জহিরুলের মৃত্যুতে যেন অথই সাগরে পড়লেন স্ত্রী ও তিন সন্তান

কর্ণফুলীতে জাহাজডুবিতে মারা যাওয়া প্রকৌশলী জহিরুলের সন্তানেরা একরকম নির্বাক হয়ে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কর্ণফুলী উপজেলার পুরোনো ব্রিজ ঘাট এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

স্ত্রী ফেরদৌস বেগম ও তিন সন্তান নিয়ে সুখের সংসার ছিল প্রকৌশলী মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামের (৪২)। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ থেকে স্ত্রী-সন্তানকে এনে কর্ণফুলী উপজেলার পুরোনো ব্রিজঘাট এলাকার আনোয়ার সিটি ভবনের একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। বেতন যা পেতেন, তা দিয়ে ভালোই চলছিল সংসার। কিন্তু গত মঙ্গলবার রাতে কর্ণফুলী নদীতে জাহাজডুবির ঘটনায় তছনছ হয়ে গেল সবকিছু।

জহিরুলের মৃত্যুতে যেন অথই সাগরে পড়লেন তাঁর স্ত্রী ফেরদৌস বেগম। তিন অবুঝ সন্তানকে নিয়ে কী করবেন, তা ভেবে অনেকটা বাক্‌রুদ্ধ হয়ে পড়েছেন তিনি। সারাক্ষণ কাঁদছেন আর ফেরদৌস বেগম বলছেন, ‘আমার কিছুই রইল না, আমার সব শেষ। তিন অবুঝ সন্তানকে নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াব জানি না।’

আরও পড়ুন

মঙ্গলবার রাত একটার সময় র‍্যাংকন ওশেনা কোম্পানির এফবি মাগফেরাত নামের একটি মাছ ধরার জাহাজ সি রিসোর্স নামের ডকইয়ার্ডে মেরামতের জন্য উঠানোর সময় পাখা খুলে যায়। এ সময় জাহাজটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের বয়া ও অন্যান্য জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে গেলে প্রকৌশলী জহিরুল ইসলামসহ ছয়জনের মৃত্যু হয়। এখনো নিখোঁজ দুজন।

জহিরুল ইসলাম চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের রহমতপুর এলাকার ফখরুল ইসলামের ছেলে। তিনি ২০১০ সালের দিকে বিয়ে করেন ফেরদৌস বেগমকে। তাঁদের ঘরে তিন সন্তান। বড় মেয়ে মুনতাহা (১০) পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে। ছেলে মুনতাসীরের বয়স পাঁচ, ছোট মেয়ে মুনফির বয়স কেবল এক বছর। সবাই মিলে কর্ণফুলী উপজেলায় বসবাস করতেন। বাসা থেকে নৌঘাটের দূরত্ব ১০ মিনিটের। জাহাজ ঘাটে থাকলে বাসায় আসা–যাওয়া করে দায়িত্ব পালন করতেন। অন্যান্য সময় জাহাজ নিয়ে সাগরে থাকতেন।

আরও পড়ুন

নৌ পুলিশ জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ছয়জনের লাশ আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে চমেক হাসপাতাল থেকে স্বজনদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়। গতকাল রাতেই সন্দ্বীপের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয় জহিরুলের মরদেহ। আজ শুক্রবার সকালে ঘাট পার করে রহমতপুরে নিয়ে দাফন করা হবে।

গতকাল সন্ধ্যা সাতটার সময় কর্ণফুলী উপজেলার জহিরুলের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বাবাকে হারিয়ে অনেকটা নির্বাক হয়ে আছে জহিরুলের তিন সন্তান। বড় বোন মুনতাহা ছোট ভাই-বোনকে কোলে নিয়ে বসে আছে। তাঁদের মুখে কোনো কথা নেই। পাশে বাক্‌রুদ্ধ হয়ে বসে আছেন মা ফেরদৌস বেগম।

আরও পড়ুন

জহিরুলের বন্ধু মো. মিরাজ বলেন, আগে প্যারাডাইস কোম্পানিতে কাজ করতেন জহিরুল। দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজটিতে মাত্র তিন মাস আগে চাকরি নেন তিনি। সংসারে অভাব থাকলেও সব সময় হাসিমুখে কথা বলতেন।

ফেরদৌস বেগমের বড় ভাই মো. হানিফ বলেন, ‘আমার বোনের তিন মাস বয়সে আমরা বাবাকে হারিয়ে ফেলি। এখন তাঁর স্বামীটাও অকালে মারা গেল। ছোট ছোট তিনটা ছেলেমেয়ে নিয়ে আমার বোনটি কীভাবে চলবে, তা কোনোমতেই বুঝতে পারছি না।’