ফেসবুক মন্তব্যে ‘তেলবাজ’ বলায় হাতিয়ায় হামলা, সংঘর্ষ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ

নোয়াখালী জেলার মানচিত্র

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় ফেসবুকের পোস্টকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বর্তমান ও সাবেক দুই সদস্যের অনুসারীদের মধ্যে দফায় দফায় হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ইউপির সাবেক সদস্যের বাড়িতে হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া দুটি মোটরসাইকেল ও মূল্যবান মালামাল লুটপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার জাহাজমারা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিরবিরি গ্রামের ইউপির সাবেক সদস্য (মেম্বার) জসিম উদ্দিনের বাড়িতে এই হামলার ঘটনা ঘটে।

এর আগে গত মঙ্গলবার দুপুর থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত জাহাজমারা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপির বর্তমান সদস্য (মেম্বার) মিরাজ উদ্দিন ও সাবেক সদস্য জসিম উদ্দিনের অনুসারীদের মধ্যে উপজেলার সেন্টার বাজারে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে জাহাজমারা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপির বর্তমান সদস্য মিরাজ উদ্দিন ও ইউপির সাবেক সদস্য জসিম উদ্দিন পক্ষের অন্তত চারজন আহত হন।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে জাহাজমারা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপির বর্তমান সদস্য মিরাজ উদ্দিন ও বাশার মেম্বারের ছবি দিয়ে ফেসবুকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান হেদায়েত উল্লাহ নামের তাঁদের এক অনুসারী। ওই পোস্টে ইউপির সাবেক সদস্য জসিমের ছোট ছেলে সৈকত ‘তেলবাজ’ বলে মন্তব্য করেন। ওই মন্তব্যের জেরে সৈকতকে ‘হাত কেটে ফেলার’ হুমকি দেন হেদায়েত। একপর্যায়ে সৈকত তাঁকে ডেকে নিয়ে মারধর করেন। এরপর বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা হয়ে যায়। পরে পুনরায় হেদায়েতের ওপর সেন্টার বাজারের একটি দোকানে হামলা চালান জসিমের ছেলে ও ভাতিজারা। ওই সময় দোকানটিতে ভাঙচুর করা হয়।

খবর পেয়ে সন্ধ্যার দিকে বিষয়টি সমাধান করতে ঘটনাস্থলে যান জসিম মেম্বার। সেখানে জাহাজমারা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিলাদ মাহমুদ ও মিরাজ মেম্বারের নেতৃত্বে জসিম মেম্বারকে মারধর করা হয়। কিছুক্ষণ পর জসিম মেম্বার তাঁর অনুসারীদের একত্র করে মিরাজ মেম্বারের ওপর পাল্টা হামলা চালান। পাল্টাপাল্টি ওই হামলার জের ধরে আজ শুক্রবার দুপুরের দিকে মিরাজ মেম্বারের অনুসারী আবুল বাশার ও যুবলীগের নেতা মিলাদের নেতৃত্বে ইউপির সাবেক সদস্য জসিমের বাড়িতে হামলা চালানো হয়।

জসিমের ভাতিজি ফারহানা বৃষ্টি অভিযোগ করেন, আবুল বাশার ও যুবলীগ নেতা মিলাদের নেতৃত্বে দুই শতাধিক সন্ত্রাসী তাঁদের বাড়িতে হামলা চালায়। হামলাকারীরা তিনটি বসতঘরে ব্যাপক ভাঙচুর করে ঘরের কাগজপত্রে অগ্নিসংযোগ করে ও দুটি মোটরসাইকেল, টাকা, স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়। হামলাকারীরা তাঁর চাচা জসিমকে সেন্টার বাজারে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার হুমকি দিচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে জাহাজমারা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিলাদ মাহমুদ ও ইউপির সদস্য মিরাজ উদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁরা ফোন ধরেননি।

জাহাজমারা ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক  সদস্য আবুল বাশার অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, জসিম মেম্বারের বাড়িতে হামলার অভিযোগ সাজানো। ফেসবুক মন্তব্যের সূত্র ধরে এই ঘটনা ঘটেছে। মিরাজ মেম্বার গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দুই দিন আগে জসিম ও মিরাজের লোকজনের সঙ্গে মারামারির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় মিরাজ আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আগের ঘটনার জের ধরে আজ জসিমের বাড়িতে হামলা হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। খবর পেয়ে থানা-পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে।