আংগারিয়া-বুড়িরহাট খাল
খননের চার বছরেই ভরাট
পানির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে আংগারিয়া-বুড়িরহাট খাল চার বছর আগে খনন করা হয়েছিল। ময়লা ফেলে খালটি ভরাট করা হয়েছে।
শরীয়তপুরের আংগারিয়া-বুড়িরহাট খাল খননের চার বছরের মধ্যেই ভরাট হয়ে গেছে। আংগারিয়া বাজারের ময়লা–আবর্জনা ফেলায় এবং ঠিকাদার সঠিকভাবে খননকাজ না করায় খালটি ভরা হয়ে গেছে। এতে পানির প্রবাহ না থাকায় দুটি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় দুই হাজার একর জমিতে বোরো আবাদে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
পাউবোর শরীয়তপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান প্রথম আলোকে বলেন, খালটি খনন করার সময় স্থানীয় কিছু সমস্যার কারণে নদীর সংযোগস্থলের মাটি পুরো সরানো যায়নি। আর বাজারের ব্যবসায়ীরা ময়লা-আবর্জনা ফেলে কিছু অংশ ভরাট করেছেন। তাঁরা আমাদের কোনো বাধা মানছেন না। এখন জেলা প্রশাসন ও পৌরসভা যদি ময়লা ফেলা বন্ধ করে দেয়, তা হলে পুনরায় খনন করে খালের পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) শরীয়তপুর কার্যালয় ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলার মধ্য দিয়ে কীর্তিনাশা নদী বয়ে গেছে। কীর্তিনাশা নদীর তীরে আংগারিয়া বাজার। ওই বাজারের পাশ দিয়ে প্রাকৃতিকভাবে একটি খাল ডামুড্যা খালের বুড়িরহাট এলাকায় গিয়ে মিলিত হয়েছে। খালটির দুই প্রান্তে আংগারিয়া ইউনিয়ন, রুদ্রকর ইউনিয়ন ও শরীয়তপুর পৌরসভার কিছু এলাকা রয়েছে। ওই এলাকাগুলোর কৃষকেরা খালটির প্রবাহিত পানি সেচকাজে ব্যবহার করেন।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, পানি সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে পাউবো খালটি খননের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। খাল খননের জন্য ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খাল খননের কাজটি পায়। ওই সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আংগারিয়ার কীর্তিনাশা নদী থেকে বুড়িরহাট পর্যন্ত ৭ দশমিক ৭ কিলোমিটার খনন করে। খনন করার সময় ঠিকাদার খালের সঙ্গে কীর্তিনাশা নদীর সংযোগস্থলের মাটি সরিয়ে নেয়নি। ফলে ওই খালে নদীর পানি প্রবেশ করতে পারে না। এতে খালের পানির প্রবাহ বন্ধ থাকার আংগারিয়া ও মনোহর বাজারের ব্যবসায়ী এবং আশপাশের বাসিন্দারা খালের মধ্যে ময়লা-আর্বজনা ফেলছেন। এতে খালের অন্তত ৫০০ মিটার ভরাট হয়ে গেছে।
বোরো মৌসুমে স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ী সেচপাম্প দিয়ে নদী থেকে পানি তুলে খাল দিয়ে আংগারিয়া ইউনিয়ন, রুদ্রকর ইউনিয়ন ও শরীয়তপুর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের জমিতে সেচ দিতেন। কিন্তু খালটির বিভিন্ন স্থানে ভরাট হয়ে যাওয়ায় রুদ্রকর, আংগারিয়া ও পৌরসভার ১০টি এলাকার অন্তত দুই হাজার একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ শুরু করতে পারেনি কৃষক।
রুদ্রকর ইউনিয়নের সোনামুখী আদর্শ ইরি খামারে ৪৫০ একর জমিতে প্রতি মৌসুমে ৮৫০ থেকে ৯০০ মেট্রিক টন বোরো হয়। এই
ধান বিক্রির টাকা দিয়ে ওই এলাকার ৩৫০টি কৃষক পরিবারের সংসার চলে। প্রতিবার ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকেই বোরো আবাদের জন্য
জমি প্রস্তুত শুরু করেন তাঁরা। কিন্তু খালে পানি না থাকায় ও বিকল্পভাবে পানি না পাওয়ায় ওই ইরি খামারের কৃষকেরা এখন ধানের আবাদ শুরু করতে পারেননি।
আংগারিয়া বাজারের দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আংগারিয়া বাজারের কয়েক শ দোকানের ময়লা–আবর্জনা ফেলার জায়গা নেই। তাই অনেক ব্যবসায়ী তাই বাধ্য হয়ে তা খালে ফেলছেন। আমরা ব্যবসায়ীদের খালে আবর্জনা ফেলতে নিষেধ করি। কিন্তু উপায় না থাকায় তাঁরা আমাদের কথাও শোনেন না।’