ফাইনালের আগে সিলেটে চলছে আর্জেন্টিনার সমর্থকদের গল্প-তর্ক-আড্ডা
আর একটি ম্যাচে জয় পেলেই বিশ্বকাপ আর্জেন্টিনার—এ উত্তেজনায় ঘুম আসছে না দলটির সমর্থকদের। ফাইনালে মেসি কেমন খেলবেন, আলভারেজ গোল দিতে পারবেন কি না—সেটি নিয়েই মহল্লায় মহল্লায় চলছে গল্প-তর্ক-আড্ডা। আর রয়েছে চাপা উদ্বেগ, এবারও কি পড়তে হবে ২০১৪ সালের ফাইনালের মতো হতাশায়। অনেকের দাবি, এবার আগেরবারের পুনরাবৃত্তি হবে না, বহুকাঙ্ক্ষিত শিরোপা নিজেদের করে নেবে আর্জেন্টিনা। মেসির হাতে শোভা পাবে বিশ্বকাপের ট্রফি। আড্ডা-খুনসুটিতে কেউ কেউ ফ্রান্সের সমর্থনেও কথা বলছেন।
আজ শনিবার বিকেল চারটার দিকে সিলেট নগরের তারাপুর চা-বাগানের পাশে একটি চায়ের দোকানে কথা হয় অভিজিৎ দত্তের সঙ্গে। সিলেটের রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের ছাত্র অভিজিৎ আর্জেন্টিনার পাঁড় সমর্থক। ‘বিলু মুদির চায়ের দোকান’ নামে পরিচিত দোকানে অভিজিতের সঙ্গে তাঁর আরও কয়েক সহপাঠী ছিলেন। তাঁরা বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন এবং আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স ফাইনাল খেলা নিয়ে আলোচনা করছিলেন।
অভিজিতের সহপাঠী আশরাফ উদ্দিন ব্রাজিলের সমর্থক। অভিজিৎকে বলেন, ‘বন্ধু শোন, মেসি এবার কাপটা নিক—এটা আমিও চাই। তবে আর্জেন্টিনার খেলা তো খালি মুখে দেখা যায় না। খাওয়ার আয়োজন কী করেছিস, সেটা আগে জানা।’
আশরাফের কথা শেষ হতে না হতেই আর্জেন্টিনার পোড়খাওয়া সমর্থক অলক দত্ত বন্ধু আশরাফের পিঠ চাপড়ে বলেন, ‘আরে চিন্তা করিস না, বারবিকিউ খাবি। কাপ এবার আর্জেন্টিনাই নেবে। আমরা সবাই মিলে উদ্যাপন করব, আর তোদের বারবিকিউ খাওয়াব।’
কাল রোববার রাত নয়টায় খেলা। আজ দিনভর সিলেট নগরে আর্জেন্টিনার জার্সি পরা অনেক সমর্থক চোখে পড়েছে। এ ছাড়া নগরের অনেক বাসাবাড়িতে নতুন করে আর্জেন্টিনার পতাকা টানাতে দেখা গেছে সমর্থকদের। আর্জেন্টিনার পতাকা ও জার্সি বিক্রির পরিমাণও গত কয়েক দিনে বেড়ে গিয়েছে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন।
রহমত আলীর কাছ থেকে শিশুদের জন্য দুটি জার্সি কিনছিলেন নগরের শিবগঞ্জ এলাকার আলতাব আহমদ (৪২)। তিনি বলেন, তাঁর দুই সন্তান আর্জেন্টিনার ভক্ত। আগে সন্তানেরা বললেও জার্সি কিনে দেননি। এখন যেহেতু দল ফাইনাল খেলবে, তাই সন্তানদের আবদার ফেলতে পারলেন না। দুজনের জন্য দুটি জার্সি কিনছেন।
নগরের বন্দরবাজার মোড়ে পতাকা ও জার্সির পসরা নিয়ে বসেছেন রহমত আলী (৭০)। তিনি বলেন, এ বছর বেশি বিক্রি হয়েছে আর্জেন্টিনার জার্সি ও পতাকা। আগে কিনে নিলেও ফাইনাল খেলা উপলক্ষে অনেকে নতুন করে আর্জেন্টিনার পতাকা ও জার্সি কিনে নিচ্ছেন। মেসির জার্সি বেশি বিক্রি হচ্ছে। আজ দুপুর পর্যন্ত ৪০টা জার্সি বিক্রি করেছেন তিনি।
তারাপুর চা-বাগানের ভেতরের ছোট মাঠে ফুটবল খেলছিল বাগানের শিশুরা। তাদের কয়েকজনের পরনে মেসির ছবিসংবলিত আর্জেন্টিনার জার্সি দেখা যায়। খেলা পরিচালনা করছিলেন বাগানের চা-শ্রমিক তরুণ শিবু মুদি। তিনি বলেন, বাগানের বেশির ভাগ মানুষই মেসি ও আর্জেন্টিনার ভক্ত। তাঁরা বাগানের পাশের পার্কভিউ মাঠে বড় পর্দায় খেলা দেখেন। পাড়ার বাসিন্দারা খেলা দেখার আয়োজন করেন। খেলা দেখতে দেখতে মুড়ি-চানাচুর মেখেও খান। এ সময় খেলা থামিয়ে কয়েক শিশু এগিয়ে এসে ‘মেসি, মেসি’ বলে স্লোগান দিতে থাকে।
সিলেট নগরের হাওয়াপাড়া এলাকায় লিটন মিয়ার চায়ের দোকানে চা খাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী সুজন মিয়া (২৮)। পরে তাঁর আর্জেন্টিনার জার্সি। এ সময় পাশে থাকা আরও দুই যুবকের সঙ্গে বিশ্বকাপ খেলা নিয়ে তিনি আলোচনা করছিলেন। আর্জেন্টিনার এই ভক্ত বলেন, ‘প্রথমে সৌদি আরবের সঙ্গে আর্জেন্টিনার খেলা দেখে হতাশ হয়েছিলাম। কিন্তু আশা হারাইনি। যে দলে মেসির মতো খেলোয়াড় আছে, তাদের নিয়ে আশা করাই যায়। পরের ম্যাচ থেকে আর্জেন্টিনা তাদের খেলার ছন্দে ফিরে এসেছে। এ বছর দল ও মেসি ভালো খেলছে। খুব করে তাই চাই, বিশ্বকাপটা এ বছর আর্জেন্টিনার হোক।’
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী জুয়েল সরকার ও পলিটিক্যাল স্টাডিজের শিক্ষার্থী নাঈম আহমদ আর্জেন্টিনার সমর্থক। জুয়েল বলেন, ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে ও হ্যান্ডবল গ্রাউন্ডে বড় পর্দায় আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্সের ফাইনাল খেলা দেখানো হবে। এ বছর আর্জেন্টিনা দল ছন্দে আছে। ভালো খেলে ফাইনালে উঠেছে। তাঁর আশা, ফ্রান্সকে টপকে আর্জেন্টিনাই কাপ নেবে।
নাঈম আহমদ বলেন, ‘ক্যাম্পাসে সব দলের সমর্থকেরা একত্রে খেলা দেখি। অনেক আনন্দ হয়। খেলা উপলক্ষে খাবারদাবারের আয়োজনও করা হয়। মেসির হাতে বিশ্বকাপ উঠুক—এটাই প্রত্যাশা। তারপরও খেলায় হারজিত আছে। সবকিছুর পরও আর্জেন্টিনা ও মেসি যেন ফাইনালে জয়ী হন—সমর্থক হিসেবে এটাই চাইছি।’
সিলেট নগরের সুবিদবাজার এলাকার ব্যবসায়ী আলী আহমদ আর্জেন্টিনার খেলা দেখতে ১০ থেকে ১২ জন বন্ধুকে বাসায় দাওয়াত দিয়েছেন। সবাই একত্রে খেলা দেখবেন। এ জন্য তিনি মোরগ-পোলাও রান্নার ব্যবস্থা করে রেখেছেন। সবাই খেলা দেখার পাশাপাশি আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে উঠবেন।