মানিকগঞ্জে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে হাসপাতালের কর্মচারীকে মারধরের অভিযোগ

মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত মো. শাজাহান মোল্লা
ছবি: প্রথম আলো

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের এক কর্মচারীকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আহত কর্মচারীকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতাল চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।

হাসপাতালের আহত ওই কর্মচারীর নাম মো. শাজাহান মোল্লা (৩৭)। তিনি হাসপাতালে এলএমএসএস পদে কর্মরত। তিনি ঘিওর উপজেলার দ্বিমুখা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোকছেদ আলীর ছেলে।  

হাসপাতালের একাধিক সূত্র ও ভুক্তভোগী শাজাহানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে শাজাহানের এলাকার অসুস্থ এক বৃদ্ধা চিকিৎসকের পরামর্শের জন্য হাসপাতালে যান। বেলা একটার দিকে সরাসরি হাসপাতালে ফার্মেসির কক্ষের সামনে গিয়ে অসুস্থ ওই বৃদ্ধার জন্য ওষুধ নেন শাজাহান। এ সময় সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা ছাত্রলীগের এক কর্মী শাজাহানকে বকাঝকা করেন।

শাজাহান এর প্রতিবাদ করেন। পরে হাসপাতাল প্রাঙ্গণের কিছু দূর আসার পর অষ্টম তলা ভবনের সামনে গেলে পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীউর রহমানসহ ছাত্রলীগের ২০ থেকে ২৫ জন শাজাহানকে কিলঘুষি ও লাথি মারতে থাকেন। এ সময় তিনি মাটিতে পড়ে গেলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা লাথি মারতে থাকেন। হাসপাতালের অন্য কর্মচারীরা এগিয়ে এসে তাঁকে উদ্ধার করেন। পরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। এর পর অসুস্থ শাজাহানকে ওই হাসপাতালেই ভর্তি করা হয়।

রাত সাড়ে আটটার দিকে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, নতুন ভবনের অষ্টম তলার একটি কক্ষে শাজাহান ভর্তি রয়েছেন। তাঁকে সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ সময় ক্ষোভের সঙ্গে শাজাহান বলেন, ‘আমার বাবা ও কাকা মুক্তিযোদ্ধা। আমি ছাত্রলীগের কর্মী ছিলাম। মুক্তিযোদ্ধার কোটায় আমার চাকরি হয়েছে। ছাত্রলীগের হাতেই আমি মার খাইলাম, আহত হয়ে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছি। লজ্জায় পরিবারকে বলতে পারি নাই। এ ঘটনা শুনলে আমার অসুস্থ বাবা আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রয়েছে। তারা কী ব্যবস্থা নেয়, এর ওপর ভরসা করেই আমি আইনগত পদক্ষেপ নিব।’

তবে মারধরের ঘটনার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতা শামীউর বলেন, ‘হাসপাতালের এক কর্মচারী (শাজাহান) এক রোগীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এতে তাঁর সঙ্গে ছোট পোলাপানের একটু ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছিল। পরে তা মীমাংসা হয়ে গেছে।’

এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সিফাত কোরাইশি বলেন, লাইনে না দাঁড়িয়ে ওষুধ নিতে গেলে ওই কর্মচারীকে লাইনে দাঁড়াতে বলা হয়। এ সময় এক রোগীর স্বজনের সঙ্গে ওই কর্মচারীর কথা–কাটাকাটি হয়। পরে হাসপাতালের সামনে দুজনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগের সঙ্গে এ ঘটনার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন বলেন, ফার্মেসি কক্ষের সামনে লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। পরে হাসপাতালের বাইরে কয়েকজন ছেলে শাজাহানকে সামান্য মারধর করেছেন বলে জানতে পেরেছেন তিনি। পেশাগত কাজের সময় নয়, ব্যক্তিগত কাজে ওই কর্মচারীর সঙ্গে এ ঘটনা ঘটেছে। কাজেই এ ঘটনায় ওই কর্মচারীকে আইনগত পদক্ষেপ নিতে হবে।