রতি পাঁচটি পরিবারের জন্য দুটি শৌচাগার ও একটি গোসলখানা নির্মাণ করে দেওয়া হয়।

এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের ভোগান্তির বিষয়টি তুলে ধরেন সিংজুরী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আসাদুর রহমান। তিনি বলেন, বৃষ্টি এলেই প্রতিটি কক্ষে পানি পড়ে। শৌচাগারগুলোও ব্যবহার অনুপযোগী।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা একেবারেই হতদরিদ্র। নুন আনতে পান্তা ফুরানো অবস্থা বাসিন্দাদের পক্ষে ঘরগুলো মেরামত করা সম্ভব নয়। সরকারি অনুদানে ঘরগুলো মেরামত করা গেলে এ আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ কমবে।

কক্ষগুলো এত ছোট যে একটি কক্ষে তিনজনের বেশি বসবাস করা কঠিন। বসবাসকারীরা জানান, উপায় না পেয়ে তাঁদের এসব ঘরে বসবাস করতে হচ্ছে। এখানকার সবাই দিনমজুর। অর্থের অভাবে কক্ষগুলো মেরামত করতে পারছেন না তাঁরা। ৫০টি কক্ষের মধ্যে ১০টি বেশির ভাগ সময় খালি পড়ে থাকে। বসবাসকারীরা অন্যত্র চলে গেছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হামিদুর রহমান জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের জায়গা ও ঘরগুলোর মালিক বাসিন্দারাই। তাঁদেরই ঘর মেরামত করার কথা। এরপরও এ বিষয়ে সরকারি অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলে ঘরগুলো মেরামত করার আশ্বাস দেন তিনি।

এ প্রকল্পে স্বামীহারা বাসিন্দা জ্যোৎস্না বেগম (৬০) বলেন, ‘নদীভাঙনে বাড়িঘর হারিয়ে আশ্রয়ণে আশ্রয় নিছি। টিনের চালা ফুটা হওয়ায় বৃষ্টির পানি ও কুয়াশা পড়ে। টিউবওয়েলও নষ্ট। পাশের নদী থেইক্যা পানি আইনা রান্নাবান্না করি। কষ্টের মধ্যে থাকলেও এইখানে আশ্রয় হয়েছে। এহন এইহানে ঘরও ভাইঙা পড়ার দশা, আমাগো যাওনের জায়গা নাই।’