‘জগার মিষ্টি’ মুখে পুরলেই গলে যায়
শুধু পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা নয়, গোটা দেশে ‘জগার মিষ্টি’র সুনাম ছড়িয়েছে। কুয়াকাটা পর্যটন এলাকায় যাঁরা বেড়াতে আসেন, তাঁদের কাছে এ মিষ্টি খুবই পছন্দের। ঢাকা, বরিশাল, পটুয়াখালী জেলা শহরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ‘জগার মিষ্টি’ সরবরাহ করা হয়। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অতিথিরা এখানে এলে তাঁদেরও এই মিষ্টি নিয়ে আপ্যায়ণ করা হয়।
‘জগার মিষ্টি’ নামে এর সুনাম ছড়ালেও এর প্রাতিষ্ঠানিক নাম ‘জগবন্ধু মিষ্টান্ন ভান্ডার’। প্রতিষ্ঠানটির মূল মালিক ছিলেন জগবন্ধু হাওলাদার, তিনি ১৯৯১ সালে ৮০ বছর বয়সে মারা গেছেন। জগবন্ধুর নাম থেকেই মিষ্টির নাম হয়েছে ‘জগার মিষ্টি’। দোকানের অবস্থান কলাপাড়া পৌর শহরের নতুন বাজার এলাকায়।
জগবন্ধু হাওলাদারের মৃত্যুর পর দোকানের হাল ধরেছেন তাঁর দুই ছেলে নিখিল চন্দ্র হাওলাদার ও চঞ্চল হাওলাদার। নিখিল বলেন, ‘শুধু ব্যবসা হিসেবে আমরা যে মিষ্টির দোকানটি চালাচ্ছি, তা নয়। এলাকার মর্যাদা ও ঐতিহ্যকেও লালন করছি। এ অঞ্চলের ইতিহাসের সঙ্গে আমরা মিশে গেছি। আমরা জগার মিষ্টি দিয়ে কলাপাড়াকে ব্র্যান্ডিং করছি। জগার মিষ্টির কথা এলে কলাপাড়ার নামটিও চলে আসে।’
দোকানের বর্তমান মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় এই মিষ্টির দোকানের পথচলা শুরু হয়। তখন টিনের একটি চৌচালা ঘরে দোকানটি ছিল। আসবাবপত্র বলতে ছিল কয়েকটি টেবিল-চেয়ার। বড় বড় পাত্রে মিষ্টি সাজানো থাকত উঁচু একটি চৌকির ওপর। মানুষজন দোকানে এসে মিষ্টি খেতেন, বাড়িতে নিয়ে যেতেন। এভাবে ধীরে ধীরে দোকানের সুনাম ছড়িয়েছে। দোকানের অবকাঠামোতে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে।
জগার মিষ্টির অন্যতম হলো রসগোল্লা। এখানে দুই ধরনের রসগোল্লা পাওয়া যায়। গরুর দুধের ছানা দিয়ে তৈরি রসগোল্লা মুখে পুরলেই গলে যায়। রসগোল্লার পাশাপাশি রসমালাই, ছানা, সন্দেশ, বেবি সুইট, কালোজাম, শুকনা মিষ্টি, দধি ও নিমকি পাওয়া যায়।
জগবন্ধু মিষ্টান্ন ভান্ডারের কারখানা ও দোকানে ১২–১৩ জন কর্মচারী কাজ করেন। তবে মিষ্টির মূল কারিগর ৬৫ বছর বয়সী শ্রীবাস কীর্তনীয়া। তিনি গত ৩০ বছর এখানে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি ৩৫ বছর বয়সে এই দোকানে কাজ শুরু করি। অনেকেই ভালো বেতনে কাজ দিয়ে আমারে নিতে চেয়েছেন। আমি যাই নাই। এখানে মায়ায় জড়াইয়া আছি।’
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মনোয়ারা লতিফ বলেন, ‘জগার মিষ্টি গুণে–মানে অন্য অঞ্চলের চেয়ে অনেক ভালো। এর কারণ হলো, নির্ভেজাল ও দেশি গরুর দুধের প্রাপ্যতা। বিয়ের অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজনে জগার মিষ্টি ছাড়া আমরা চলতেই পারি না। এখন এই মিষ্টির সুনাম ছড়িয়েছে গোটা দেশে, আমাদের গর্বের জায়গায় স্থান করে নিয়েছে।’
শরীফ মোহাম্মদ নেয়ামুল হক নামের এক ক্রেতা বললেন, ‘এখানে মিষ্টি খেতে এলে ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে মিষ্টি খেতে আসার কথা মনে পড়ে যায়। যে মিষ্টিটা এখন ৩০ টাকাতে খাই, সে সময় ২ টাকা ছিল। সময় বদলেছে, মিষ্টির স্বাদ আগের মতোই আছে।’
দোকানের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত জগবন্ধু হাওলাদারের ছোট ছেলে চঞ্চল হাওলাদার বলেন, ‘আমরা ভালো পণ্য দিই। এটা আমার বাবার শিক্ষা। সততা-নিষ্ঠা না থাকলে দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হতো না।’