আশুলিয়ায় কারখানা ভাঙচুরের ঘটনায় ৩ মামলা, আসামি দেড় হাজার

বেতন বাড়ানোর দাবিতে ঢাকার আশুলিয়ায় পোশাকশ্রমিকদের আন্দোলনের সময় পুলিশের সতর্ক অবস্থান। গত মঙ্গলবার সকালে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

বেতন বাড়ানোর দাবিতে সাভারের আশুলিয়ায় গত এক সপ্তাহের বিভিন্ন সময়ে শ্রমিক বিক্ষোভের সময় ভাঙচুর হওয়া তিনটি কারখানার কর্তৃপক্ষ আশুলিয়া থানায় পৃথকভাবে তিনটি মামলা করেছে। এসব মামলায় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

আজ রোববার বিকেলে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও ট্রাফিক, উত্তর বিভাগ) মো. আবদুল্লাহিল কাফী। তিনি জানান, এর আগে শুক্রবার ভুক্তভোগী কারখানা কর্তৃপক্ষ পৃথকভাবে মামলাগুলো করেন।

ভাঙচুর হওয়া কারখানা তিনটি হলো আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকার ছেইন অ্যাপারেলস লিমিটেড, বেরন সরকার মার্কেট এলাকার হামীম গ্রুপের নেক্সট কালেকশন্স লিমিটেড এবং ধনাইদ ইউসুফ মার্কেট এলাকার ডিসাং সোয়েটার লিমিটেড।

ছেইন অ্যাপারেলস লিমিটেডের মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ৩১ অক্টোবর বেলা ১১টায় উৎপাদন চলাকালে অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০ জন শ্রমিক ও বহিরাগত প্রধান ফটকে এসে কারখানা বন্ধের দাবিতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। আন্দোলনকারীরা প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকলে কারখার অন্যান্য কর্মকর্তা ও নিরাপত্তারক্ষীরা আন্দোলনকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে মারধর করে। এ ছাড়া কারখানা ভবনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভাঙচুর করে। উৎপাদনকাজ বন্ধ করে শ্রমিকদের বাহির করে না দিলে কারখানা পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে আসামিরা ঘটনাস্থলে থেকে পালিয়ে যায়। ভাঙচুরে কারখানার অনুমানিক ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

নেক্সট কালেকশন্স লিমিটেডের দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ৩০ অক্টোবর সকাল সাড়ে আটটার দিকে বহিরাগত প্রায় ৫০০-৬০০ মানুষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কারখানার সামনে এসে ইট ও পাথর নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে তারা প্রধান ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে কারখানার নিচতলা থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত বিভিন্ন সেকশনে ভাঙচুর চালায়। এতে প্রায় ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। এ ছাড়া কারখানায় থাকা বিভিন্ন কোম্পানির ল্যাপটপ, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, সিসি ক্যামেরা, ওয়াকিটকি, ফিংগার পাঞ্চ মেশিন, প্রজেক্টর, ১৪ হাজার ৮০০ তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এসবের আনুমানিক মূল্য ৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া কারখানার নির্বাহী পরিচালক এস এম শাহাবুদ্দিন, উৎপাদন ব্যবস্থাপক (পিএম) রনি মোল্লাসহ বেশ কয়েজন কর্মকর্তাকে মারধর করে মারাত্মকভাবে আহত করা হয়।

ডিসাং সোয়েটার লিমিটেড কারখানার দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন–ভাতা বৃদ্ধি না হওয়া পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখার দাবিতে গত ৩১ অক্টোবর সকাল সোয়া নয়টার দিকে অজ্ঞাতনামা ৩০০ থেকে ৪০০ শ্রমিক ও বহিরাগত লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল করে প্রধান ফটকের সামনে আসে। তারা কারখানার উৎপাদনকাজ বন্ধের দাবিতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। একপর্যায়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ সব শ্রমিকের ছুটি ঘোষণা করে। শ্রমিকেরা বের হয়ে গেলে তাঁদের অনেককেই মারধর করা হয়। এ ছাড়া ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে কারখানা ভবনের কাচ ভাঙচুর করা হয়। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত হলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। ভাঙচুরের কারণে ফ্যাক্টরিতে প্রায় চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

মামলাগুলোর বিষয়ে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও ট্রাফিক, উত্তর বিভাগ) মো. আবদুল্লাহিল কাফী বলেন, বেতন বাড়ানোর দাবিতে আজ কোথাও কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি। শ্রমিকেরা কারখানাগুলোতে কাজ করেছেন। সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের অধিকাংশ উপার্জন এই পোশাকশিল্প থেকে। তাই এ শিল্পের কর্মপরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে মালিক-শ্রমিকসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।