যা লেখা আছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ছাত্র হৃদয় তরুয়ার ফলাফল বিবরণীতে
সদ্য পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। শিক্ষার্থীরাও উৎসাহ নিয়ে একে একে খুঁজে বেড়াচ্ছেন নিজেদের ফলাফল বিবরণী (গ্রেডশিট)। পাতা ওল্টাতেই চোখ আটকাল একটি নামে, গ্রেডশিটের নিচে এক কোণে ইংরেজিতে লেখা, ‘হি স্যাক্রিফাইস হিজ লাইভস ইন অ্যান্টি–ডিসক্রিমিনেশন স্টুডেন্ট মুভমেন্ট’ (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সে তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছে)।
ঘটনাটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের। গতকাল বুধবার ওই বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। শহীদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়া ওই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তবে পরীক্ষা দেওয়ার আগেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রাণ হারান তিনি। বেঁচে থাকলে হৃদয়ও পরীক্ষা দিতেন। ফল প্রকাশের দিনটিতে আগ্রহভরে নিজের গ্রেডশিট দেখতেন। পরীক্ষায় না বসলেও তাঁর স্মরণে বিশেষ গ্রেডশিট তৈরি করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আর এর মধ্য দিয়ে সম্মান জানানো হয়েছে জুলাই আন্দোলনের এই শহীদকে।
পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার দরিদ্র পরিবারের ছেলে হৃদয়। বাবা রতন চন্দ্র তরুয়া পেশায় কাঠমিস্ত্রি। গত বছরের ১৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন হৃদয়। পরে ২৩ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কাছে হার মানেন।
ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষাটি শুরু হয়েছিল গত বছরের ৫ নভেম্বর, হৃদয়ের মৃত্যুর সাড়ে তিন মাস পর। আটটি কোর্সের ওই বর্ষের পরীক্ষা শেষ হয় ২২ ডিসেম্বর। পরীক্ষা দেননি বলে গ্রেডশিটে সব পরীক্ষায় তাঁর নম্বর এসেছে শূন্য।
গতকাল রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হৃদয়ের পরীক্ষার ওই ফলাফলের গ্রেডশিট ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই হৃদয়ের এই ত্যাগ নিয়ে বিভিন্ন আবেগঘন পোস্ট দিচ্ছেন।
সহপাঠী মো. তাহমিদ হাসান হৃদয়ের সঙ্গে একই হলে থাকতেন। তিনি গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, মূল পরীক্ষার আগে অ্যাসাইনমেন্ট, টিউটরিয়াল—সবগুলো পরীক্ষায় তরুয়া অংশ নিয়েছিলেন। বছরের প্রথম থেকে তরুয়া নিজেই নিজের পরীক্ষার নোট তৈরি করতেন, তাঁরা হৃদয়ের থেকেই নোট নিয়ে পড়তেন।
তাহমিদ হাসান বলেন, ‘আমরা চাইছিলাম যেন তরুয়ার জন্য সম্মানসূচক গ্রেডশিট তৈরি করা হয়। এ জন্য সহপাঠীরা মিলে বিভাগকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। বিভাগ এই কথা রেখেছে। আমরা এ বছর চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা দেব। তরুয়াকে যেন গ্র্যাজুয়েট হিসেবে ঘোষণা করা হয়, এইটা আমাদের চাওয়া।’
জানতে চাইলে ইতিহাস বিভাগের সভাপতি শামীমা হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, ‘হৃদয় নিয়মিত ক্লাস করতেন। অ্যাসাইনমেন্ট, টিউটরিয়াল পরীক্ষাও নিয়মিত দিয়েছেন। পরীক্ষা অংশ নিতে ফরমও পূরণ করেছিলেন। কিন্তু হৃদয় আজ আমাদের মাঝে নেই। তাঁর সম্মানে বিশেষ গ্রেডশিট বের করা হয়েছে। জীবন উৎসর্গ করা এই শিক্ষার্থীর অবদান তাঁরা কখনোই ভুলবেন না।’