কুমারখালীতে চুরির অভিযোগে তরুণকে মারধর ও চুল কাটার ভিডিও ফেসবুকে

কুষ্টিয়া জেলার মানচিত্র

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় কলা চুরির অভিযোগে ভ্যানচালক তরুণকে মারধর ও চুল কাটার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। মো. নাঈম শেখ (২৪) নামের ওই তরুণ বর্তমানে কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

ভুক্তভোগী নাঈম শেখ উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হোগলা গ্রামের মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি পেশায় একজন ভ্যানচালক। তবে এ ঘটনায় এখনো থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দেননি।

আজ শুক্রবার সকালে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শয্যার বসে ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে মো. নাঈম শেখ বলেন, ‘আমি বিপদে পড়ে খোকন মেম্বরের কাছে আশ্রয় চেয়েছিলাম। কিন্তু মেম্বর আমার দায়িত্ব নেয়নি। পরে জমিওয়ালা এসে আমাকে অনেক মারধর করে। আরেকজন মাথার চুল কাইটে দেয়। আরেকজন ভিডিও করে। ওরা আমার পায়ে বাড়ি দিছে, হাতে বাড়ি দিছে।’

১৭ এপ্রিল রাতে কলা চুরির অভিযোগে নাঈম শেখকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়েছে। পরে তাঁর মাথার চুল কেটে দিয়ে ভিডিও ধারণ করেন স্থানীয় কিছু লোকজন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সেই মারধর ও চুল কাটার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৭ এপ্রিল রাত ১০টার দিকে জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হোগলা বাজার থেকে এক অজ্ঞাত ব্যক্তি গোপকগ্রামে যাওয়ার কথা বলে নাঈমের ভ্যানটি ভাড়া নেন। পরে ওই ভ্যানে অজ্ঞাত ব্যক্তির সঙ্গে আরও দুজন যুক্ত হন। যাওয়ার পথে জোর করে ভ্যানটি থামিয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা কলাভর্তি একটি সাদা বস্তা ভ্যানে তোলেন। সে সময় স্থানীয় লোকজন ‘চোর চোর’ বলে চিৎকার দিলে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা ভ্যান থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যান। তবে ভ্যানচালক নাঈমকে আটক করে লাঠি দিয়ে মারধর করে তাঁর চুল কেটে দেওয়া হয়। আর এই কর্মকাণ্ড মুঠোফোনে ভিডিও করা হয়। সে সময় জগন্নাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর সদস্য (মেম্বর) মো. খোকন উপস্থিত ছিলেন। ভিডিওটি ১৮ এপ্রিল রাতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ৩৫ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, কিছু উৎসুক লোকজন বসে ও দাঁড়িয়ে আছেন। নাঈম বাঁচার জন্য আকুতি-মিনতি করছেন। একজন কাঠের লাঠি দিয়ে তাঁকে মারধর করছেন। আর ভিডিওর শেষের দিকে কাঁচি দিয়ে একজনকে তাঁর চুল কাটতে দেখা যায়।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ভ্যানচালক নাঈম শেখ বলেন, বেশি ভাড়া মিটিয়ে একজন লোককে নিয়ে তিনি গোপকগ্রামে যাচ্ছিলেন। পথে ওই লোক আরও দুজনকে তাঁর ভ্যানে তোলেন। পরে তাঁরা জোর করে নাঈমকে মাঠের কোনায় থামিয়ে একটি সাদা বস্তা ভ্যানে তোলেন। একটু পরে স্থানীয় লোকজন ‘চোর চোর’ বলে চিৎকার শুরু করলে তাঁরা তিনজন ভ্যান থেকে লাফ দিয়ে পালিয়ে যান। আর ক্ষুব্ধ স্থানীয় লোকজন এসে তাঁকে মারধর করে চুল কেটে দেন।

এ ঘটনার পর থেকেই জমির মালিক রওশনসহ অন্যরা গা ঢাকা দিয়েছেন। সে জন্য তাঁদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে ইউপি সদস্য মো. খোকন বলেন, চুরির খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। গিয়ে তিনি সবাইকে মারধর করতে নিয়েধ করেছিলেন। তবে কেউ তাঁর কথা শোনেননি।

এ বিষয়ে জানতে জগন্নাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল বাকী বাদশাকে ফোন করা হয়। কিন্তু ফোন বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাবীব চৌহান বলেন, ফেসবুকে তিনি ভিডিওটি দেখেছেন। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। ঘটনা যা–ই হোক, তাঁকে (নাঈম) পুলিশের কাছে সোপর্দ করা উচিত ছিল। তিনি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

এ ঘটনায় এখনো লিখিত অভিযোগ পাননি বলে জানিয়েছেন জগন্নাথপুর থানার উপপরিদর্শক ও জগন্নাথপুর ইউপির বিট পুলিশের কর্মকর্তা দিবাকর হালদার। তিনি বলেন, কলা চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে  ভ্যানচালককে মারধর ও চুল কেটে দিয়েছেন স্থানীয় লেকজন। বিষয়টি তিনি জানেন। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।