শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে না পাঠিয়ে ১২ বছরের শিশুকে ছয় দিন রাখা হলো কারাগারে
পটুয়াখালীতে ১২ বছরের শিশুকে ছয় দিন কারাগারে রাখা হয়েছে। আজ বুধবার আদালত থেকে জামিন মঞ্জুর হওয়ার দিন ওই শিশুকে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। এর আগে ২৯ মে একটি মামলায় শিশুটির পক্ষে করা জামিনের আবেদন নাকচ করে তাকে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো আদেশ দেন পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিলুফার শিরিন। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ শিশুটিকে এত দিন পাঠায়নি।
পটুয়াখালী কারাগারের জেলার লাবলু মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ এসকর্ট নিয়ে জটিলতা থাকায় যথাসময়ে শিশুটিকে যশোর শিশু উন্নয়নে কেন্দ্রে পাঠানো সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া আরও দুজন শিশু ছিল। আজ তাদেরকে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। এখানে দায়িত্ব অবহেলা হয়নি। আজ (বুধবার) সন্ধ্যা সাতটার দিকে তাঁকে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।’
শিশুটির পক্ষে মামলা পরিচালনা করা আইনজীবী হুমায়ন কবির বাদশা বলেন, ২০২৩ সালের একটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুমকি থানা–পুলিশের এসআই মো. মনিরুল ইসলাম ওই বছরের ২০ অক্টোবরে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ওই অভিযোগপত্রে এজাহারভুক্ত আসামি শিশুটিকে অভিযুক্ত করা হয়। মামলাটিতে শিশুটি জামিনে থাকলেও সম্প্রতি চার্জ গঠনের দিন অনুপস্থিত ছিল। এ কারণে আদালত আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরপর ২৮ মে সন্ধ্যায় দুমকি থানার পুলিশ শিশুটিকে গ্রেপ্তার করে এবং পরদিন পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এ সময় শিশুটির পক্ষে জামিনের আবেদন করা হলে আদালত তা নাকচ করে তাকে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
আজ আবার আদালতে জামিনের আবেদন করা হলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। জামিন আদেশের পর আইনজীবী ও আত্মীয়স্বজনেরা জানতে পারেন শিশুটিকে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে না পাঠিয়ে এখনো পটুয়াখালী কারাগারেই রাখা হয়েছে। আজ তাকে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
শিশুটি নিজে মুঠোফোনে বিষয়টি জানিয়েছে বলে তার মামা নাসির উদ্দিন দাবি করেছেন। তিনি বলেন, আজ তাঁর ভাগনেকে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বেলা একটার দিকে ভাগনে নিজেই কল করে যশোর নিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে। অথচ ২৯ মে তাকে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। গত ছয় দিন তাকে পটুয়াখালী কারাগারে রাখা হয়।
পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের পেশকার মো. রাজ্জাক মিয়ার সঙ্গে কথা হলে জানান, ২৯ মে আদালত শিশুটিকে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো আদেশ দিয়েছিলেন। আজ তাকে জামিন দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে কী হয়েছে তা জানা নেই।
বিষয়টি নজরে আনা হলে পটুয়াখালী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মজিবুর রহমান (টোটন) জানান, আদালত যেহেতু ১২ বছরের এক আসামিকে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন, তাই তাকে কোনোভাবেই কারাগারে থাকা অন্য কয়েদির সঙ্গে রাখার সুযোগ নেই। কারাগার কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব অবহেলার পরিচয় দিয়েছে।