বর্ষাকালজুড়ে পীরগঞ্জের দুটি বিদ্যালয়ের মাঠে জমে থাকে পানি

বাঁশগাড়া উচ্চবিদ্যালয় ও বাঁশগাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে রয়েছে।

বিদ্যালয়ের মাঠে পানি জমে আছে। খেলাধুলা বন্ধের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা চলাচলেও ভোগান্তি পোহায়। গত রোববার ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় বুড়াধাম বাজার এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় বুড়াধাম বাজারের কাছে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। একটির নাম বাঁশগাড়া উচ্চবিদ্যালয়। অপরটি বাঁশগাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ দুটি বিদ্যালয় পাশাপাশি অবস্থিত এবং তাদের খেলার মাঠ একটি। অল্প বৃষ্টিতেই ওই মাঠে পানি জমে যায়। পানিনিষ্কাশন না হওয়ায় পুরো বর্ষাকালে মাঠে পানি থাকে। এতে বন্ধ থাকে খেলাধুলা।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়গুলোর উত্তর-পূর্ব দিকে দুটি কালভার্ট রয়েছে। বুড়াধাম বাজারে ১৫ থেকে ২০টি দোকান গড়ে উঠেছে। এতে কালভার্ট দিয়ে পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া কালভার্টের কাছে কচুরিপানা থাকায় পানিনিষ্কাশন হয় না। ৮ থেকে ১০ বছর আগে বিদ্যালয় দুটির আশপাশের বেশির ভাগ জায়গা প্রায় ফাঁকা ছিল। তখন বৃষ্টির পানি সহজেই নেমে যেত। এখন সেখানে ফসলের চাষ হয়। ফলে সহজে পানিনিষ্কাশন হয় না।

আসা-যাওয়ার সময় পোশাক কাদাপানিতে ভিজে নোংরা হয়। কেউ কেউ পিছলে পড়ে বই, খাতা ভিজিয়ে ফেলে।
দর্শন রায়, বাঁশগাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী

বাঁশগাড়া উচ্চবিদ্যালয় ও বাঁশগাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৫০০। খেলার মাঠের আয়তন প্রায় আড়াই একর। আট বছর ধরে বিদ্যালয়ের মাঠে পানি জমে থাকে। জলাবদ্ধতা নিরসনে গত কয়েক বছর মাটি ভরাট করা হয়েছে। তারপরও আশপাশের জমির তুলনায় বিদ্যালয়ের মাঠ নিচু রয়ে গেছে। প্রতিবছর জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাঠে পানি জমে থাকে। কাদাপানির জন্য শিক্ষার্থীরা মাঠে খেলাধুলা ও শরীরচর্চা করতে পারে না।

গত রোববার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মাঠে বৃষ্টির পানি জমে আছে। শিক্ষকেরা জানান, আগের রাতের বৃষ্টি মাঠ থেকে এখনো সরেনি। পানিনিষ্কাশনের যেসব পথ ছিল, সেখানে দোকানপাট ও অন্য স্থাপনা গড়ে উঠেছে। বৃষ্টি হলেই মাঠে পানি জমে যায়।

বাঁশগাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী দর্শন রায় বলে, বিদ্যালয়ের মাঠে বৃষ্টির পানি জমে থাকে। আসা-যাওয়ার সময় পোশাক কাদাপানিতে ভিজে নোংরা হয়। কেউ কেউ পিছলে পড়ে বই, খাতা ভিজিয়ে ফেলে। পুরো বর্ষাকালে মাঠে খেলাধুলা বন্ধ থাকে।

মাঠের পানিতে অনেক শিক্ষার্থী পড়ে ভিজেও যায়। অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সূচনা রাণী বলে, ‘আমি একদিন বিদ্যালয়ে আসার সময় হাঁটুপানিতে পা পিছলে পড়ে যাই। আমার স্কুলের পোশাক ও বই সব ভিজে যায়। ওই দিন বাড়ি ফিরে গেছি। ক্লাস করতে পারিনি।’

বাঁশগাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী শ্রুতি রাণী বলে, ‘মাঠে পানি জমে থাকে। আমরা খেলতে পারি না। বিদ্যালয়ের বারান্দাতেই বন্দী হয়ে থাকতে হয়।’

বিদ্যালয়ের মাঠের এ সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের লোকজনের কাছে জানিয়েছেন বলে জানান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুটি প্রধানেরা। তবে কোনো প্রতিকার মেলেনি।

বাঁশগাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাদল চন্দ্র রায় বলেন, চার মাস আগে তিনি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি বিদ্যালয়ের মাঠে জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানের সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার নজির মুঠোফোনে বলেন, চলতি অর্থবছরে উপজেলার যেসব বিদ্যালয়ে সমস্যা রয়েছে, সেগুলো সমাধান করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।