যুবক নিখোঁজের ১০ মাস পর মাদক কারবারির বাড়ির মাটি খুঁড়ে হাড়–খুলি উদ্ধার

নিখোঁজ যুবকের মাটিচাপা দেওয়া মরদেহ উদ্ধারের খবরে স্থানীয় বাসিন্দাদের ভিড়। আজ মঙ্গলবার বিকেলে সাভারের আনন্দপুর সিটি লেনে।ছবি: প্রথম আলো

ঢাকার সাভারে এক মাদক ব্যবসায়ীর বাড়ির মাটি খুঁড়ে বেশ কয়েকটি হাড় ও মাথার খুলি পাওয়া গেছে। পুলিশ বলছে, এই হাড় ও খুলি সাভারের ইমান্দিপুর এলাকা থেকে ১০ মাস ২৪ দিন আগে নিখোঁজ যুবক তোফাজ্জল হোসেন ওরফে টুনোর (২৮) বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। মাদক ব্যবসা নিয়ে বিরোধের জের ধরে এই খুনের ঘটনা ঘটে।

অন্য একটি হত্যা মামলার তদন্তের সূত্র ধরে আজ মঙ্গলবার বিকেলে সাভারের আনন্দপুর সিটি লেনের স্বপন নামের এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে এসব হাড়গোড় উদ্ধার করে ঢাকা জেলা (উত্তর) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পুলিশ। তোফাজ্জল হোসেন সাভারের ইমান্দিপুর এলাকার ছেলামত মিয়ার ছেলে। গত বছরের ১৮ জুলাই বাসা থেকে বের হয়ে আর বাসায় ফেরেনি তিনি। তোফাজ্জল নিখোঁজের পর সাভার মডেল থানায় জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করেছিল তাঁর পরিবার। স্বপন মাদক ব্যবসায়ী বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ডিবির কর্মকর্তারা জানান, ২ জুন সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের খনিজনগর এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে নিখোঁজ হন সীমা আক্তার নামের এক নারী। পরে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) মোবাশশিরা হাবীব খানের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে গত বৃহস্পতিবার ওই ঘটনায় সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। সাইফুলের দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে খনিজনগর এলাকার মাটাচাপা দেওয়া সীমা আক্তারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সাইফুলের জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করেই এসব হাড়-খুলি উদ্ধার হয়।

হাড়-খুলি উদ্ধারের পর আজ সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঘটনাস্থলে যান ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আসাদুজ্জামান। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সীমা অপহরণ ও হত্যা মামলার সূত্র ধরে ডিবি ও সাভার মডেল থানার পুলিশ সাইফুলকে গ্রেপ্তার করে। সাইফুল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে কীভাবে সীমাকে হত্যা করা হয়েছে, সেই বর্ণনা দেন। এ ছাড়া এক মাদক ব্যবসায়ীসহ ৫ জনের জড়িত থাকার কথা জানান। ওই ঘটনার তদন্ত চলাকালে তোফাজ্জল হত্যার বিষয়টি জানা যায়। এরপর মঙ্গলবার সকালে ধামরাই উপজেলার কুল্লা থেকে ডিবি আগ্নেয়াস্ত্রসহ স্বপনকে গ্রেপ্তার করে।

পুলিশ সুপার বলেন, সাইফুলকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় সাভারের আনন্দপুর সিটি লেনে মাদক কারবারি স্বপনের বাসায় তোফাজ্জলের মরদেহ মাটিচাপা দেওয়া হয়ে থাকতে পারে বলে মনে হওয়ায় সোমবার ওই বাসার মাটি খোঁড়া হয়। এরপর স্বপনকে গ্রেপ্তারের পর তিনি তোফাজ্জলকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন। পরে তাঁর দেখানো ঘরের নির্দিষ্ট জায়গায় খুঁড়ে মরদেহের কয়েক টুকরা হাড় ও মাথার খুলি পাওয়া যায়।

মরদেহটি নিখোঁজ তোফাজ্জল হোসেনের কীভাবে নিশ্চিত হওয়া গেল, এমন প্রশ্নের জবাবে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, মরদেহের পাশে একটি শার্ট পাওয়া গেছে। সেটি দেখে তোফাজ্জলের স্ত্রী নিশ্চিত করেন এটি তাঁর স্বামীর শার্ট। এ ছাড়া নিখোঁজের আগের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে তাঁর পরনের শার্ট এবং সেখানে পাওয়া শার্টটি একই হওয়ায় প্রাথমিকভাবে অঙ্গগুলো তোফাজ্জলের বলে মনে হচ্ছে। ডিএনএ পরীক্ষার পর বিষয়টি আরও নিশ্চিতভাবে বলা যাবে। মাদক কারবার নিয়ে বিরোধের জের ধরে তোফাজ্জলকে অপহরণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে মরদেহ মাটিচাপা দেওয়া হয় বলে গ্রেপ্তার আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।

তোফাজ্জল হোসেনের চাচা ওসমান গণি বলেন, ‘আমরা স্বপনের ফাঁসি চাই। সে বাবা (ইয়াবা) ট্যাবলেট বেচে। সে সন্ত্রাসী। তোফাজ্জল ইমান্দিপুরে তারে (স্বপনকে) ইয়াবা বেচতে নিষেধ করেছিল। এই নিয়া মাঝেমধ্যে দুজনের দ্বন্দ্ব হইত। আগে থেকেই স্বপনরে সন্দেহ করতাম। সে লোকজন ভাড়া নিয়া এলাকায় ইয়াবা বেচাইত।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহত তোফাজ্জল হোসেনের স্ত্রী রানি বেগম বলেন, ‘স্বপন আমার স্বামীকে মাইরা ফেলছে। আমার স্বামীকে যেভাবে মারা হইছে, ওরে যেন (স্বপনকে) সেইভাবে মারা হয়।’