‘হেনী কলেজের টেঁয়া লই...চইলত নঅ’ স্লোগানটি কেন আবার প্রাসঙ্গিক

শতবর্ষ পেরোনো ফেনী সরকারি কলেজের পুরোনো স্লোগান আবার ফিরে এসেছে শিক্ষার্থীদের মুখে। তবে এবার হাস্যরস নয়, ক্ষোভ থেকে। এক দশকের অনিয়ম-দুর্নীতিতে কলেজের তহবিল ঘাটতি তৈরি হয়েছে। সেই ঘাটতি পূরণে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে বাড়তি ফি।

ফেনী সরকারি কলেজ। সম্প্রতি তোলাপ্রথম আলো

ফেনী কলেজের ফটক দিয়ে ঢুকতেই লম্বা মাঠ। মাঠের একদিকে অনার্স ভবনের পাশে আড্ডা দিচ্ছিলেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। সম্প্রতি কলেজটির শিক্ষার্থীদের ফি বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ-অসন্তোষের বিষয়টি জানতেই কলেজে আসা। আড্ডারত শিক্ষার্থীদের কাছে ফি বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করলে একজন বললেন, ‘আমাদের কলেজের একটি স্লোগান নিয়ে সবাই হাসাহাসি করে। কিন্তু এখন এটাই আমাদের বাস্তবতা। দীর্ঘ দিনের লুটপাটের কারণে কলেজের ফান্ডের (তহবিল) অবস্থা খারাপ। তাই বাড়তি ফি চাপানো হয়েছে শিক্ষার্থীদের ওপর।’

‘হেনী কলেজের টেঁয়া লই চুদুরবুদুর চইলতো নঅ’— জনপ্রিয় এই স্লোগানটি কথা শেষে যোগ করে কিছুক্ষণ হাসলেন মুহাইমিন তাজিম নামের ওই তরুণ। বাংলা একাডেমির ‘বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান’ অনুযায়ী, চুদুরবুদুর শব্দের অর্থ বাড়াবাড়ি বা গড়িমসি।

কলেজটির গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মুহাইমিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কও। তাঁর কথার সঙ্গে একমত হলেন সেখানে বসে থাকা কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তাঁদের কথা, ফেনী কলেজের নানা অনিয়ম দুর্নীতি সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় স্লোগানটি আবারও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর ফেনী কলেজে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ হয়। তাঁরা জানালেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নানা খাতে দুর্নীতির কারণে বর্তমান শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি ফি এর বোঝা চেপেছে। লুটপাটের কারণে কলেজের তহবিল সংকট পূরণ করতে বর্তমান অধ্যক্ষ শিক্ষার্থী প্রতি নতুন করে ১০০ টাকা ফি বাড়িয়েছেন।

কলেজটিতে চলতি বছর ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার্থীর শাখায় ছাত্রদের ২ হাজার ৬৮০ টাকা, ছাত্রীদের ২ হাজার ৫৬০ টাকা এবং বিজ্ঞান শাখার ছাত্রদের ২ হাজার ৭৮০ ও ছাত্রীদের ২ হাজার ৬৬০ টাকা হারে ফি দিয়ে ভর্তি হতে হয়েছে। বিগত বছরের এই ফি ১০০ টাকা বেশি।

ফি বৃদ্ধির যে কারণ দেখাল কর্তৃপক্ষ

চলতি বছরের ১০ এপ্রিল কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের ফি বৃদ্ধি করা হয়। সভায় ‘অত্যাবশ্যকীয় নিরাপত্তা ফান্ড’ ৬৫০ টাকা স্থলে ৭৫০ টাকা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, কলেজের কর্মচারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বেতন ও বোনাস মিলিয়ে কর্মচারীদের পেছনে বছরে ব্যয় হয় ৭১ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। এই খাতে নতুন আরও আটজন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়ায় বছর শেষে খরচ দাঁড়াচ্ছে ৭৩ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বেতন-বোনাস ছাড়াও এই খাত থেকে টাকা ব্যয় করা হয় ভূমিসংক্রান্ত মামলার উকিলের ফি, কলেজ আঙিনার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায়। গড়ে বছরে ব্যয় দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৮০ লাখ টাকা। কিন্তু এই খাতে শিক্ষার্থীদের থেকে বছরে আদায় হচ্ছে ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

ফেনী কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আবু হেনা আবদুল আউয়ালের সঙ্গে কলেজের নানা অনিয়ম নিয়ে কথা হচ্ছিল। তিনি বলেন, ফেনী কলেজ নিয়ে জনপ্রিয় হওয়া স্লোগানের একটা ইতিহাস আছে। ১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় স্থানান্তরিত হয়। সেখানকার স্থানীয় কিছু ব্যক্তির সঙ্গে কলেজের অর্থ নিয়ে বিবাদ তৈরি হলে ছাত্ররা এমন স্লোগান দেয়। আর্থিক অনিয়মের প্রতিবাদ থেকেই এই স্লোগানের জন্ম। এই পরিস্থিতিতে স্লোগানটি ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

উৎসব-অনুষ্ঠানের অতিরিক্ত ব্যয়

কলেজের বিবিধ খাতের টাকা থেকে উৎসব ও অনুষ্ঠানের আয়োজনের বিধান থাকলেও নিরাপত্তা খাত থেকে টাকা নিয়ে উৎসবে খরচ করা হয়েছে। কলেজের নথিপত্র বিশ্লেষণ করে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ব্যয় করা হয় ১ লাখ ৩৮ হাজার ৪২৮ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২ লাখ ২০ হাজার ৩০৪ টাকা। তবে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর ব্যয় কমেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই খাতে ব্যয় হয় ৪৮ হাজার ১৫৪ টাকা।

২০২৪ সালে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে ব্যয় হয় ৪৮ হাজার ১৫৪ টাকা। তার আগের দুই বছর ২০২৩ সালে হয় ১ লাখ ২৯ হাজার ৯০৬ টাকা। ২০২২ সালে হয় ১ লাখ ১৪ হাজার ৮১১ টাকা।

বিগত কয়েক বছরে সরকারি দিবস কিংবা উৎসবে অস্বাভাবিক এমন খরচের পেছনে দুর্নীতিই মূল কারণ বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছেন। কলেজের একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী জানান, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস কিংবা শহীদ দিবস দিবসগুলো সরকারি ছুটি হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি তেমন থাকত না। রোভার স্কাউট, বিএনসিসি, অনুষ্ঠানের বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মচারীসহ সব মিলিয়ে গড়ে উপস্থিতি থাকত দুই শতাধিক। এত অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য খরচ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক বলে মনে করেন তাঁরা।

শতবর্ষ পুরোনো এই কলেজে বিভিন্ন বিভাগে ১৮ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। ফি বৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ রয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে
ছবি: প্রথম আলো

একইভাবে বেশি খরচ দেখানো হয়েছে বার্ষিক মিলাদ মাহফিলেও। কলেজের হিসাব বিভাগ সূত্র জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বার্ষিক মিলাদ খাতে ব্যয় দেখানো হয় ৪ লাখ ৭০ হাজার ৪০০ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৪ লাখ ৭৩ হাজার ২২২ টাকা। অথচ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই খাতে ব্যয় হয় ১ লাখ ৬৭ হাজার ৩০০ টাকা।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, প্রতিবছর গড়ে বার্ষিক মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেয় ৬০০ থেকে ৭০০ শিক্ষার্থী। শিক্ষক ও অন্যান্য মিলে ৮০০ জনের আপ্যায়নের আয়োজন হয়। জনপ্রতি ৬০ টাকা ধরলে খাবারের পেছনে খরচ পারে প্রায় ৪৮ থেকে ৫০ হাজার টাকা। সাউন্ড সিস্টেম, ব্যানার ও অন্যান্য খরচ মিলে বড় জোর হতে পারে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। সেখানে প্রায় পৌনে ৫ লাখ টাকা করে পরপর দুইবার খরচ দেখানো হয়েছে। এত টাকা কীভাবে খরচ হয়েছে কখনো জানতে চায়নি তৎকালীন একাডেমিক কাউন্সিল। এমনটাই নিশ্চিত করেছেন একাধিক শিক্ষক।

কলেজের বার্ষিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৬ লাখ ৯০ হাজার ৯৮০ টাকা। পরের বছর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা আরও বেড়ে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৮ লাখ ৮৪ হাজার ২০ টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে একই খাতে ব্যয় হয়েছে আগের বছরের অর্ধেক, ৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকা।

সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা বলেন, পুরস্কারে বেশির ভাগ সময় বই ও সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী বিভিন্ন ইভেন্টে প্রতিবছর ১২০-১৩০ জনকে পুরস্কৃত করলে জনপ্রতি ৪০০ টাকা করে ধরলেও পুরস্কার আসার কথা ৫২ হাজার টাকা এবং সাউন্ড সিস্টেম, অনুষ্ঠান আয়োজনসহ অর্থ ব্যয় হওয়ার কথা ১ থেকে দেড় লাখ টাকা। সেখানে ব্যয় করা হয়েছে ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি।

নালার অস্তিত্ব নেই, সংস্কারে ব্যয় ১২ লাখ টাকা

কলেজের একাডেমিক ভবনের পেছনে নালা নির্মাণ ও মেরামতের ব্যয় দেখানো হয় প্রায় ১২ লাখ টাকা। কাগজে-কলমে খাত দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হলেও সরেজমিন পরিদর্শনে নালার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, ২০২৩ সালে নালা নির্মাণের নামে প্রথম দফায় ৫ লাখ ৮৬ হাজার ২৬২ টাকা এবং একই বছরের দ্বিতীয় দফায় ওই প্রকল্প দেখিয়ে ৫ লাখ ৯৭ হাজার ১৭১ টাকাসহ মোট ১১ লাখ ৮৩ হাজার ৪৩৩ টাকা লোপাট করা হয়।

অভিযোগের এই বিষয়ে জানতে তৎকালীন অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ মোক্তার হোসাইন সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি অবসরে চলে গেছি। এসব বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।’

২ প্রকল্পে খরচ ১০ লাখ

২০১৭ সালে কলেজের কলা ভবনের সামনে বিপন্ন উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্নার নামে একটি বাগান তৈরি করেন তৎকালীন অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আবুল কালাম আজাদ। সেখানে ব্যয় দেখানো হয়েছে সাড়ে ৭ লাখ টাকা। সরেজমিন দেখা গেছে, মহা নিম, দেশি গাব, বাসক, উদালসহ ১০-১২টি বিরল গাছ রোপণ করা হয়। অন্যদিকে কলেজের অনার্স ভবনের নিচতলায় বিশেষায়িত চাইল্ড কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হলেও কখনো খোলা হয়নি বলে জানা গেছে। ২০২২ সালে মে মাসে এটি উদ্বোধন করেন। এই নামফলক লাগিয়েই প্রকল্পে খরচ দেখানো হয় প্রায় ৩ লাখ টাকা।

কলেজের একাডেমিক ভবনের পেছনে নালা নির্মাণ ও মেরামতের ব্যয় দেখানো হয় প্রায় ১২ লাখ টাকা। কাগজে-কলমে খাত দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হলেও সরেজমিন পরিদর্শনে নালার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

মেয়াদ শেষেও কলেজছাত্র সংসদের নামে টাকা উত্তোলন

২০১৯ সালের ৯ এপ্রিলে দীর্ঘ ২৭ বছর পর ফেনী সরকারি কলেজছাত্র সংসদ (ফেকসু) নির্বাচন করা হয়। সেই সময়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় ওই বছরের ৩০ মার্চ কলেজ ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি তোফায়েল আহমেদ তপু ভিপি পদে ও রবিউল হক ভূঞা রবিন জিএস পদসহ ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) একক প্যানেল একতরফা নির্বাচিত হয়। এক বছরের মেয়াদ শেষ হলেও বছর বছর ফেকসুর নামে টাকা উত্তোলন করা হয়। এ নিয়ে অডিটে আপত্তিও তোলা হয়েছিল।

কলেজ-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২০ সালে ফেকসুর মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তবে ২০২২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ৭৩ হাজার ৮০০ টাকা এবং একই বছরের ১০ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে ৯৭ হাজার টাকা খরচ দেখিয়ে উত্তোলন করা হয়। এ টাকা উত্তরণের সঙ্গে তৎকালীন অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের একটি সিন্ডিকেট জড়িত রয়েছে বলে একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।

ফেনী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি কলেজের স্নাতকোত্তর বর্ষের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল হালিম বলেন, পূর্বের অনেক অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের সিন্ডিকেট কলেজ ফান্ডের অর্থ তছরুপের সঙ্গে জড়িত থাকলেও বর্তমান অধ্যক্ষ অনেকগুলো খাতে নতুন করে টাকা বাড়িয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে ফেকসুর কার্যক্রম বন্ধ। কিন্তু সেই খাতেও অর্থ উত্তোলন করা হচ্ছে। উত্তোলনকৃত অর্থগুলো কোথায় যাচ্ছে এটির সঠিক তথ্য শিক্ষার্থীরা জানতে চায়। একই সঙ্গে ফেকসুর নির্বাচন দিয়ে এর কার্যক্রম গতিশীল করা প্রয়োজন।

দুর্নীতি অনিয়মের পাশাপাশি শিক্ষকসংকট

বর্তমানে ফেনী সরকারি কলেজে একাদশ, দ্বাদশ, স্নাতক, স্নাতক (সম্মান), স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ১৮ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। কলেজটিতে বর্তমানে ১৫টি বিভাগ চালু রয়েছে। এসব বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্বে বর্তমানে ৬৯ জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছে। কলেজটিতে শিক্ষকের পদ রয়েছে ১৮০ জন। এর মধ্যে ১১১টি পদ শূন্য। অর্থাৎ অর্ধেকেরও বেশি শিক্ষক নেই। এই অবস্থায় পাঠদান চালিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মরত শিক্ষকেরা।

ফেনী সরকারি কলেজশিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. জহির উদ্দিন বলেন, কলেজের শিক্ষকের ১১১টি পদ খালি থাকায় কর্মরত শিক্ষকদের শিক্ষাকার্যক্রম চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে। শূন্যপদগুলো পূরণে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া জরুরি হলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

ফেনী কলেজের অনার্স ভবন। সম্প্রতি তোলা
প্রথম আলো

যা বলছেন অধ্যক্ষ

ফেনী সরকারি কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ মোহাম্মদ এনামুল হক খোন্দকারের দাবি তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধ করেছেন। ব্যয় কমিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর কলেজের টাকা অপচয় রোধে অনেক খাতে ব্যয় কমিয়েছি। অপ্রয়োজনে কোনো টাকা আমার হাত দিয়ে খরচ হবে না। অতিরিক্ত ব্যয় সংকোচন করায় অনৈতিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত শিক্ষকদের একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।’

কলেজটির দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা জরুরি বলে মনে করেন ফেনী জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। যেসব শিক্ষক, কর্মচারী, সরকারি কর্মকর্তা শিক্ষার্থীদের টাকা লুটপাটের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

আগের অধ্যক্ষদের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয় জানতে চাইলে বর্তমান অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ এনামুল হক খোন্দকার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেছেন, কলেজের বিভিন্ন খাতের টাকা থেকে আগের অধ্যক্ষরা অনিয়ম করায় তহবিল-সংকটে নতুন করে শিক্ষার্থীদের ওপর কিছু ফি আরোপ করা হয়েছে, যা তহবিল পূর্ণ হয়ে গেলে অতিরিক্ত বন্ধ করা হবে।

ফেনী কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আবু হেনা আবদুল আউয়ালের সঙ্গে কলেজের নানা অনিয়ম নিয়ে কথা হচ্ছিল। তিনি বলেন, ফেনী কলেজ নিয়ে জনপ্রিয় হওয়া স্লোগানের একটা ইতিহাস আছে। ১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় স্থানান্তরিত হয়। সেখানকার স্থানীয় কিছু ব্যক্তির সঙ্গে কলেজের অর্থ নিয়ে বিবাদ তৈরি হলে ছাত্ররা এমন স্লোগান দেয়। আর্থিক অনিয়মের প্রতিবাদ থেকেই এই স্লোগানের জন্ম। এই পরিস্থিতিতে স্লোগানটি ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।