বাঁধ ভেঙে সড়কে ধস  

গনরাচিপা উপজেলার তেঁতুলতলা গ্রামের বাঁধের ১০০ মিটার নদীভাঙনের কবলে পড়েছে। ওই বাঁধের ওপর নির্মিত সড়কের একাংশ ধসে পড়ছে।

পটুয়াখালীর গলাচিপার তেঁতুলতলা গ্রামের রাবনাবাদ নদীর ভাঙন ঠেকাতে বালুর বস্তা ফেলা ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে
ছবি: প্রথম আলো

পটুয়াখালীর গলাচিপায় উপজেলার ডাকুয়া ইউনিয়নের তেঁতুলতলা গ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রাবনাবাদ নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে। এতে ওই বাঁধের ওপর নির্মিত সড়কটির কিছু অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বাঁধ ও সড়ক রক্ষায় পাউবো বালুর বস্তা (জিওব্যাগ) ফেলে নদী সংরক্ষণের কাজ শুরু করলেও নদীভাঙন বন্ধ হচ্ছে না।

স্থানীয় লোকজন বলেন, নদীভাঙন রোধে টেকসই ব্যবস্থা না নিলে বাঁধের ওই অংশ ভেঙে গলাচিপা উপজেলা শহরের সঙ্গে পাঁচটি ইউনিয়ন এবং সদর, দশমিনা ও বাউফল উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। এতে প্রতিদিন হাজারো মানুষ ভোগান্তির শিকার হবে। এ ছাড়া বাঁধের এই অংশ ভেঙে গেলে জোয়ারের পানিতে ডাকুয়ার আটখালী, ডাকুয়া ও হোগলবুনিয়া গ্রাম প্লাবিত হবে।

আঞ্চলিক সড়কটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে গলাচিপা উপজেলা সদরের সঙ্গে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ। পাশাপাশি বাঁধের ভাঙন অংশ দিয়ে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হবে ডাকুয়ার আটখালী, ডাকুয়া ও হোগলবুনিয়া এই তিন গ্রাম। 

পাউবো ও এলজিইডি, পটুয়াখালী কার্যালয় জানায়, ১৯৭৬-১৯৭৭ অর্থবছরে গলাচিপার রাবনাবাদ, কলাগাছিয়া ও লোহালিয়া নদীর তীরবর্তী ৪৬ কিলোমিটার ৫৫/১ পোল্ডারের এই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করে পাউবো। এলজিইডি ১৯৯৫-১৯৯৬ অর্থবছরে ওই বেড়িবাঁধের ওপর ২১ কিলোমিটারে পিচঢালাই সড়ক নির্মাণ করে। এই সড়কটি গলাচিপা শহরের সঙ্গে ডাকুয়া, কলাগাছিয়া, চিকনিকান্দি, গজালিয়া ও বকুলবাড়িয়া এই পাঁচটি ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ সহজ করে দেয়। এ ছাড়া এই সড়ক নির্মাণ করায় গলাচিপা উপজেলা সদর থেকে পটুয়াখালী জেলা সদর, দশমিনা ও বাউফল উপজেলায় যাতায়াত সহজ হয়। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি এখন ব্যস্ততম সড়কে পরিণত হয়েছে। 

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, গলাচিপার ডাকুলা ইউনিয়নের তেঁতুলতলা গ্রাম এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রাবনাবাদ নদীভাঙনে বিলীন হচ্ছে। ধসে পড়ছে আঞ্চলিক মহাসড়কের কিছু অংশ। পাউবো ভাঙন ঠেকাতে ওই অংশে বালুর বস্তা ফেলছে। কিন্তু জোয়ারের পানির প্রবল চাপে বালুর বস্তাসহ বাঁধ ও বাঁধের ওপর নির্মিত সড়কের অনেকটা জায়গা নদীতে চলে গেছে। যানবাহনগুলো ঝুঁকি নিয়ে সড়কের ওই অংশ দিয়ে চলাচল করছে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পটুয়াখালী কার্যালয়ের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মিরাজ গাজী প্রথম আলোকে জানান, জোয়ারের সময় রাবনাবাদ নদীর প্রবল স্রোতের আঘাতে তেঁতুলতলা এলাকার বাঁধের ১০০ মিটার অংশ ভাঙনের কবলে পড়েছে। তবে গত পূর্ণিমার জোয়ারে বাঁধের ১০ মিটার অংশ ধসে পড়ছে। এতে সড়কও ভেঙে পড়েছে। ওই এলাকায় নদীভাঙন রোধে বালুর বস্তা ফেলার কার্যক্রম চলছে। 

ডাকুয়া এলাকার কৃষক তাজুল ইসলাম জানান, বাঁধ ভাঙলে জোয়ারের পানি বাড়িঘরসহ ফসলি খেতে ঢুকে পড়বে। চাষাবাদ ক্ষতির মুখে পড়বে। লবণাক্ততার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে খেতের ফসল। 

ডাকুয়া ইউপির চেয়ারম্যান বিশ্বজিত রায় জানান, নদী ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে সাংবাদিক নেতা আলতাফ মাহমুদের কবরস্থান, এলাকার দুই শ বছরের পুরোনো জমিদার বাড়ি, মসজিদ, মন্দির, তেঁতুলতলা বাজারে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও বাড়িঘর। যান চলাচল বন্ধ হলে ভোগান্তিতে পড়বে উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের কমপক্ষে দেড় লাখ মানুষ।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) গলাচিপা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী নদীভাঙনকবলিত তেঁতুলতলা গ্রাম পরিদর্শন করেছেন। ভাঙন ঠেকাতে প্রথমে বাঁধ মেরামতসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। বাঁধের ওপর কার্পেটিং সড়ক নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। বাঁধের কাজ শেষ হলেই সড়ক নির্মাণ শুরু করা যাবে।  

পাউবো পটুয়াখালী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন জানান, ভাঙন রোধে প্রাথমিকভাবে ৫০ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে নদী সংরক্ষণের কাজ শুরু হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৭২ লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ভাঙন ঠেকাতে ১২ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। 

তবে বালুর বস্তা ফেলার পরও নদী সংরক্ষণ না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসলে পূর্ণিমার প্রভাবে জোয়ারের প্রবল চাপের কারণে ভাঙন বেড়েছে। ওই স্থানে আরও ৩৮ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তারপরও পাউবো ওই স্থানে স্থায়ীভাবে নদীভাঙন রোধে দেয়াল নির্মাণের জন্য প্রকল্প হাতে নিয়েছে।