সবার সামনে টেবিলে সারি করে রাখা ছোট ছোট খেলনার গাড়ি। কম্পিউটারের কি–বোর্ডে চাপ দিলেই চলতে শুরু করে গাড়িগুলো। এরপর গাড়ির রং অনুযায়ী নির্ধারিত জায়গায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজেদের পার্ক করে রাখে গাড়িগুলো। যতক্ষণ ধরে গাড়িগুলো পার্ক করে রাখা হয়েছে, সে অনুযায়ী পার্কিং ফির পরিমাণও দেখানো হচ্ছে পর্দায়।
স্মার্ট পার্কিংয়ের এই চিত্র কোনো বাস্তব শহরের নয়, এটি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরে অনুষ্ঠিত এক ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিযোগিতার অংশ। আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকাট্রনিকস ও শিল্প প্রকৌশল বিভাগের আয়োজনে দুই দিনব্যাপী ‘এমআইই কার্নিভ্যাল’ নামের এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়। প্রতিযোগিতায় বাস্তব সমস্যা সমাধানের বিষয়টি মাথায় রেখে প্রকল্প সাজিয়েছেন অংশগ্রহণকারীরা।
আজ সকাল ৯টায় শুরু হওয়া এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সমন্বয়ে বাস্তবজীবনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে দেওয়া হয়। প্রতিটি দলকে সমাধানের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় পাঁচ ঘণ্টা সময়। দ্রুততম সময়ে, নিখুঁতভাবে ও কার্যকর সমাধান উপস্থাপনকারী দলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। স্মার্ট পার্কিং প্রযুক্তি উপস্থাপন করে প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয় ‘স্কোলার্স হাইপার থ্রেড’ নামের দল।
এ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি দল অংশগ্রহণ করে। প্রতি দলে ছিলেন তিন প্রতিযোগী।
বিজয়ী দল ‘স্কোলার্স হাইপার থ্রেড’–এর দলনেতা ও সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিহাল দাশ অঙ্কুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হতে পেরে আমরা অনেক আনন্দিত। এবারের প্রতিযোগিতাটি ছিল এক কথায় চমৎকার। আমাদের সামনে একটি বাস্তব সমস্যা তুলে ধরা হয়েছিল—পার্কিং সিস্টেমের উন্নয়ন। এ সমস্যার সমাধানে আমরা হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সমন্বয়ে মোট সাতটি ধাপে কাজ করি। পুরো সময়টা আমরা উপভোগ করেছি, শিখেছি অনেক কিছু।’
প্রতিযোগিতা শেষে বিকেল চারটায় অনুষ্ঠিত হয় ‘ইন্ডাস্ট্রি ফর গার্মেন্টস’ শীর্ষক একটি কর্মশালা। কর্মশালায় বক্তব্য দেন সাউদার্ন আইওটি লিমিটেডের প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম। সন্ধ্যায় সমাপনী অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি চুয়েটের উপাচার্য মাহমুদ আব্দুল মতিন ভূঁইয়া।
আগামীকাল শুক্রবার শেষ দিনে আয়োজন করা হয়েছে চাকরি মেলা। সেখানে চুয়েটের সদ্য স্নাতক পাস শিক্ষার্থীরা সরাসরি বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাছে সিভি জমা দিতে পারবেন এবং ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে নিয়োগের সুযোগ পাবেন।
মেকাট্রনিকস ও শিল্প প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রসেনজিৎ দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দ্বিতীয়বারের মতো এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করছি। প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীরা বাস্তব জীবনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কাজ করেছে। তাদের এসব সমাধানকে প্রায়োগিক রূপ দেওয়া গেলে সমাজ ও রাষ্ট্র উপকৃত হবে। এ ছাড়া আমরা একটি চাকরি মেলার আয়োজন করছি। সেখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য পাস করা শিক্ষার্থীরা ইন্টারভিউ দিতে পারবে। তাদের মধ্য থেকে প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মী বাছাই করতে পারবে।’
উল্লেখ্য, এ উৎসবের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রয়েছে সাউদার্ন আইওটি লিমিটেড। সহযোগী পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রয়েছে প্রথম আলো।