২ বছরের কাজ ৬ বছরেও হয়নি

চুক্তি অনুযায়ী সময়মতো কাজ শেষ করতে না পারলে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে।

নেত্রকোনায় নির্মাণাধীন আধুনিক সদর হাসপাতাল ভবন। গত বুধবার তোলা।
ছবি: প্রথম আলো

ছয় বছর আগে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দুই বছরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই সময় পার হয়ে প্রকল্পের মেয়াদ আরও তিনবার বাড়ানো হয়। তবু কাজ শেষ হয়নি।

চুক্তি অনুযায়ী সময়মতো কাজ শেষ করতে না পারলে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু কাজ বাস্তবায়নকারী বিভাগ তা করেনি।

স্থানীয় বাসিন্দা, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২ হাজার ৮১০ দশমিক ২৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের জেলা নেত্রকোনার ১০টি উপজেলায় প্রায় ২৪ লাখ মানুষের বসবাস। এ জেলায় কিছুটা উন্নত চিকিৎসাসেবার একমাত্র ভরসা নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল। ওই হাসপাতাল ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার লক্ষ্যে ১২ তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রতিটি তলা ১৯ হাজার স্কয়ার ফুট। গণপূর্ত অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে প্রথম ছয়তলা ভবন নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ওই বছরের মার্চে ভাওয়াল কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কাজের মেয়াদকাল ধরা হয় দুই বছর। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৩১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢিমেতালে কাজ করার কারণে দুই বছরের কাজ ছয় বছরেও শেষ করতে পারেনি। প্রথমে এক বছরের জন্য ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। পরে আবারও এক বছরের জন্য মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। তৃতীয় দফায় চলতি বছরের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। কিন্তু ওই সময় চলে গেলেও এখনো কাজ চলামান। আবার চতুর্থবারের মতো সময় বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কবে নাগাদ কাজ শেষ করে হস্তান্তর করবে, তা–ও সঠিক বলতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, কাজের দেখভালের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষ সঠিকভাবে তদারকি না করায় ঠিকাদারের চরম গাফিলতির কারণে এমনটি হচ্ছে। অবশ্য বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান গণপূর্তের দাবি, কাজ শুরু হওয়ার পর করোনার কারণে কিছুটা ধীরগতি ছিল। তবে গতি ত্বরান্বিত করে কাজটি হস্তান্তর করতে অন্তত ৩০ বার লিখিতভাবে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ছয়তলা ভবনের কাজ শেষ হয়েছে। এখন দরজা, জানালা, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, রঙের কাজসহ আনুষঙ্গিক কিছু কাজ বাকি আছে। বিদেশ থেকে লিফট এনেও রাখা আছে।  এ ছাড়া ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে সপ্তম ও অষ্টম তলার নির্মাণকাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয় নাঈমা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে। চলতি বছরের জুন থেকে আগামী জুন পর্যন্ত এক বছরে এ দুই তলা নির্মাণ করার কথা।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, প্রতিদিন ওই হাসপাতালে বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগ মিলে গড়ে দুই হাজার মানুষ সেবা নিতে আসেন। এতে রোগীদের স্থান সংকুলান করা যাচ্ছে না।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবু সাঈদ মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও এখনো জনবলসহ সুযোগ–সুবিধা বাড়ানো হয়নি। চিকিৎসকের মঞ্জুরি করা ৪৪টি পদের মধ্যে ২৫ জন কর্মরত। চক্ষু, চর্ম, দন্তসহ কয়েকটি বিভাগে চিকিৎসক নেই।

সুজন জেলা কমিটির সভাপতি শ্যামলেন্দু পাল বলেন, ভবন নির্মাণে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চরম গাফিলতি দেখিয়েছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকলে এমনটি হতো না।

ঠিকাদার ফকরুদ্দিন বাচ্চু বলেন, সময় বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। নেত্রকোনা গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসিনুর রহমান বলেন, ‘ঠিকাদার কাজটি নিয়ে খুবই ভোগাচ্ছেন। দ্রুত হস্তান্তর করতে ৩০ বার লিখিতভাবে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে হস্তান্তর না করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া আর উপায় নেই।’