এসএসসি পরীক্ষার ফল, ৫ শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার
এসএসসি পরীক্ষায় প্রত্যাশিত ফল না পাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন জেলায় চার শিক্ষার্থীর ‘ঝুলন্ত লাশ’ উদ্ধার করা হয়েছে। আর ‘কীটনাশক পানের পর’ একজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ফলাফল প্রকাশের পর হবিগঞ্জের মাধবপুর, বগুড়ার শেরপুর, কুমিল্লার বুড়িচং, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী ও দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলা থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার নজরপুর গ্রামে নিজ বাড়ি থেকে ফারজানা আক্তার (১৬) নামের এক ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সে ওই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেমের মেয়ে এবং স্থানীয় গোবিন্দপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।
স্বজনেরা জানান, আজ দুপুরে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর ফারজানা জানতে পারে, সে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। এরপর মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। বিকেলে বারান্দায় গলায় ফাঁস দিয়ে সে ‘আত্মহত্যা’ করে।
মাধবপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কবির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে বগুড়ার শেরপুরে সুমাইয়া আক্তার (১৭) নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রত্যাশিত ফল না পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে বাড়ির সবার অগোচরে শোবার ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে সে ‘আত্মহত্যা’ করেছে বলে স্বজনেরা জানিয়েছেন। সুমাইয়া শেরপুরের পল্লী উন্নয়ন একাডেমির ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। তাদের বাড়ি উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নের মাদ্রাসাপাড়া গ্রামে।
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফল প্রকাশের পর সুমাইয়া কাঁদতে কাঁদতে মাকে জানায়—সে গণিতে এ প্লাস পায়নি। এ কারণে পরীক্ষার ফলাফলে এ গ্রেড পেয়েছে। এরপর সে নিজের ঘরে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর মা দুপুরের খাবারের জন্য ডাকতে গিয়ে ঘরের সিলিং ফ্যানে তাকে ঝুলতে দেখেন। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে পুলিশ হাসপাতাল থেকে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
শেরপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে ‘আত্মহত্যা’ বলে ধারণা করা হচ্ছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের ইছাপুরা গ্রামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সে উপজেলার ভরাসার বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। স্বজনেরা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে ফলাফল প্রকাশের পর মেয়েটি জানতে পারে, সে দুই বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে। এতে সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। পরে সে ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস দিয়ে ‘আত্মহত্যা’ করে।
মেয়েটির দাদা বলেন, ‘আমার ছেলে প্রবাসে থাকে। পরীক্ষায় ফেল করার খবর শুনে আমার নাতনি আত্মহত্যা করেছে। আমার ছেলে তার মেয়ের এমন মৃত্যুর খবর শুনে প্রবাস থেকে দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিয়েছে।’
বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজিজুল হক বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে বলা যাচ্ছে। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় মিতু আকতার নামের এক শিক্ষার্থীর ‘ঝুলন্ত লাশ’ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার বাড়ি উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের দোগাছি ক্ষিরাপুকুর গ্রামে। মিতু আকতার বালিয়াডাঙ্গী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষা দিয়েছিল। গণিত, উচ্চতর গণিত ও রসায়ন বিষয়ে সে অকৃতকার্য হয়।
স্বজনেরা জানান, আজ দুপুরে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের সময় বাড়িতে একা ছিল মিতু। নিজের মোবাইলে ফল দেখার পর শোবার ঘরে গিয়ে গলায় ফাঁস দেয় সে। মিতুর ছোট ভাই ঘরের দরজা বন্ধ দেখে দৌড়ে খেতে গিয়ে মা–বাবাকে খবর দেয়। পরে ঘরের দরজা ভেঙে মিতুকে উদ্ধার করে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মিতুর বাবা রুহুল আমিন বলেন, ‘ফল প্রকাশের আগের দিন মেয়েকে বুঝিয়েছিলাম। মেয়ে নিজেই বলল, কোনো সমস্যা নেই। আমরা সবাই খেতে কাজ করছিলাম। নিজেই ফলাফল দেখে এমন কাজ করবে, আমরা ভাবতেই পারিনি।’
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে রিতা মণি (১৬) নামের এক কিশোরীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধায় উপজেলার ৭ নম্বর দাউদপুর ইউনিয়নের আখিরা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। রিতা মণি উপজেলার দাউদপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। সে এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে বলে জানিয়েছে পরিবার।
নিহত ব্যক্তির পরিবারের বরাতে পুলিশ জানায়, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বাড়িতে কীটনাশক পান করে। পরে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে রিতা মণির মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল মতিন প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, হবিগঞ্জ, প্রতিনিধি, ঠাকুরগাঁও, কুমিল্লা, শেরপুর, বগুড়া ও বিরামপুর, দিনাজপুর]