ডাব খাওয়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, আহত ৬

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর উত্তর চাঁদপুর গ্রামে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। এ সময় পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে
ছবি: প্রথম আলো

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় ছয়জন আহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার রাত থেকে আজ রোববার সকাল পর্যন্ত কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের উত্তর চাঁদপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অভিযান চালিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য উভয় পক্ষের চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। কিছু দেশীয় অস্ত্র ঢাল, সরকি, কাঠের বাটাম, বল্লম জব্দ করা হয়েছে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন উত্তর চাঁদপুর গ্রামের হাসেন লস্কর (৬০), জিকু লস্কর (৩৫), মনোহর শেখ (৫৫), মিলন শেখ (২৫), মতিয়ার রহমান খান (৩৭) ও নয়ন খাঁ (৩৬)। তাঁদের মধ্যে হাসেন লস্করকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর মাথায় পাঁচটি সেলাই দেওয়া হয়েছে। বাকিদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড (উত্তর চাঁদপুর) আওয়ামী লীগের সভাপতি তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সবুজ আলী ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি আকাশ রেজার বিরোধ চলছে। আগামী ৯ এপ্রিল উত্তর চাঁদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ নির্বাচন-২০২৩ হওয়ার কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে উভয় পক্ষের ১৩ জন সমর্থক নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন।

নির্বাচন ঘিরে এলাকায় দুই পক্ষের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এরই মধ্যে গতকাল দুপুরে ওই এলাকার মোল্লাপাড়ার নির্মাণাধীন সড়কের একটি নারকেলগাছের ডাব খাওয়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি ও কিলঘুষির ঘটনা ঘটে। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা তৌহিদুল ইসলামের সমর্থক নয়ন খাঁ, ওমর আলীসহ কয়েকজন হামলার শিকার হন। একই দিন সন্ধ্যায় উত্তর চাঁদপুর বাজারে যুবলীগের নেতা সবুজ ও ছাত্রলীগ নেতা আকাশ রেজার কার্যালয়ে হামলা চালান প্রতিপক্ষরা। এ সময় তাঁদের সমর্থক হাসেন লস্কর ও তাঁর ছেলে জিকু লস্কর এবং মনোহার শেখ হামলার শিকার হন।

এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে রোববার সকালে উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, মহড়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুই পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। অভিযান চালিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য উভয় পক্ষের চারজনকে আটক করা হয়।

আওয়ামী লীগ নেতা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, মোল্লাপাড়ার সড়কের ডাব খাওয়াকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁর সমর্থকদের মারধর করেন। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেলের ঘটনা ঘটেছে। তাঁর অফিস ভেঙেছেন প্রতিপক্ষরা। তাঁর কিছু সমর্থক আহত হয়েছেন। এই আওয়ামী লীগ নেতার ভাষ্য, প্রতিপক্ষ স্কুল ভোটের নির্বাচন বন্ধ করতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা আকাশ রেজা বলেন, ভোট বন্ধ করতে প্রতিপক্ষরা তুচ্ছ ঘটনায় তাঁদের আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর করেছেন। তাঁদের কয়েকজন সমর্থক আহত হয়েছেন। তিনি শনিবার রাতেই থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।

যদুবয়রা ইউপির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, তৌহিদুল ইসলাম বিএনপি থেকে নব্য আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার চালিয়ে আসছেন। স্কুল ভোটের পরিবেশ নষ্ট করতে সেখানে তুচ্ছ ঘটনায় হামলার ঘটনা ঘটেছে।

উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শামীম সরদার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য উভয় পক্ষের চারজনকে আটক করা হয়েছে। অভিযান চালিয়ে কিছু দেশীয় অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহসীন হোসাইন বলেন, একপক্ষের লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।