শরীয়তপুরে আগুনে পুড়ে মারা গেল দুই ভাইবোন

বাবা মনসুর ঢালীর সঙ্গে দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া দুই ভাই–বোন ডানে ও সামনে
ছবি: সংগৃহীত

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলায় বসতবাড়িতে লাগা আগুনে পুড়ে দুই ভাইবোনের মৃত্যু হয়েছে। আরেক বোনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে উপজেলার সখিপুর থানার আশ্রাফ আলী ব্যাপারীকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

অগ্নিকাণ্ডের সময় মীম আক্তার (১৩), সাদিয়া (১১) ও আরাফাত (৭) নামের ওই তিন ভাইবোন ঘুমিয়ে ছিল। স্বজনেরা তাদের উদ্ধার করে ঢাকায় নিয়ে যায়। তাদের মধ্যে ঢাকায় নেওয়ার পথে আজ ভোরে সামিয়া ও আরাফাতের মৃত্যু হয়। আর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন আছে মীম।

দগ্ধ হয়ে হতাহত ওই তিন শিশু সখিপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের আশ্রাফ আলী ব্যাপারীকান্দি গ্রামের মনসুর ঢালীর সন্তান। তিনি পেশায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের চালক। তাঁর স্ত্রী রেহানা বেগম বাড়িতে দরজির কাজ করেন।

এলাকাবাসী, ফায়ার সার্ভিস ও সখিপুর থানা-পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল রাতের খাবার খেয়ে ঘরের একটি কক্ষে ঘুমিয়ে পড়ে ওই তিন শিশু। দরজির কাজ শেষ করে বাড়ির অন্য আরেকটি কক্ষে নামাজ পড়ছিলেন মা রেহানা। বাবা মনসুর ঢালীও তারাবিহর নামাজ পড়তে গ্রামের একটি মসজিদে গিয়েছিলেন। রাত ১১টার দিকে বসতবাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সঙ্গে সঙ্গে টিনের তৈরি ওই বসতঘরের সব কক্ষে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে একটি ঘরে আগুনে আটকা পড়ে তিন ভাইবোন। পরে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। আজ মঙ্গলবার ভোরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে সাদিয়া ও আরাফাতের মৃত্যু হয়। মীম একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।

ভেদরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ জি এম আমির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে আগুন জ্বলতে দেখেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট আগুন নিভিয়ে তিন শিশুকে উদ্ধার করে। চিকিৎসার জন্য তাদের উপজেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগতে পারে।

শিশুদের বাবা মনসুর ঢালী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। সংসার চালাতে কষ্ট হয়। তাই ওদের মা ঘরে দরজির কাজ করত। ঈদের কারণে ঘরে অনেক কাপড় রাখা ছিল। সেই কাপড়ের মধ্যে কীভাবে আগুন লেগেছে, আমরা বলতে পারব না। সেই আগুন ঘরে ছড়িয়ে যায়। তাতেই আমার দুই মানিকের প্রাণ গেছে। আমি এখন কী নিয়ে বাঁচব?’

অগ্নিকাণ্ডে দুই সন্তানকে হারিয়ে মায়ের আহাজারি। মঙ্গলবার ভেদরগঞ্জ উপজেলার আশ্রাফ আলী ব্যাপারীকান্দি গ্রামে
ছবি: সংগৃহীত

সখিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান হাওলাদার বলেন, সখিপুরে বসতঘরে আগুন লেগে দুই ভাইবোনের মৃত্যুর ঘটনা শুনেছেন। ঘটনাটি অত্যন্ত কষ্টদায়ক ও মর্মান্তিক। কীভাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, তা তদন্ত করে দেখা হবে।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, অগ্নিকাণ্ডে দুই শিশুর মৃত্যুর খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছে। দাফন-কাফনের জন্য ৮৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আজ রাতে দুই শিশুকে ওই গ্রামে দাফন করা হবে বলে তিনি জানান।